নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের ইলম হাদিয়া করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী। যা উনার সীমাহীন ফযীলতের মধ্যে একটি ফযীলত।
‘খালিক মালিক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন আলিমুল গইব’ অর্থাৎ সর্বপ্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্থ বা বিষয়ের ইলম আল্লাহ পাক, উনার রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই সকল ইলমের বা ইলমে গইবের অধিকারী। আর এরূপ ইলমে গইব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইলমে গইব নেই।” (সূরা নমল-৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইলমে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক, উনারই রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা বণী ঈসরাইল’-এর ৮৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদেরকে সামান্যতম ইলম দান করেছি।” এ আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ইলমের স্বল্পতা মহান আল্লাহ পাক, উনার সাধারণ বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ পাক, উনার বিশেষ বিশেষ বা খাছ বান্দা তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা খাছ খাছ ওলী আল্লাহগণ উনারা এ হুকুমের বাইরে। অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ইত্যাদি যাই হোক না কেন তার জ্ঞান সামান্য থেকে সামান্যতম। পক্ষান্তরে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক, উনার গুণে হাক্বীক্বীভাবে গুণান্বিত তথা নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, বিশেষ করে সকল নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি মহান আল্লাহ পাক, উনার খাছ হাবীব বা বন্ধু হওয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনাকে সমস্ত প্রকার ইলম হাদিয়া করেছেন। আল্লাহ পাক, উনার কায়িনাতে এমন কোন বিষয় ছিল না যা তিনি জানতেন না বা জানেন না। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে সর্বপ্রকার ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আর রহমান’-এ ইরশাদ করেন, “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ’ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে, বলা হয়েছে যে, “ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলম আল্লাহ পাক উনাকে হাদিয়া করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গইবী বিষয়ের ইলম হাদিয়া করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, ছাবীতেও উল্লেখ আছে।”
হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’-এ উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার রবকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছি। আমার রব বলেন, (হে আমার হাবীব!) মুকাররব ফেরেশতাগণ কোন বিষয়ে আলোচনা করছেন? আমি বললাম, আপনিই অধিক জানেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের কুদরতি হাত মুবারক আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। আমি উনার ফয়েজের শীতলতা আমার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল বিষয় ও বস্থর ইলম আমার অর্জিত হয়ে গেল।”
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ’ ‘মিরকাত শরীফ’-এ লিখেন, “আল্লামা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সামাওয়াত” দ্বারা আসমানসমূহ এমনকি তারও উপরের সমস্ত সৃষ্টির ইলমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। আর ‘আল আরদ’ জিনস (জাতি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ঐ সমুদয় বস্থ যা সমস্ত যমীনের মধ্যে বরং তারও নিচে রয়েছে তার সব বিষয়েরই ইলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার অর্জিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার জন্যে মহান আল্লাহ পাক গইব-এর সকল দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।”
মূলত এই প্রকারের হাদীছ শরীফ আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা এর বিষয়টা বুঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন। যার কারণে তিনি সমস্ত ইলম ও নিয়ামতসহই সৃষ্টি হয়েছেন। কাজেই নতুন করে দেয়ার জন্য নয়। বরং যা দেয়া হয়েছে সে বিষয়টা সমস্ত কায়িনাতকে বুঝানোর জন্য অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সকল বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যাঁরা স্মরণ রাখতে পেরেছেন উনারা স্মরণ রেখেছেন আর যাঁরা স্মরণ রাখতে পারেননি উনারা ভুলে গেছেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’-এ আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সব কিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”
‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ’-রয়েছে, “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন “আমি সমস্ত ইলমসহ প্রেরিত হয়েছি।”
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নুবুওওয়াতে” উল্লেখ করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল বিষয় বা বস্থ সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন। তিনি আল্লাহ পাক, উনার শান ও আহকাম বা বিধি-বিধান, উনার ছিফাত বা গুণাবলী উনার আসমা বা নামসমূহ উনার আফয়াল বা কর্মসমূহের এবং আদি-অন্ত, যাহির-বাতিন ইত্যাদি সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন। যা উনার সীমাহীন ফযীলতের বহিঃপ্রকাশ।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। উনার ফাযায়িল-ফযীলত শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা করতে গিয়ে সমুদ্রের পানিকে কালিস্বরূপ এবং সমস্ত গাছ-পালাকে কলমরূপে ব্যবহার করে সমস্ত জিন-ইনসান কিয়ামত পর্যন্ত লিখতে থাকলেও সমস্ত কিছুই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তবুও উনার ফাযায়িল-ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্বের কিঞ্চিত বর্ণনাও লিখে শেষ করা যাবে না। এক কথায় তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন, এছাড়া সকল ছানা ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত-এর অধিকারী হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মূলত যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ছানা-সিফত করবে, শান-মান বর্ণনা করবে প্রকৃতপক্ষে সে নিজেই ফায়দা লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আমি আমার প্রশংসামূলক কবিতার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার শান-মান কিছুই বাড়াতে পারিনি। বরং উনার ছানা-সিফত বা প্রশংসা করার কারণে আমার কবিতা এবং আমি নিজেই সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়েছি।’ সুবহানাল্লাহ!
