728x90 AdSpace

  • Latest News

    মহাপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলতসমূহ

    ‘মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’-এ সংযুক্ত
    শব্দ মুবারক-এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
    ‘ঈদ’ অর্র্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ‘মীলাদ’ অর্র্থ জন্মের সময় বা দিন। النبى (আন নাবিইয়্যু) শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়।

    কাজেই আভিধানিক অর্থে عيد ميلاد النبى (ঈদু মীলাদিন নাবিইয়ি) বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাকেই বুঝায়। আর পারিভাষিক অর্থে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা, উনার ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-মান বর্ণনা করা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, উনার পূতপবিত্রতম জীবনী মুবারক-এর সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনাকেই বুঝায়।
    মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল
    আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে ঈদে মীলাদুন নবী
    ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেছেন
    মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতেই সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে একত্রিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ তথা আগমন শরীফ-এর মহান খুশির খোশখবরী জানিয়ে দেন এবং উনার প্রতি ঈমান আনয়ন ও সার্বিক খিদমত ফরয করে তার যথাযোগ্য ওয়াদা নেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
    واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جائكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال اأقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين. فمن تولى بعد ذلك فاولئك هم الفاسقون.
    অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি (আলমে আরওয়াহতে) সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য (নুবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়িয দেয়ার জন্য) আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনার উপর অবশ্যই অবশ্যই ঈমান আনবেন তথা উনাকে অবশ্যই অবশ্যই নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সার্বিক বিষয়ে উনার যথাযথ খিদমত করবেন (উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবেন)। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম (অর্থাৎ আমরা যমীনে গিয়ে আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করব)। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলোাম। তবে জেনে রাখুন যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে (যারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে না বা এর বিরোধিতা করবে) তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (কাফির) হয়ে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান- ৮১, ৮২)
    মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জিন-ইনসানসহ সমগ্র কায়িনাতবাসীকে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের আদেশ দিয়েছেন
    হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র কায়িনাতের সবচেয়ে বড় রহমত, ফযল-করম এবং সর্বোত্তম নিয়ামত বিধায় উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম ঈদ; যা পালন করা সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
    يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .
    অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহত স্বরূপ, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, মহান হিদায়েত ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।”
    “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য যথার্থভাবে ঈদ উদযাপন বা খুশি প্রকাশ করো। তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (সূরা ইউনুস- ৫৭, ৫৮)
    এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
    اِنَّا اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِه وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وّ َاَصِيلا.
    অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি যেন (হে মানুষ!) তোমরা আল্লাহ তায়ালার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম করো এবং উনার ছানা-ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা।” (সূরা ফাতহ : আয়াত ৮-৯)
    এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
    إِنَّ اللّٰهَ وَمَلائِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىِّ يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيْمًا ۝
    অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত তথা দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত তথা ছানা-ছিফত, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করো এবং সালাম প্রেরণ করো প্রেরণ করার মত।” অর্থাৎ যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের সাথে। (সূরা আহযাব : আয়াত ৫৬)
    উক্ত আয়াত শরীফগুলোর মাধ্যমে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সমস্ত জিন-ইনসানসহ সমগ্র কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত।
    নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
    স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ পালন করেন
    হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজের মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনার্থে খুশি প্রকাশ করে আরো ইরশাদ করেন-
    انى دعوت ابراهيم عليه السلام وبشارة عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضائت لها منه قصور الشام.
    অর্থ: “আমি হলাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমার আম্মাজান হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দেখা সুস্বপ্ন মুবারক ও অলৌকিক ঘটনার বাস্তব প্রতিফলন। আমার আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি আমার বিলাদত শরীফ-এর সময় দেখেছিলেন যে, এক খ- বরকতময় ‘নূর’ যমীনে তাশরীফ নিলেন এবং সে নূর মুবারক-এর আলোর প্রভাবে শাম দেশের দালান-কোঠাগুলোকে আলোকিত করলো তা তিনি সুস্পষ্টভাবে দেখতে পেলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত শরীফ)
    এছাড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও নিজের মীলাদ শরীফ তথা বিলাদত শরীফ সম্পর্কে খুশি প্রকাশ করে স্বীয় বংশ মর্যাদার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেন,
    عن العباس رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه و سلم فجعلنى فى خيرهم قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلنى فى خيرهم بيتا فانا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا.
    অর্থ: “….মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আমাকে কুল-মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র কুরাঈশ খান্দানে এবং কুরাঈশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘরে আমাকে প্রেরণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী, মিশকাত শরীফ)
    নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিলে উপস্থিত হয়ে খুশি
    প্রকাশ করে বেমেছাল ফযীলত ও নাজাতের সুসংবাদ প্রদান করেন
    এ মুবারক ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের সুমহান সুন্নত আদায় করার যে পদ্ধতি বা নিয়ম বর্তমানে জারি রয়েছে তা পরবর্তিতে কারো মনগড়া তৈরিকৃত কোনো নিয়ম-পদ্ধতি নয়। বরং এ নিয়ম স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই জারি ছিলো এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন। অতঃপর সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে এ নিয়ম পালিত হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
    عَنْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّه مَرَّ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَبْنَائِه وَعَشِيْرَتِه وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَجٰى نَجٰتَكَ.
    অর্থ: হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)।
    বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাবলী শ্রবণ করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মতো এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মতো নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী-৩৫৫ পৃষ্ঠা)
    এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
    عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ ، فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.
    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবীগণকে সমবেত করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী)
    যে মহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে, মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করলে কিংবা অন্য কোনো ছানা-ছিফত বর্ণনা করলে আমাদের শাফায়াত ও জান্নাত ওয়াজিব হয়! এটা আমাদের জন্য কতো বড় নিয়ামত! সুবহানাল্লাহ!! কাজেই আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব কর্তব্য হলো- টাকা-পয়সা, জান-মাল সবকিছুই দিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতি মুহূর্তে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে যথাযথভাবে খুশি প্রকাশ করে মহান নিয়ামত হাছিল করা।
    খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ঈদে মীলাদুন
    নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ
    করার বেমেছাল ফযীলত বর্ণনা করেছেন
    এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ-এর কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এ বর্ণিত রয়েছে,
    قَالَ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ فِىْ الْجَنَّةِ.
    অর্থ: (নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
    এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে,
    وَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْيَا الاِسْلامَ.
    অর্থ: হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা বিলাদত শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিলো অর্থাৎ এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলো, সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
    এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে,
    وَقَالَ عُثْمَانُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاََنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ.
    অর্থ: হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি হয়ে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
    এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে-
    وَقَالَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِِّقِرَائَتِهٖ لايَخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا بِالاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.
    অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো অর্থাৎ সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: মহাপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলতসমূহ Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top