আমাদের সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো- আল্লাহ পাক, উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করত উনার প্রতি যথাযথ তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন এবং পরিপূর্ণ ছানা-সিফত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাদের উভয়ের খাছ রেযামন্দি (সন্তুষ্টি)হাছিল করা।
‘খালিক মালিক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন আলিমুল গইব’ অর্থাৎ সর্বপ্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্থ বা বিষয়ের ইলম আল্লাহ পাক, উনার রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই সকল ইলমের বা ইলমে গইবের অধিকারী। আর এরূপ ইলমে গইব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইলমে গইব নেই।” (সূরা নমল-৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইলমে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক, উনারই রয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা বণী ঈসরাইল’-এর ৮৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদেরকে সামান্যতম ইলম দান করেছি।” এ আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ইলমের স্বল্পতা মহান আল্লাহ পাক, উনার সাধারণ বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ পাক, উনার বিশেষ বিশেষ বা খাছ বান্দা তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা খাছ খাছ ওলী আল্লাহগণ উনারা এ হুকুমের বাইরে। অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ইত্যাদি যাই হোক না কেন তার জ্ঞান সামান্য থেকে সামান্যতম। পক্ষান্তরে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক, উনার গুণে হাক্বীক্বীভাবে গুণান্বিত তথা নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, বিশেষ করে সকল নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি মহান আল্লাহ পাক, উনার খাছ হাবীব বা বন্ধু হওয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনাকে সমস্ত প্রকার ইলম হাদিয়া করেছেন। আল্লাহ পাক, উনার কায়িনাতে এমন কোন বিষয় ছিল না যা তিনি জানতেন না বা জানেন না। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে সর্বপ্রকার ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আর রহমান’-এ ইরশাদ করেন, “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ’ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে, বলা হয়েছে যে, “ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলম আল্লাহ পাক উনাকে হাদিয়া করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গইবী বিষয়ের ইলম হাদিয়া করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, ছাবীতেও উল্লেখ আছে।”
হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’-এ উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার রবকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছি। আমার রব বলেন, (হে আমার হাবীব!) মুকাররব ফেরেশতাগণ কোন বিষয়ে আলোচনা করছেন? আমি বললাম, আপনিই অধিক জানেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের কুদরতি হাত মুবারক আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। আমি উনার ফয়েজের শীতলতা আমার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল বিষয় ও বস্থর ইলম আমার অর্জিত হয়ে গেল।”
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ’ ‘মিরকাত শরীফ’-এ লিখেন, “আল্লামা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সামাওয়াত” দ্বারা আসমানসমূহ এমনকি তারও উপরের সমস্ত সৃষ্টির ইলমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন মি’রাজ শরীফ-এর ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। আর ‘আল আরদ’ জিনস (জাতি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ঐ সমুদয় বস্থ যা সমস্ত যমীনের মধ্যে বরং তারও নিচে রয়েছে তার সব বিষয়েরই ইলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার অর্জিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার জন্যে মহান আল্লাহ পাক গইব-এর সকল দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।”
মূলত এই প্রকারের হাদীছ শরীফ আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা এর বিষয়টা বুঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন। যার কারণে তিনি সমস্ত ইলম ও নিয়ামতসহই সৃষ্টি হয়েছেন। কাজেই নতুন করে দেয়ার জন্য নয়। বরং যা দেয়া হয়েছে সে বিষয়টা সমস্ত কায়িনাতকে বুঝানোর জন্য অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সকল বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যাঁরা স্মরণ রাখতে পেরেছেন উনারা স্মরণ রেখেছেন আর যাঁরা স্মরণ রাখতে পারেননি উনারা ভুলে গেছেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’-এ আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সব কিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”
‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ’-রয়েছে, “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন “আমি সমস্ত ইলমসহ প্রেরিত হয়েছি।”
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নুবুওওয়াতে” উল্লেখ করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল বিষয় বা বস্থ সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন। তিনি আল্লাহ পাক, উনার শান ও আহকাম বা বিধি-বিধান, উনার ছিফাত বা গুণাবলী উনার আসমা বা নামসমূহ উনার আফয়াল বা কর্মসমূহের এবং আদি-অন্ত, যাহির-বাতিন ইত্যাদি সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন। যা উনার সীমাহীন ফযীলতের বহিঃপ্রকাশ।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। উনার ফাযায়িল-ফযীলত শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা করতে গিয়ে সমুদ্রের পানিকে কালিস্বরূপ এবং সমস্ত গাছ-পালাকে কলমরূপে ব্যবহার করে সমস্ত জিন-ইনসান কিয়ামত পর্যন্ত লিখতে থাকলেও সমস্ত কিছুই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তবুও উনার ফাযায়িল-ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্বের কিঞ্চিত বর্ণনাও লিখে শেষ করা যাবে না। এক কথায় তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন, এছাড়া সকল ছানা ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত-এর অধিকারী হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মূলত যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ছানা-সিফত করবে, শান-মান বর্ণনা করবে প্রকৃতপক্ষে সে নিজেই ফায়দা লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আমি আমার প্রশংসামূলক কবিতার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার শান-মান কিছুই বাড়াতে পারিনি। বরং উনার ছানা-সিফত বা প্রশংসা করার কারণে আমার কবিতা এবং আমি নিজেই সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়েছি।’ সুবহানাল্লাহ!
আমাদের সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো- আল্লাহ পাক, উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করত উনার প্রতি যথাযথ তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন এবং পরিপূর্ণ ছানা-সিফত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাদের উভয়ের খাছ রেযামন্দি (সন্তুষ্টি)হাছিল করা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন