728x90 AdSpace

  • Latest News

    হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না-উনাদের ফযীলত মুবারক

    আরবী ছাহাবা শব্দের এক বচন ছাহাবী যার অর্থ হচ্ছে সাথী বা সঙ্গী, ছাহেব শব্দের অর্থও সঙ্গী বহুবচন আছহাব। যাঁরা ঈমানের সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ঈমানের সাথে যমীন থেকে বিদায় নিয়েছেন, উনারাই ছাহাবী । সাধারণত: ছাহাবী বলতে পুরুষ ছাহাবী বুঝায়, আর মহিলা ছাহাবীকে আরবীতে ছাহাবিয়া বলা হয়। 

    পুরুষ ও মহিলা ছাহাবীর সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক ভাবে বলা যায় না । তবে কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় যে, দশম হিজরীতে অনুষ্ঠিত বিদায় হজ্জে এক লাখেরও বেশী ছাহাবীর সমাগম হয়েছিল । একটি মশহুর বর্ণনামতে বলা হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ ছিল। সীরতের কিতাব সমূহে প্রায় সাত হাজার  পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং প্রায় দেড় হাজার মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারাক পাওয়া যায় ।

    ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত
    পুরুষ ও মহিলা সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-উনাদের ফযীলতের বিষয়ে খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন :- رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُ   (অর্থ : উনাদের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক-উনার প্রতি সন্তুষ্ট)।
    (সূরা তওবা-১০০) 
    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক  করেন :-
    أصْحَابِىْ كَا لنُّجُوْمِ بِأيِّهِمْ إقْتَدَيْتُمْ إهْتَدَيْتُمْ –                                 
    অর্থ: আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই তারকা সদৃশ, উনাদের যে কোন একজনকে অনুসরণ করলেই হিদায়েত প্রাপ্ত হবে। ( মিশকাত শরীফ)  সুবহানাল্লাহ !

    পুরুষ হোক, মহিলা হোক সকলের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য । হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা সকলই বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী । কারণ উনাদের মর্যাদার উৎস হচ্ছে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র ছোহবত । জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উনাদের সততা, বিশ্বস্ততা, শরাফত, আত্মত্যাগ, সদাচার, আল্লাহভীতি, তাক্বওয়া, ইহসান, সহানুভূতি, বীরত্ব, সাহসিকতা ইত্যাদি সবই ছিল নজীরবিহীন । উনারা ছিলেন নিস্কলুস ও পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী । কথায়, কাজে, নছীহতে, উঠা-বসায়, চলা-ফেরায়, ব্যবহারে, এক কথায় যাবতীয় কাজে রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পূণ্যতম আদর্শ উনাদের জীবন মুবারকে প্রতিফলিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে । সুবহানাল্লাহ !

    তাই উনারা সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানব এবং রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদর্শের বাস্তব নমুনা । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উ¤মতের উনারাই প্রথম সূত্র । পরবর্তী উ¤মত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা, ভাষ্য, রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরিচয়, শিক্ষা, পবিত্র জীবনাদর্শ উনাদেরই মাধ্যমে লাভ করেছেন । সুবহানাল্লাহ !


    ফযীলতের দিক থেকে মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের মধ্যে সর্ব প্রথম আসেন উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম-উনাদের স্থান, কারণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা অন্যান্য সকল মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের তুলনায় অনেক উর্দ্ধে । উনারা একদিক দিয়ে ছাহাবিয়া, অন্য দিক দিয়ে  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সম্মানিত আহলিয়া, আবার  উনারা আহলে বায়ত শরীফ উনাদের অন্তর্ভূক্ত । আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে উম্মুহাতুল মু’মিনীন অর্থাৎ মু’মিনগণ উনাদের মাতা  বলে সম্মানিত করেছেন। এর পরে আসে আহলে বায়ত শরীফের অন্তর্ভূক্ত হযরত বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছাহেবযাদীগণ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত।  তারপর অন্যান্য মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না-উনাদের ফযীলত।

    প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার নাম, যিনি ছিলেন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পরে সকল মানবকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারিণী একজন মহিলা ছাহাবী । তারীখে ইবনে খামীসে উল্লেখ আছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন : আমি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আজীম অর্থাৎ পবিত্র সোমবার শরীফে আনুষ্ঠানিক নবুয়ত প্রাপ্ত হই এবং হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সেদিনেরই শেষাংশে নামায পড়েন এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম তার পরদিন ইয়াওমুছ ছুলাছাই অর্থাৎ মঙ্গলবার নামায পড়েন ।  সুবহানাল্লাহ ! এরপর হযরত যায়েদ বিন হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম নামাযে অংশ গ্রহণ করেন ।

    জুলুম-অত্যাচারের শিকার
    ইসলামের প্রাথমিক সময়ে কাফিরদের প্রবল বাধা, অত্যাচার ও নির্যাতনের পরও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সাথে সাথে কোন কোন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ্ন্নুাগণও অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দান করেন । প্রাথমিক সময়ে এইরূপ সাতজন নিজেদের ইসলামের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা  দেন  — তম্মধ্যে ছয় জন ছিলেন পুরুষ ও একজন মহিলা । সেই মহিলা ছাহাবী ছিলেন হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ।  মক্কা শরীফে বনু মুগীরা গোত্র ইসলামের জন্য হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিল । কিন্তু তিনি সর্বাবস্থায় ইসলাম পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করেন ।  কাফিরগণ হযরত আ¤মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে ও উনার মাতা হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, এবং উনার পিতা হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদেরকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালির উপর দ্বিপ্রহরের প্রখর রোদের মধ্যে শোয়ায়ে শাস্তি দিত । নাউজু বিল্লাহ !  একবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, তখন উনাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি উনাদেরকে সান্ত¦না দিয়ে বলেছিলেন :
    صبرًا آلِ ياسر موعِدُكم الجنة –                    
    (অর্থ: ধৈর্য ধারণ কর, হে ইয়াসির পরিবার । তোমাদের স্থান বেহেশ্তে) । সুবহানাল্লাহ ! বর্ণিত আছে যে, আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে  লক্ষ্য করে বর্শা নিক্ষেপ করে । এই বর্শা উনার শরীর ভেদ করে যায় এবং ফলে  তিনি তৎক্ষণাৎ শাহাদত বরণ করেন। তিনিই ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। ইহা ছিল হিজরতের পূর্বের ঘটনা।   মহিলা ছাহাবীদের সবচেয়ে বড় মর্যাদা এই যে, সবার আগে একজন মহিলাই ইসলামে দীক্ষিত হন যিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম, আবার সবার আগে একজন মহিলা ছাহাবীই শাহাদত বরণ করেন, যিনি হচ্ছেন হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা । সুবহানাল্লাহ!

    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন:-
    لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتَّى أكُوْنَ أحَبُّ إلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَ وَلَدِهِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِيْنَ – 
    (অর্থ) তোমাদের মাঝে কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষন না আমি তার নিকট তার মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে এমন কি সমস্ত মানুষের চাইতে বেশী প্রিয় হব  (বুখারী ও মুসলিম শরীফ) । সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে নিজের জীবন থেকে বেশী মুহব্বত করার প্রকৃত নজির দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হযরত ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ । 

    মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের সম্পর্কে  কিছু ঘটনাবলী আমি উল্লেখ করছি, যা থেকে উনাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুনাবলী কিছু কিছু বুঝা যাবে :-

    (১)   ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ঈমান আনার পর উনাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় । কিন্তু তা সত্বেও উনাদের ঈমানের শক্তিতে কোন অস্থিরতা আসে নি । আর মহিলা ছাহাবীদের অবস্থা এ ক্ষেত্রে পুরুষ ছাহাবাদের চেয়ে আরো খারাপ ছিল । মানুষ যদিও নিজের সকল আত্মীয় পরিজনের সহযোগিতা প্রার্থী হয়ে থাকে, কিন্তু মহিলাদের একমাত্র নির্ভর থাকে তাদের স্বামী । জীবনের সর্বাংশ তাদের স্বামীর উপরই নির্ভরশীল । কোন অবস্থাতেই  তারা এ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না । পিতা পুত্র থেকে, পুত্র পিতা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে জীবন যাপন করতে পারে । কিন্তু কোন স্ত্রীলোক স্বামী থেকে পৃথক হলে একেবারেই অসহায় ও বিপন্ন হয়ে পড়ে । কিন্তু তা সত্বেও ইসলামের হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ-উনাদের স্বামী থেকে অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং নিজেদের কাফির স্বামীদের থেকে চিরদিনের জন্য পৃথক হয়ে যান । হযরত পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যেমন উনাদের কাফির স্ত্রীগণকে ত্যাগ করেন, হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণও কাফির স্বামীদের ত্যাগ করেন এবং উনাদের একজনও নিজেদের স্বামীদের নিকট ফিরে  যান নি । সুবহানাল্লাহ ! উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম উনার প্রথম বিবাহ হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাসের সঙ্গে । অত:পর  ইসলামের প্রাথমিক যুগে উভয়ে একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম উনার তখনকার স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন । হাবশায় অবস্থানকালে উনার স্বামী উবায়দুল্লাহ ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টান হয়ে যায় । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম তৎক্ষণাৎ তাকে ত্যাগ করেন এবং সেখানে পৃথকভাবে জীবন যাপন করতে থাকেন । স্বামীর বহু চাপ সৃষ্টি সত্বেও তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগে রাজী হন নি । ইসলাম ত্যাগ করে উবায়দুল্লাহ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং শীঘ্রই মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ।  নাউজু বিল্লাহ ! পরবর্তীতে হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম উম্মুল মুমিনীন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন ।

    (২)  একবার উম্মুল মু‘মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম-উনার পিতা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান (তখনও তিনি মুসলমান হন নি) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য মদীনা শরীফে আগমন করেন। এ উপলক্ষে তিনি উনার মেয়ে উম্মুল মু‘মিনীন হযরত উম্মে হাবিবা আলাইহাস সালাম-উনার সাথে সাক্ষাত করতে উনার ঘরে আসেন । তিনি ঘরে প্রবেশ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিছানায় বসছিলেন, ঠিক এ সময় হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম উক্ত বিছানা উল্টিয়ে ফেলেন ।  পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন : তোমার এ বিছানা কি তোমার পিতা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় ? হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন : ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র বিছানা । আপনি যেহেতু কাফির, আপনি অপবিত্র । তাই এ বিছানায় আপনি বসতে পারেন না । তখন আবু সুফিয়ান বললেন : আমার পরে তোমার স্বভাব অনেক মন্দ হয়ে গিয়েছে ।       (উনার জীবনী মুবারক)

    (৩)   পুরুষ ছাহাবীগণ যেভাবে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন, মহিলা ছাহাবীগণও পিছিয়ে থাকতেন না ।  হযরত হাশরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : খায়বরের জিহাদে আমরা ছয় জন নারী অংশ গ্রহণ করি । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে পেরে একটু নারাজি প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করেন : তোমরা কার সঙ্গে এবং কার অনুমতিতে এসেছ ?  আমরা বললাম : আমরাই বের হয়েছি, আমাদের সঙ্গে ঔষধ রয়েছে, আহতদের আমরা ঔষধ লাগাব । তীরন্দাজদের তীর কুড়িয়ে দিব, সুওয়াইক (পানীয়) পান করাব, কবিতা রচনা করে উদ্ধুদ্ধ করব, এভাবে আমরা আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় সাহায্য করব । অত:পর তিনি আমাদের প্রতি ইরশাদ মুবারক করলেন : তোমরা অবস্থান কর । অত:পর যখন আল্লাহ পাক উনাকে খায়বরে বিজয় দান করলেন, যেভাবে তিনি পুরুষদের জন্য বরাদ্দ করলেন, আমাদের জন্যও তদ্রুপ বরাদ্দ করলেন। হযরত হাশরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদীকে জিজ্ঞাসা করলেন : কী বরাদ্দ করা হয়েছিল ? তিনি বললেন : খেজুর ।   সুবহানাল্লাহ !                 (উসুদুল গাবা

    (৪)   হযরত উম্মে উমারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা  উহুদের জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন । জিহাদের বিপর্যয়ের এক পর্যায়ে যখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  একাকী হয়ে গেলেন, তখন হযরত উম্মে উমারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আড়াল করে দণ্ডায়মান হন । কাফিরগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত, আর হযরত উম্মে উমারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে আড়াল করে কাফিরদের তীর ও তরবারি থেকে রক্ষা করতেন । নিজের জীবন বিপন্ন করে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডানে বামে কাফিরদের সাথে লড়েছেন ।  এক পর্যায়ে তিনি  নিজ কাঁধে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন।  অত:পর অন্যান্য ছাহাবীগণ এসে গেলে তিনি অব্যাহতি লাভ করেন (ইবনে হিশাম)। সুবহানাল্লাহ !

    (৫)  কোন কোন মহিলা ছাহাবীকে হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদের অনুমতি দেন নি । হযরত উম্মে কাব্শা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নামে এক মুহাজির ছাহাবিয়া  একবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট এসে বললেন : আপনি কি আমাকে অমুক অমুক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শরীক হতে অনুমতি দিবেন ?  নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুমতি দিলেন না । তখন তিনি বললেন : জিহাদ করা আমার উদ্দেশ্য নয় । আহতদের ঔষধ প্রদান, তাদের সেবা শুশ্র“ষা করা এবং যোদ্ধাদের পানি পান করান আমার উদ্দেশ্য ।  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন:  ইহা একটি রীতিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে এবং লোকে বলবে যে অমুক জিহাদে বের হয়েছে, তবে আমি তোমাকে হয়ত অনুমতি দিতাম । তুমি গৃহেই অবস্থান কর ।
                                                               (উসুদুল গাবা, ইছাবা)

    (৬)  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন । দেখলেন রাস্তায় পুরুষ মেয়ে একসাথে হাঁটছে । মহিলাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন :  পেছনে থাক, তোমরা মাঝপথ দিয়ে হাঁটতে পার না । এরপর থেকে মহিলাদের অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, উনারা গলির কিনারা ধরে এমনভাবে চলাচল করতেন যে, দেয়ালের গায়ে উনাদের কাপড় লেগে যেত। (আবু দাউদ শরীফ) সুবহানাল্লাহ!

    (৭)  হযরত ফাতিমা বিনতে কায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা একজন মহিলা ছাহাবী ছিলেন । উনাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন হযরত আবদুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি ছিলেন খুবই ঐশ্বর্যবান, ধনী ও সম্পদশালী। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইচ্ছা ছিল এই মহিলা ছাহাবী উনাকে হযরত উসামা বিন যায়দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে বিবাহ দিতে। বিষয়টি হযরত ফাতিমা বিনতে কায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অবগত হলে তিনি স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট এসে বললেন : হে আল্লাহ পাক উনার রসুল ! আমার সবকিছু আপনার জন্য কুরবান, যেখানে ইচ্ছা আপনি আমাকে বিয়ে দিন  (নাসঈ শরীফ, কিতাবুন নিকাহ) । সুবহানাল্লাহ !

    (৮)   হযরত আসমা বিনতে আবী বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হিজরত করে মদীনা শরীফে আসেন । তখন উনার কাফির মাতা উনার নিকট আসেন এবং আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, উনার কাফির মাতার সাথে ভাল আচরণ করা যাবে কিনা । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন : করা যাবে । অত:পর তিনি প্রার্থিত সহযোগিতা করেন।  (মুসলিম শরীফ) সুবহানাল্লাহ !

    (৯)  মহিলা ছাহাবীগণ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশাবলী গভীরভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামী ছাড়া অন্যদের জন্য শোক পালনের সময়সীমা তিন দিন পর্যন্ত ঠিক করে দেন । মহিলারা এই নির্দেশ এত অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতেন যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার ভাইয়ের বিছাল শরীফ হলো, তখন চতুর্থ দিনে কোন কোন মহিলা ছাহাবী উনার সঙ্গে দেখা করতে আসলেন । উনাদের সবার সামনে তিনি সুগন্ধি মাখলেন এবং বললেন : সুগন্ধির দরকার ছিল না আমার । কিন্তু আমি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট শুনেছি যে, কোন মুসলমান মহিলার উচিত নয় তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো জন্য  তিন দিনের বেশী শোক পালন করা — এজন্যই আমি এটি করলাম (আবু দাউদ শরীফ)। সুবহানাল্লাহ !

    (১০)  পুরুষ ছাহাবীদের ন্যায় অনেক মহিলা ছাহাবী ইবাদতে কঠোর রিয়াযত মুশাক্কাত করতেন। হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একজন মহিলা ছাহাবী । উনার অভ্যাস ছিল সব সময় নামাযে নিমগ্ন থাকা। যখন ক্লান্ত হয়ে যেতেন, মসজিদের পিলারের সঙ্গে সংযুক্ত রশিতে ঝুলতে থাকতেন। রশিটি তিনি নিজেই এভাবে বেঁধে রেখেছিলেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই রশি দেখে বললেন : তার তো ততটুকু নামায পড়া উচিত যতটুকু তার সাধ্য । যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তো বসে যাওয়া উচিত। এরপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই রশি খুলে বাইরে ফেলে দেন  (মুসলিম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ ! উল্লেখযোগ্য যে, এই মহিলা ছাহাবী হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন মদীনা শরীফে প্রথম ইসলাম প্রচারক হযরত মুছআব বিন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার আপন বোন ।

    (১১)  একবার এক মহিলা ছাহাবী অসুস্থ হয়ে মানত করলেন যে, আল্লাহ পাক যদি সুস্থতা দান করেন, তাহলে বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামায পড়ব। যখন সুস্থ হলেন, সফরের আয়োজন করলেন। বিদায় নেয়ার জন্য উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আসলেন । তিনি উক্ত মহিলা ছাহাবীকে বললেন : মসজিদে নববীতেই নামায পড়ে নাও । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন : আমার মসজিদে একবার নামায পড়া অন্য মসজিদ সমূহে হাজার নামায পড়ার চেয়ে উত্তম  (তাবাকাত)। সুবহানাল্লাহ !

    (১২)  পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন। মহিলা ছাহাবীগণও এতে অংশ গ্রহণ করতেন। হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নিজের পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে তুলতেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রাত্রিকে তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন : একাংশে নিজে, দ্বিতীয়াংশে উনার আহলিয়া এবং তৃতীয়াংশে উনার খিদমতকারী তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন এবং একজন আর  একজনকে জাগিয়ে দিতেন (বুখারী শরীফ)। সুবহানাল্লাহ !

    (১৩)  হযরত আবু উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামে এক ছাহাবী বার বার  শাহাদতের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দোয়া করলেন শান্তি ও স্বস্থির । শেষে তিনি বললেন যে, এমন কোন কাজের নির্দেশনা দিন যা থেকে আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সৌভাগ্য দান করবেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন উনাকে রোযা পালন করার নির্দেশ দিলেন। ইহা শুনে তিনি ছাওমে বেছাল অর্থাৎ ধারাবাহিক ও অবিচ্ছিন্ন রোযা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন । উনার এই কাজে  উনার খাদেম এবং উনার আহলিয়াও অংশগ্রহণ করেন । রোযা উনার পরিবারে একটি বৈশিষ্ট্যমূলক কর্ম হয়ে দাঁড়ায় । কোনদিন যদি উনার গৃহে ধোঁয়া উঠত, তখন লোকজন মনে করত আজ নিশ্চয়ই উনাদের ঘরে কোন মেহমান এসেছে, অন্যথায় উনাদের ঘরে কি করে রান্না হতে পারে ? (মসনদে আহমদ) সুবহানাল্লাহ !

    (১৪)  কোন কোন মহিলা ছাহাবী নফল রোযা রাখতেন । সেকারণে উনাদের  স্বামীদের কষ্ট হতো। উনারা যখন এর বিরোধিতা করলেন, মহিলা ছাহাবীরা খুব অসন্তুষ্ট হলেন এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নালিশ করলেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন : স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার আহলিয়া নফল রোযা রাখতে পারবে না  (আবু দাউদ শরীফ)। সুবহানাল্লাহ !

    (১৫)  মহিলা ছাহাবীরা ই’তিকাফেও উৎসাহী ছিলেন । একবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য ই’তিকাফের তাঁবু টানাতে বললেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনিও নিজের জন্য আলাদাভাবে তাঁবু টানিয়ে নেন। তখন উনার দেখাদেখি অন্যান্য উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণও ই’তিকাফের জন্য তাঁবু টাঙ্গিয়ে ফেলেন (আবু দাউদ শরীফ)।

    (১৬) পুরুষ ছাহাবীদের ন্যায় মহিলা ছাহাবীদের বদান্যতাও নজির বিহীন ছিল। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এত বেশী দানশীলা ছিলেন যে, যা কিছু হাতে আসত তা দান করে দিতেন। একবার উনার বোনের ছেলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এই দানশীলতা থেকে রুখতে চাইলেন । এতে তিনি এতই রাগান্বিত হন যে, উনার সাথে কথা না বলার কসম করে নেন।  সুবহানাল্লাহ ! অত:পর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মাফ চাইলেন এবং অন্যান্য ছাহাবীরা উনার জন্য সুপারিশ করলেন। অবশেষে সকলের সুপারিশ ও অনুরোধে তিনি উনার ত্রুটি ক্ষমা করে দেন এবং কসমের কাফফারা দিতে গিয়ে চল্লিশ জন দাস স্বাধীন করে দেন  (বুখারী শরীফ)। সুবহানাল্লাহ !

    (১৭)  একবার হযরত মুনকাদের বিন আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আসলেন (সম্ভবত: আর্থিক সাহায্য লাভের আশায়)। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন : তোমার কোন ছেলে আছে ?  তিনি বললেন : না।  হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন : যদি আমার নিকট দশ হাজার দিরহাম থাকত, তবে তোমাকে দিয়ে দিতাম। সেদিনই সন্ধ্যায় হযরত মু’য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট টাকা পাঠালেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন : কত দ্রুত পূর্ণ হলো আমার আকাঙ্খা ! তাড়াতাড়ি লোক পাঠালেন উনাকে ডেকে নিয়ে আসতে ।  তিনি আসলে উনাকে দশ হাজার দিরহাম দিয়ে দিলেন (আদাবুল মুফরাদ)। সুবহানাল্লাহ !

    (১৮)  উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বড় বোন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার চেয়েও বেশী দানশীল ছিলেন । উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার অভ্যাস ছিল এমন যে, তিনি জমা করে যেতেন, অত:পর হঠাৎ একদিন সব দান করে দিতেন । কিন্তু হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সেরূপ জমাও করতেন না । যা হাতে আসত দিনে দিনে তা দান করে দিতেন (বুখারী শরীফ)। সুবহানাল্লাহ !

    এই প্রসঙ্গে আমরা কতিপয় বিশিষ্ট মহিলা ছাহাবীর জীবনী মুবারক আলোচনা করব, এতে মহিলা ছাহাবীদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে :-

    ১।  হযরত উম্মুলফদ্বল বিনতুল হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

    পরিচিতি
    উনার আসল নাম লুবাবা কুবরা, পিতা আল-হারিছ বিন হাযান বিন বুজায়র, বনু হিলাল গোত্রের মহিলা ছাহাবী, ছয় জন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মাতা,  উম্মুলফদ্বল উপনামেই তিনি সমধিক পরিচিতা । তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া ।  তিনি হিজরতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন । হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মতে তিনি উম্মুলমু’মিনীন হযরত কুবরা  আলাইহাস সালাম উনার পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । এতে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম গ্রহণকারী মহিলাদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়া । এক হাদীছ শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন :-
     الأخوات الأربع مؤمنات : أم الفضل، و ميمونة، و أسماء، وسلمى –  (এই চার বোন মু’মিনা — উম্মুলফদ্বল, মায়মুনা, আসমা ও সালমা)  (ইছাবা)। 

    কথিত আছে যে, লোকে বলত হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার মাতা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে স¤মানিতা শাশুড়ী, কারণ হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার এক বোন উম্মুলমু’মিনীন, হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আহলিয়া, হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া, উনার অন্য এক বোন  হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া, অপর এক বোন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া (হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম-উনার ভাই), হযরত জা‘ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার শাহাদতের পর উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্টিত হয় হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার সাথে এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার বিছাল শরীফের পর উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম-উনার সাথে  (ইছাবা)। সুবহানাল্লাহ !

    হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বৈমাত্রেয় বোন হযরত লুবাবা আছ-ছুগরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (উনার উপনাম ছিল আল-আসমা) ছিলেন সুবিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি হযরত খালিদ বিন ওলিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার মাতা ।

    একবার হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা স্বপ্নে দেখলেন যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দেহের একটি অঙ্গ উনার গৃহে । তিনি এই স্বপ্নের কথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে জানালে তিনি বললেন : সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা  আলাইহাস সালাম-উনার একটি পুুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হবেন এবং আপনি তাকে আপনার স্তনের দুগ্ধ পান করাবেন । অত:পর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ হয় এবং হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দুগ্ধ পান করান, তখন উনার দুগ্ধপানকারী নিজ সন্তান ছিল হযরত কুছাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (ইছাবা)। সুবহানাল্লাহ !

    একদিন  হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে কোলে নিয়ে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট আগমন করেন । তখন তিনি উনাকে দুগ্ধ পান করাতেন । তিনি উনাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার কোল মুবারকে দিলে তিনি ইস্তিঞ্জা করে দিলেন । হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম-উনার দুই কাঁধের মাঝখানে নিজ হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করলেন । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  ইরশাদ মুবারক করলেন : আপনি আমার  সন্তানকে কষ্ট দিলেন, আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি রহম করুন ! সুবহানাল্লাহ ! হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন : আপনি আপনার ইযার পরিবর্তন করে অন্য একটি কাপড় পরিধান করুন । উহা আমি ধৌত করে দিব । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন : পুরুষ শিশুর ইস্তিঞ্জার উপর পানি ছিঁটিয়ে দিলেই চলে, আর মেয়ে শিশুর ইস্তিঞ্জা ধৌত করতে হয়  (তাবাকাত)।

    হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার আমলে বিছাল শরীফ লাভ করেন । উনার স্বামী হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন জীবিত ছিলেন । হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার অধিকাংশ সন্তান সন্ততী উনার রেহেম শরীফে বিলাদত শরীফ লাভ করেন । ত¤মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন । অধিক ইলেমের জন্য হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে হিবরুল উম্মাহ (উম্মতের কালী অর্থাৎ বড় আলিম) বলা হতো।   আবদুল্লাহ বিন ইয়াযীদ হিলালী বলেন :-
                  ما ولدتْ نجيبة من فحل — كستةٍ من بطن أمّ الفضل
    أكرم بها من كهلة و كهل                           
    (হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার রেহেম শরীফ থেকে আগত  ছয় জন বীর পুরুষের ন্যায় অন্য কোন পবিত্র মাতা জš§ দেন নি — কোন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ অথবা পূর্ণ বয়স্কা স্ত্রীলোক উনার থেকে অধিক স¤মানিতা নন) ।  সুবহানাল্লাহ ! উনারা হচ্ছেন উনার সন্তান হযরত ফদ্বল, হযরত আবদুল্লাহ, হযরত উবায়দুল্লাহ, হযরত মা‘বাদ, হযরত কুছাম ও হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম–এই ছয় জন। হযরত উম্মে হাবীব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নামে উনার একটি কন্যা সন্তানও ছিলেন  (তাবাকাত)।

    হযরত উম্মুলফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহা তিনি ইবাদত বন্দেগীতে যথাসাধ্য নিরত থাকতেন । তিনি প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহ®পতিবার রোযা পালন করতেন  (তাবাকাত)।

    তিনি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন । উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন উনার পুুত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, হযরত তামাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আরো অনেকে । বুখারী ও মুসলিম শরীফে উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ সংকলিত হয়েছে ।            সূত্র : তাবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা

    ২।   হযরত সালমা বিনতে হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

    প্রথম বিবাহ হয় বিখ্যাত বীর ছাহাবী ইরাণ অভিযানের সেনাপতি হযরত মুছান্না রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে । ঐতিহাসিক সেতুর জিহাদে হিজরী ১৪ সনে শাহাদত বরণ করেন । অত:পর কাদেসিয়া জিহাদের সেনাপতি হযরত সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।  

    কাদেসিয়ার জিহাদের সময় হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার এই আহলিয়া উনার সাথে ছিলেন। হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন, যে কারণে তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে পারেন নি । স্বীয় বাসভবনে থেকেই তিনি জিহাদ পরিচালনা করছিলেন । কিন্তু উনার আহলিয়া হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যে কারণেই হোক তা গ্রহণ করতে পারেন নি। তিনি ভিতরে ভিতরে ছটফট করছিলেন। সর্বক্ষণ উনার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল জিহাদের ময়দানে । একদিন জিহাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি অলক্ষ্যে চিৎকার করে উঠলেন, হায় মুছান্না ! আজকের এই মূহূর্তে মুছান্না নেই !  হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আত্মমর্যাদায় ইহা দারুনভাবে আঘাত করে । তিনি হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে চপেটাঘাত করে বললেন : কোথায় আপনার মুছান্না?  হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন : কাপুরুষতার সঙ্গে আবার আত্ম-মর্যাদা-বোধ !  হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নরম সুরে উত্তর দিলেন : আপনিই যদি আমার ওযর গ্রহণ না করেন, তবে আর কেউ গ্রহণ করবে না । আপনি নিজেই তো দেখছেন আমার কি অবস্থা ! পরে হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন । সুবহানাল্লাহ !

    কাদিসিয়ার জিহাদে হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একটি সাহসিকতাপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছিলেন । তা হচ্ছে হযরত আবু মিহজান আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বন্ধন মোচন। প্রখ্যাত মুসলিম কবি হযরত আবু মিহজান আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বিরুদ্ধে মদ পানের অভিযোগ ছিল, যদিও  এ অভিযোগ ঠিক ছিল না। খলীফা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম-উনার নির্দেশে হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বন্দী করেন । কবি তখন উনার সেনাবাহিনীতে ছিলেন । কাব্য প্রতিভার ন্যায় বীরত্বও ছিল উনার  অন্যতম বৈশিষ্ট্য । কাদেসিয়ার ঘোরতর লড়াইয়ের সময় উহাতে অংশগ্রহণ করতে না পেরে তিনি ছটফট করছিলেন  । কবি তখন আবৃত্তি করছিলেন কয়েকটি শ্লোক :  আমি শিকলাবদ্ধ অবস্থায়, পরিত্যাক্ত, অথচ বর্শাসহ অশ্বারোহণ করে জিহাদে শরীক হতে পারছি না, এই দু:খই আমাকে বিষাদগ্রস্থ করার জন্য যথেষ্ট । অত:পর তিনি হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে অনুনয় বিনয় করে বললেন : আপনি আমাকে ছেড়ে দিন । আল্লাহ পাক-উনার নামে আমি আপনাকে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি যে, যদি নিরাপদ থাকি, তবে ফিরে আসব এবং স্বয়ং পায়ে শিকল পরব । আর যদি নিহত হই, তবে তো আপনারা আমার ঝামেলা হতে বেঁচে গেলেন । হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বীর কবির দু:খ যথার্থই উপলব্ধি করলেন । সেই সঙ্গে মুসলমানদের এই প্রয়োজনকালে যেভাবে হোক তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন । অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি মনস্থির করে ফেললেন। বললেন, আমি আপনার  দেয়া প্রতিশ্র“তির ব্যাপারে চিন্তা করেছি এবং উত্তম ফয়ছালার জন্য আল্লাহ পাক-উনার নিকট ইসতিখারা করেছি। আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করলাম । এই বলে তিনি হযরত সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার অনুমতির অপেক্ষা না করেই উনাকে মুক্ত করে দিলেন । সুবহানাল্লাহ !

    হযরত আবু মিহজান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বলাকা নামক ঘোড়ায় চড়ে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন । উনার অস্ত্র চালনা এবং বলাকার থাবা  দেখে মুসলিম সৈন্যরা মনে করলেন, আল্লাহ পাক উনার কোন ফিরিশ্তা নাযিল হয়েছেন । পরিশেষে মুসলমানদের বিজয় হলো ।  সুবহানাল্লাহ ! হযরত আবু মিহজান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফিরে এসে আবার নিজ পায়ে শিকল লাগালেন । এ সময় হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আনুপূর্বিক সমস্ত ঘটনা শুনালেন । উনাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে, উনি মদ পান করেন নি । তবে কবি হিসাবে মদের বর্ণনা উনার কবিতায় ফুটে উঠত । সেজন্যই উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ।  অত:পর উনাকে বন্দী দশা থেকে মুক্তি দেয়া হয় । হযরত আবু মিহজান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাহসিকতার সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণের কারণে মুসলমানদের এত বড় বিজয় সাধিত হলো।  এর পিছনে ছিল হযরত সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার সাহসিকতা ও সুদৃঢ় সংকল্প । সুবহানাল্লাহ !

    ৩।  হযরত খানছা’ বিন্তু ‘আমর ইবনুশ শারীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

    পরিচিতি
    কায়স গোত্রের সুলায়ম শাখার একজন প্রসিদ্ধ মহিলা কবি ও ছাহাবী  (বনু সুলায়ম হিজায ও নজদের উত্তরে বসবাস করত) । উনার আসল নাম তুমাদ্বির বিন্তু ‘আমর ইবনুশ শারীদ,  উপনাম খানছা’,  খানছা অর্থ বন্য গাভী ও হরিণী। শেষ পর্যন্ত উনার আসল নামটি ঢাকা পড়ে যায় এবং ইতিহাসে তিনি খানছা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।

    ইসলাম-পূর্ব জীবন
    কথিত আছে যে, দুরায়দ বিন ছি¤মা প্রাচীন আরবের একজন বিখ্যাত নেতা ছিলেন ।  হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বিয়ের বয়স হওয়ার পর দুরায়দ একদিন দেখলেন, অতি যতœ সহকারে খানছা উনার একটি উটের গায়ে ঔষধ লাগালেন, তারপর নিজে পরিচ্ছন্ন হলেন । এতে দুরায়দ মুগ্ধ হলেন এবং উনার নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন । হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা দুরায়দের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এই বলে : আপনি কি চান যে, আমি আমার চাচাত ভাইদেরকে এমনভাবে ত্যাগ করি যেন তারা তীরের উপরিভাগ এবং বনু জুশামের পরিত্যাক্ত বৃদ্ধকে গ্রহণ করি ?  দুরায়দ পরিত্যক্ত হয়ে আফসোস করে নিম্নরূপ কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন  :-
    حَيُّوْا تُمَاضِرَ وَأرْبَعُوْا صَحْبِى                        
     (অর্থ: তুমাদ্বিরকে আমার সালাম বলবে, এবং তাকে আমার সাহচর্যে থাকতে বলবে)  (ইছাবা)। (কথিত আছে যে, দুরায়দ শতাধিক বছর হায়াত পেয়েছিলেন এবং বৃদ্ধাবস্থায়ই এই কবিতাংশ রচনা করেছিলেন) ।

    দুরায়দের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজ গোত্রের রাওয়াহা ইবনে আবদিল উয্যা নামে এক যুবককে বিবাহ করেন । কিছুদিন পর রাওয়াহা মারা গেলে তিনি মিরদাস ইবনে আবী ‘আমরকে বিবাহ করেন । উভয় সংসারে উনার কয়েকজন সন্তান জীবিত ছিলেন ।

    ইসলাম গ্রহণ
    হযরত খানছা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গোত্রের লোকদের সঙ্গে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খিদমতে উপস্থিত হন এবং উনাদের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন । কথিত আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কছীদা শুনে খুশী হয়েছিলেন এবং উনাকে কছীদা শুনানোর জন্য বলেছিলেন । তখন তিনি দুই-তিনটি কছীদা আবৃত্তি করে উনাকে শুনিয়েছিলেন ।

    কবি হিসাবে মরছিয়া রচণায় কৃতিত্ব
    আলিমগণের অভিমত এই যে, হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার ন্যায় মরছিয়া কছীদা উনার পূর্বে বা পরে কোন মহিলা কবি রচনা করতে পারেন নি । যখন উনার ভাই মুয়াবিয়াকে হাশিম ও যায়দ হত্যা করে, এবং অত:পর উনার বৈপিত্রেয় ভাই ছখর, যিনি উনার বংশের মধ্যে একজন দাতা ও ধৈর্যশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন, নিহত হলেন, তখন তিনি মরছিয়া কছীদা রচনা করতে শুরু করেন, যাতে উনার তীক্ষœ কবিত্ব প্রতিভার বহি:প্রকাশ ঘটেছে।

    হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বৈপিত্রেয় ভাই ছখরকে  অত্যন্ত ভালবাসতেন । কারণ হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বিয়ে হয়েছিল এমন এক যুবকের সাথে যে ছিল অমিতব্যয়ী । সে তার সমস্ত অর্থ স¤পদ বাজে কাজে উড়িয়ে দিয়ে নি:স্ব হযে যায় ।  হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা গেলেন উনার ভাই ছখরের নিকট স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে।  কিন্তু ছখর তার স¤পদের অর্দ্ধেক বোনের হাতে তুলে দিলেন । তিনি তা নিয়ে স্বামীর ঘরে ফিরে গেলেন। কিন্তু স্বামী অল্প দিনের মধ্যে তাও খরচ করে ফতুর হয়ে যায়।  হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আবার গেলেন ছখরের নিকট । এবারও ছখর তার স¤পদ সমান দুই ভাগে ভাগ করে ভালো ভাগটি বোনকে দিয়ে দেয় । এভাবে ছখর তার সৎ বোনের অন্তরের গভীরে এক স্থায়ী আসন গড়ে তোলে । তার মৃত্যুতে হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সীমাহীন দু:খ পান। আর তার মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে অতুলনীয় মরছিয়া (শোক গাঁথা) রচনা করতে থাকেন । কথিত আছে যে, ছখরের শোকে তিনি কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যান । ছুবহানাল্লাহ !

    জিহাদে অংশ গ্রহণ
    বর্ণিত আছে যে,  হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা কাদেসিয়ার জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন । উনার সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন উনার চার পুত্র । রাত্রের প্রথমাংশে তিনি তাদেরকে বললেন : হে বৎসগণ ! নিশ্চয়ই তোমরা ইসলাম গ্রহণ করেছ, হিজরত করেছ, তোমরা আল্লাহ পাক-উনার পছন্দিত । যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই উনার কছম করে বলছি, তোমরা নিশ্চয়ই একজন পুরুষের সন্তান, যেমন তোমরা একজন মহিলার   সন্তান । আমি তোমাদের পিতার বংশের খিয়ানত করি নি এবং তোমাদের মাতুল বংশের লজ্জার কারণ হই নি । তোমাদের বংশ মর্যাদার স¤মান ক্ষুন্ন করি নি এবং বংশ তালিকা পরিবর্তন করি নি। তোমরা অবশ্যই অবগত আছ, কাফিরদের সাথে জিহাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য কি উত্তম পুরু®কার রেখেছেন ।  জেনে রাখবে স্থায়ী গৃহ ধ্বংসশীল গৃহ অপেক্ষা বহুগুণ উত্তম । মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক  করেন:-

    يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اصْبِرُوْا وَ صَابِرُوْا وَ رَابِطُوْا، وَ أتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-

    (অর্থ: হে ঈমানদারগন ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং জিহাদের  জন্য  প্রস্তুত  থাক  এবং আল্লাহ  পাককে ভয় কর,  যাতে  তোমরা সফলকাম হও ।)  আগামী কাল যখন সকাল হবে, শত্র“র বিরুদ্ধে ধৈর্যের সাথে জিহাদে অবতীর্ণ হবে, শত্র“র উপর মহান আল্লাহ পাক-উনার সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকবে । যখন তোমরা দেখবে যে, জিহাদ পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়েছে এবং তরবারি সমূহ অগ্নির ন্যায় চমক দিচ্ছে এবং জিহাদের ময়দানের চারদিকে যখন অগ্নি বর্ষিত হচ্ছে, তখন উহার প্রজ্জ¦লিত অগ্নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং শত্র“দের বীর যোদ্ধাদের সাথে মুকাবিলা করে চিরস্থায়ী গৃহের নিয়ামত হাসিল করবে । অত:পর উনার সন্তানগণ মাতার উপদেশ অনুযায়ী অগ্রসর হয়ে জিহাদ শুরু করলেন । অত:পর মুছীবতের দ্বারা পরীক্ষিত হলেন এবং চার পুত্র সকলেই জিহাদে শাহাদত বরণ করলেন । যখন এই সংবাদ উনার নিকট পৌঁছল, তিনি বললেন :  সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-উনার জন্য যিনি তাদের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে আমাকে স¤মানিত করেছেন, এবং আমি আমার রব্-উনার নিকট আশা রাখি  তিনি উনার রহমতের গৃহে তাদের সঙ্গে আমাকে একত্রিত করবেন । সুবহানাল্লাহ !

    ফযীলত ও বুযূর্গী
    ইসলাম-পূর্ব জীবনে হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার ভাইদের জন্য  শোক প্রকাশ, বিলাপ করা ও মরছিয়া রচনা এবং ইসলাম গ্রহণ করার পরের জীবন তুলনা করলে উনার পরবর্তী জীবনে কিরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল  তা বুঝা যায় । উনার চার পুত্রের একযোগে শাহাদত বরণ নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেও তিনি কোনরূপ শোক বা বিলাপ কিছুই করলেন না বরং এক অতুলনীয় সান্ত¦না ও আত্ম সংযমের পথ অবলম্বন করলেন । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কি পরিমাণ ঈমানী শক্তির অধিকারী হয়েছিলেন এখানে তা লক্ষ্য করার বিষয় !  এ সময় তিনি আর কোন শোক গাঁথা বা মরছিয়া রচণা করেছেন ইতিহাসে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । সুবহানাল্লাহ !

    হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফের পূর্ব পর্যন্ত উনার চার সন্তানের ভাতা প্রত্যেকের জন্য দুই শত দিরহাম করে উনাকে নিয়মিত ভাবে প্রদান করতেন ।  হযরত খানছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বিছাল শরীফের তারিখ জানা যায় না ।   (উসুদুল গাবা, ইছাবা, সীরত গ্রন্থাবলী)


    ৪।  হযরত আসমা বিনতে আবী বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

    হযরত ছিদ্দিকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কন্যা, স্বামী  আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভূক্ত হযরত যুবায়র বিন আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু , পুত্র বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবদুল্লাহ  ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

    উনার পুত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার শাহাদতের ঘটনায় তিনি যেরূপ ধৈর্য ও  সাহসিকতার পরিচয় দেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । উমাইয়া খলীফা মারোয়ানের সময় সিরিয়ার বাইরে ইসলামী বিশ্ব ছিল উনার পুত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার  আয়ত্বাধীন ।  আবদুল মালেক সিংহাসনে আরোহণ করে একের পর এক তাদের হারান এলাকা পূণরুদ্ধার করতে লাগল । হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বিজয়ের সাথে অগ্রসর হচ্ছিল। ৭৩ হিজরীতে তার হাতে মক্কা শরীফ অবরোধ যখন এমন কঠোরতার পর্যায়ে পৌঁছল যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সহচরগণ দলত্যাগ করে হাজ্জাজের নিকট নিরাপত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগল । তখন হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতার নিকট গিয়ে বললেন: মাত্র কয়েকজন সঙ্গী আমার নিকট রয়েছে । এমতাবস্থায় আমি আত্মসমর্পন করলে তাদের নিরাপত্তা লাভ করা যাবে । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন : তুমি যে রাজত্ব ও ক্ষমতা লাভ করেছ তা যদি দুনিয়ার জন্য করে থাক, তবে তোমার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোন মানুষ নেই। তিনি বললেন : আমি যা করেছি দ্বীনের জন্যই করেছি, কিন্তু আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, আমি নিহত হলে সিরিয়াবাসী আমার লাশের অবমাননা করবে । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন:  কোন ক্ষতি নেই, সঠিক দ্বীনের উপর কায়েম থাক ।  নিহত হওয়ার পর মানুষের ভয়ের কিছু নেই । কারণ, জবেহ করা ছাগলের চামড়া তোলার সময় সে কষ্ট পায় না । সুবহানাল্লাহ !

    একথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার মুখ মন্ডলের দীপ্তি  উজ্জ¦ল হয়ে উঠল। তিনি বললেন : এ সংকটময় মূহূর্তে আপনার মুখ থেকে কেবলমাত্র এ কথাগুলি শোনার জন্য আমি আপনার খেদমতে হাজির হয়েছিলাম । আল্লাহ পাক জানেন, আমি ভীত হই নি, আমি দুর্বল হই নি । তিনিই সাক্ষী, আমি যে জন্য সংগ্রাম করছি, তা কোন  জাগতিক সুখ স¤পদ ও মর্যাদার প্রতি লোভ-লালসা ও ভালবাসার কারণে নয় । বরং এ সংগ্রাম হারামকে হালাল ঘোষণা করার প্রতি আমার ঘৃণা ও বিদ্বেষের কারণেই । আমি শহীদ হলে আমার জন্য কোন দু:খ করবেন না এবং আপনার সবকিছুই আল্লাহ পাক-উনার হাতে সোপর্দ করবেন।

    হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বর্মের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন: আবদুল্লাহ ! তুমি এ কি পরেছ ?  তিনি বললেন : আ¤মা, এতো আমার বর্ম । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন : বেটা, যারা শাহাদতের আকাঙ্খী এটা তাদের পোষাক নয় । তুমি এটা খুলে ফেল । এটা হবে তোমার কর্মতৎপরতা, গতি ও চলাফেরার পক্ষেও সহজতর। এর পরিবর্তে তুমি লম্বা পায়জামা পর । তা হলে তোমাকে মাটিতে ফেলে দেয়া হলেও তোমার সতর অপ্রকাশিত থাকবে । সুবহানাল্লাহ !

    মায়ের কথামত হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ম খুলে পায়জামা পরলেন এবং এ কথা বলতে বলতে হেরেম শরীফের দিকে যুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন : আ¤মা, আমার জন্য দোয়া করবেন । সাথে সাথে উনার মা হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দু’টি হাত আকাশের দিকে তুলে পুত্রের জন্য দোয়া করলেন ।

    সেদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদত লাভ করেন । সুবহানাল্লাহ

    হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে হত্যার পর হাজ্জাজ উনার লাশ মুবারককে তিন দিন পর্যন্ত  লটকিয়ে রেখেছিল । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অতিশয় ধৈর্য ও স্থৈর্যের সাথে এই দৃশ্য দেখলেন। লটকানো লাশের কাছে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত শান্তভাবে বললেন : এ সওয়ারীর এখনও ঘোড়া থেকে নামার সময় হলো না ?  সুবহানাল্লাহ ! জনতার ভীড় কমানোর উদ্দেশ্যে উনাকে নেয়ার জন্য হাজ্জাজ লোক পাঠায় । তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। সে আবারো লোক মারফত বলে পাঠায়, এবার না আসলে উনার চূলের গোছা ধরে টেনে আনা হবে। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হাজ্জাজের ভয়ে ভীত হলেন না। তিনি গেলেন না । এবার হাজ্জাজ নিজেই আসল । উনাদের দু’জনের মধ্যে নিম্নরূপ কথাবার্তা হলো :  হাজ্জাজ বলল : বলুন তো, আমি আল্লাহ পাক-উনার দুশমন ইবনে যুবায়েরের সাথে কেমন ব্যবহার করেছি ?  হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন : তুমি তার দুনিয়া নষ্ট করেছ । আর সে তোমার পরকাল নষ্ট করেছে। আল্লাহ পাক-উনার কসম, আমি “যাতুন নিতাকাইন” । আমি একটি নিতাক (কোমরবন্ধ) দিয়ে রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের খাবার বেঁধেছি । আরেকটি নিতাক আমার কোমরেই আছে। মনে রেখ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট থেকে আমি শুনেছি, ছাক্বীফ গোত্রে একজন মিথ্যাবাদী ভন্ড এবং একজন জালিম পয়দা হবে । মিথ্যাবাদীকে তো আগেই দেখেছি (আল-মুখতার), আর জালিম তুমিই। হাজ্জাজ এই হাদীছ শরীফ শুনে নীরব হয়ে  যায়  (মুসলিম শরীফ)।  সুবহানাল্লাহ। পরে খলীফা আবদুল মালিকের নির্দেশে হাজ্জাজ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার লাশ মুবারক উনার মাতার নিকট সমর্পন করে ।

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার শাহাদতের কিছুদিনের মধ্যেই হিজরী ৭৩ সনে হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও বিছাল শরীফ লাভ করেন । তখন উনার বয়স হয়েছিল এক শত বৎসর। মহিলা ছাহাবীর মধ্যে তিনিই সর্বশেষে বিছাল শরীফ লাভ করেন । (সিয়ারু আলামিন নুবালা) । উনার স্বাস্থ্য অত্যন্ত ভাল ছিল । তিনি এক শত বৎসর হায়াত মুবারকে ছিলেন। উনার বার্ধক্যজনিত বুদ্ধি বিভ্রম ঘটে নি । উনার বিছাল শরীফ পর্যন্ত উনার দাঁতও সবগুলি অটুট ছিল । সুবহানাল্লাহ !

    ৫।  হযরত উম্মে হাকীম বিনতুল হারিছ বিন হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

    কুরাইশ গোত্রের বনু মাখযুম শাখার মহিলা, মাতা হযরত ফাতিমা বিনতুল ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বোন ।

    উহুদের জিহাদে কাফির অবস্থায় কুরায়শদের পক্ষে অংশ গ্রহণ করেন । শুধু তাই নয়, ইসলামের শুরু থেকে প্রায় বিশ বছর উনার গোটা পরিবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামের  বিরোধিতা করেছেন ।  মক্কা  শরীফ বিজয়ের দিন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন । এইদিন তিনি, উনার পিতা, মাতা ও স্বামী — সকলই একযোগে ইসলাম গ্রহণ করেন ।

    হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার পিতা হযরত হারিছ বিন হিশাম ইবনুল মুগীরা আল-মাখযুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, নরাধম আবু জেহেল-এর ভাই । মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি একজন ভদ্র ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন । হুনায়নের জিহাদে প্রাপ্ত গণীমত থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একশত উট দান করেন । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি একজন নিষ্ঠাবান মুসলমানে পরিণত হন। পরবর্তীকালে একজন মুজাহিদ হিসাবে সিরিয়া যান এবং সেখানে তাউন রোগে আক্রান্ত হয়ে শাহাদত লাভ করেন ।  

    হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার স্বামী প্রখ্যাত কুরাইশ নেতা হযরত ইকরিমা বিন আবী জাহল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ।  যখন হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ইসলাম গ্রহণ করেন, সে সময় হযরত ইকরিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইয়ামানে পলায়ন করেন । হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার স্বামীর জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন। তিনি উনার স্বামীর সন্ধান করার জন্যও অনুমতি প্রার্থনা করেন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুমতি দান করেন । অত:পর তিনি হযরত ইকরিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে ইয়ামান থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। অত:পর হযরত ইকরিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি বলেন : হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! আল্লাহ পাক-উনার কসম ! আল্লাহ পাক-উনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যত কিছু আমি ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুণ আমি আল্লাহ পাক-উনার পথে ব্যয় করব এবং আল্লাহ পাক-উনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যত যুদ্ধ আমি করেছি, তার দ্বিগুণ জিহাদ আমি আল্লাহ পাক-উনার পথে করব  (উসুদুল গাবা)। সেই দিন থেকে তিনি আল্লাহ পাক-উনার যমীনে আল্লাহ পাক-উনার দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী কাফেলায় শরীক হন এবং ইয়ারমুকের জিহাদে শাহাদত বরণ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে কৃত অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করেন । সুবহানাল্লাহ !

    হযরত ইকরিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হিজরী ১৩ সনে ইয়ারমুকের জিহাদে শাহাদত বরণ করেন। এই জিহাদে তিনি সত্তরেরও অধিক তীর, বর্শা ও তরবারির আঘাত প্রাপ্ত হন । ফলে তিনি শাহাদত বরণ করেন । হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও স্বামীর সাথে রোমানদের সাথে জিহাদের উদ্দেশ্যে সিরিয়া যান । এই জিহাদে কুরাইশ রমণীরা তরবারি চালনায় পুরুষ যোদ্ধাদেরকেও হার মানায় । ্এই রমণীদের মধ্যে হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও ছিলেন একজন । ইয়ারমুকের জিহাদে তিনি স্বামীকে হারান।

    স্বামীর শাহাদতের পর  চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করে হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার পুণ:র্বিবাহ হয় হযরত খালিদ বিন সা‘ঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে । যখন ইয়ারমুকের জিহাদের পর মুসলমানগণ দমিশকের সন্নিকটে মারাজাছ ছুফ্ফার-এর জিহাদে লিপ্ত, এই সময়ে উনাদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় । বিবাহ শেষে হযরত খালিদ বিন সা‘ঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বাসর যাপন করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন : যদি শত্র“ বাহিনীকে আল্লাহ পাক পরাস্ত করা পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করতেন, তবে উত্তম হতো । তখন হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন : আমার মন বলছে, আমি এই জিহাদে শহীদ হব । তখন হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন: তা হলে আপনার আকাঙ্খা অনুযায়ী বাসর যাপন করুন ।  অত:পর আছ-ছুফ্ফার এলাকার অন্তর্গত একটি পুলের নিকট একটি তাঁবুতে  উনাদের বাসর রাত্র  উদযাপিত হয় ।  অত:পর যে পুলের নিকটে উনাদের বাসর উদযাপিত হয় সেই পুলের নাম হয় “ক্বানতারা উম্মে হাকীম (উম্মে হাকীমের পুল)” । এখানেই ভোর বেলা উনাদের বিবাহের ওলীমা অনুষ্ঠানের খাওয়া দাওয়া স¤পন্ন করা হয় । খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর পরই রুমীয় শত্র“ সৈন্য মুসলমানদেরকে আক্রমণ করে বসে । উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয় । অনতিবিলম্বে হযরত খালিদ বিন সা‘ঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদে  ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বীর বিক্রমে জিহাদ করতে করতে শাহাদত বরণ করেন ।  জিহাদে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন ।  হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তখনও নববধুর সাজে । হাতে মেহেদীর রং, দেহে সুগন্ধি ।  যে তাঁবুতে তিনি উনার স্বামীর সাথে বাসর রাত উদযাপন করেছেন, তার একটি খুঁটি উঠিয়ে হাতে তুলে নেন । সেই তাঁবুর পাশেই রোমাণ সৈনিকদের সাথে জিহাদে লিপ্ত হন এবং সেই খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে সেদিন  সাত জন রোমান সৈন্যকে তিনি হত্যা করেন। সুবহানাল্লাহ।               (উসুদুল গাবা, ইছাবা)।
                                                                                                        
    হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আবার বিধবা হয়ে মদীনা শরীফে ফিরে আসেন । অত:পর খলীফা হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে উনার বিবাহ হয় এবং এই সংসারে উনার রেহেম শরীফে হযরত ফাতিমা বিনতে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহা-উনার বিলাদত শরীফ হয় । হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার ভাই হযরত যায়দ ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার পুত্রের সাথে হযরত ফাতিমা বিনতু উমর ফারুক রহমতুল্লাহি আলাইহা-উনার বিবাহ হয়  (আত-তাবারী)।

    হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বিছাল শরীফের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা না গেলেও বিভিন্ন ঘটনার আলোকে বুঝা যায়, তিনি উনার স্বামী হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার জীবদ্দশায় উনারই খিলাফতকালে মদীনা শরীফে বিছাল শরীফ লাভ করেন । কেউ কেউ উনার বিছাল শরীফের  তারিখ হিজরী ১৪ সন বলেছেন ।  (উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবারী, সীরাত গ্রন্থাবলী)

    হযরত উম্মে হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার জীবনী মুবারকে অতুলনীয় সাহসিকতা ও আল্লাহ পাক-উনার উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় ।  জিহাদের ময়দানে নিজ স্বামী হযরত ইকরিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে হারিয়েও তিনি সাহস হারা হন নি । তিনি জিহাদের ময়দানেই পূণরায় বিবাহিত হলেন এবং বিবাহ উপলক্ষে ওলীমা শেষে স্বয়ং জিহাদে অংশ গ্রহণ করে সাত জন রুমীয় সৈন্যকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন ।  সুবহানাল্লাহ !

    পর্যালোচনা

    মহিলা ছাহাবীদের পর্দ্দা পালন : মহিলা ছাহাবী সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং উনাদের জীবনী মুবারক আলোচনায় একটি  উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, হিজরী ৫ম সনে জিলক্বদ মাসে পর্দা পালন ফরয করা হয় । এ সময়ের মধ্যে বড় বড় জিহাদ সমূহ যেমন বদর, উহুদ ও খন্দক সমাপ্ত হয় ।  এসব জিহাদে অনেক মহিলা ছাহাবী অংশ গ্রহণ করেছেন । সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে এবং উনার তত্ত্বাবধানে থেকে মহিলা ছাহাবীগণ এ সব জিহাদে আহত ছাহাবীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, সরাসরি পুরুষদের ন্যায় অস্ত্র চালনা করেন নি।  তবে ব্যতিক্রম হিসাবে কিছু কিছু মহিলা ছাহাবী অস্ত্র শস্ত্র ও ঢাল তলোয়ার সহ জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন, কঠিন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতিতে।    ৫ম হিজরী সনের জিলক্বদ মাসে পর্দ্দার নির্দেশ জারী হওয়ার পর মহিলাগণ জিহাদের ময়দানে এবং অন্যান্য সময় সর্বাবস্থায় শরঈ পর্দ্দা পালন করেছেন । অনেক হাদীছ শরীফ থেকে এর প্রমাণ মিলে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,একটি হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, একবার রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপস্থিতিতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম উনারা পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন, এমন সময় অন্ধ ছাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেন । উনারা বলেন যে, এই ছাহাবী তো অন্ধ। তখন হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন : আপনারা তো অন্ধ নন ।  তখন উনারা সেখান থেকে সরে পর্দ্দার অন্তরালে চলে যান ।

    মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ্ন্নুা উনাদের যেসব সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে এবং কতিপয় মহিলা ছাহাবীর  সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক আলোচনা করা হয়েছে, তা থেকে স্পষ্টত: প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। উনারা জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন, কিচু কিছু ক্ষেতে পুরুষদের ন্যায় বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন, পুরুষদের উৎসাহ প্রদান করেছেন । এতদ্ব্যতীত উনারা পারিবারিক খিদমত, জ্ঞান চর্চা ও অন্যান্য বিষয়ে মহিলাদের আদর্শ হিসাবে বিভিন্ন বিষয়ে নজির  স্থাপন করেছেন এবং  ইবাদত-বন্দেগীতে পুরুষ ছাহাবীদের ন্যায় রিয়াযত মুশাক্কাতও  করেছেন।  উনারা দীন ইসলামের শুরুতে ইহার ভিত্তি মজবুত করেছেন এবং পরবর্তীতে সমস্ত উম্মতে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের শিক্ষাদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন । উনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান ছিল দ্বীন ইসলাম প্রচার । ইসলামের প্রারম্ভ কাল থেকে এই বিষয়ে মহিলা ছাহাবীদের উজ্জ্বল প্রচেষ্টা লক্ষ্মণীয় । হযরত উম্মে শুরাইক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একজন মহিলা ছাহাবী যিনি মক্কা শরীফে ইসলামের শুরুতে গোপনে মহিলা ছাহাবীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। কুরাইশরা যখন সেই সংবাদ জানতে পারল উনাকে তারা মক্কা শরীফ থেকে বের করে দেয় (উসুদুল গাবা)। অত:পর মদীনা শরীফে উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের তা’লীমী হালকায় বহু মহিলা ছাহাবী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন এবং উনারা দ্বীন ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন । তম্মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রশিক্ষণ-প্রাপ্ত হযরত উমরা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত ছফিয়া বিনতে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত আয়েশা বিনতে তাহলা রহমতুল্লাহি আলাইহা প্রমূখ মহিলা তাবেয়ীর নাম উল্লেখযোগ্য ।

    এটা সর্বজন বিদিত যে, নবী-রসুল আলাইহিমুস সালামগণের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ । ছাহাবা ও ছাহাবিয়াগণের মধ্যে মর্যাদা হিসাবে    স্তরভেদ থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তী যুগের কোন ব্যক্তিই তিনি যত বড় জ্ঞানীগুনী, সাধক, ওলী, দরবেশ হোন না কেন, কেউই উনাদের সম-মর্যাদা লাভ করতে পারবেন না । এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ এবং মুসলিম উ¤মাহর কোন দ্বিমত্ নেই ।  হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, পুরুষ হোক, মহিলা হোক, সকলই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বরকতময় ছোহবতে ধন্য হয়ে উনার অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক-উনার এতটুকু সন্তুষ্টি হাছিল করেছেন যে, উনারা আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে মাহ্ফুয  এবং সর্ব প্রকার সমালোচনার উর্ধ্বে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুসরনীয় ও অনুকরণীয় হয়েছেন। মূলত: যেহেতু উনাদের উপর স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন, উনাদের অনুসরণ স্বয়ং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-উনারই অনুসরণের শামিল হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। ছ্বুহানাল্লাহ !

    বর্তমান যামানায় উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম  হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং মহিলা ছাহাবী উনাদের সুযোগ্য ক্বায়েম-মক্বাম এবং পূর্ণ মিছদাক।  তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সম্মানিত আওলাদ।  আবার আওলাদে রসুল, মুজাদ্দিদে আ’যম আমাদের মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলিয়া। হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জাহেরী ও বাত্বেনী ইলেমের ভান্ডার থেকে সার্বক্ষণিক রুহানী ফয়েজে ফয়েজাব হয়ে খাছ ও ’আম সমস্ত মহিলাদের মধ্যে তিনি দরস, তাদরিস, তা’লীম-তালক্বীন ও ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ দিয়ে তাদেরকে ওলী-আল্লাহ হিসাবে ও আদর্শ নারী হিসাবে গড়ে তুলছেন। সুবহানাল্লাহ !

    সারা পৃথিবীতে খালেছ পর্দ্দার মধ্যে রেখে মহিলাদের জন্য কোন আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই বললেনই চলে। আমাদের দেশের নামধারী মহিলা মাদ্রাসাগুলি পুরুষ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত। তাছাড়া এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাছাউফ শিক্ষার কোন ব্যবস্থাই নেই । ফিক্বাহের ইলেমের শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর কোন কোন স্থানে পাওয়া গেলেও মহিলা ছাহাবীদের আদর্শে খালেছ সুন্নতের অনুসরণে ফিক্বাহ ও তাছাওফ শিক্ষা ব্যবস্থা সম্বলিত কোন মহিলা মাদ্রাসার অস্তিত্ব আদৌ নেই।  আমাদের দেশের তথাকথিত সুন্নী মাদ্রাসাগুলিও  এখন বেপর্দ্দায় ভরে গেছে, স্কুল কলেজের ন্যায় ছাত্র-ছাত্রি, শিক্ষক শিক্ষিকা একত্র সমাবেশ করে বেপর্দ্দেগী ও বেহায়াপণায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।  সৌদি আরবে মহিলাদের জন্য মহিলাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পৃথক মাদ্রাসা ব্যবস্থা রয়েছে সত্য, কিন্তু সেখানে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের পাশাপাশি  শিক্ষা দেয়া হয় ছলফী ও কাট্টা ওহাবী আক্বীদা, যা ঈমান নষ্টের কারণ। আর সেখানে তাছাউফ শিক্ষার কোন ব্যবস্থাই নেই।

    সারা পৃথিবীতে মহিলাদের জন্য মহিলা ছাহাবীদের অনুসরণে এবং সুন্নতের অনুসরণে খালেছ ফিক্বহী ও তাছাউফ সংশ্লিষ্ট রুহানী তা’লীমের খুব বেশী প্রয়োজন । মহিলাগণই হচ্ছেন উনাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক । নিজেরা বেপর্দ্দেগী ও শরীয়ত বিগহৃত কাজে লিপ্ত থাকার কারণে বর্তমান যামানায় মহিলাগণ উনাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারছেন না। সেইজন্য অধিকাংশ তথাকথিত ভদ্র-পরিবারের সন্তান-সন্ততিগণ সন্ত্রাসী ও আদব-বিবর্জিত সন্তান সন্ততিতে পরিণত হচ্ছে।  এই বেপর্দ্দেগী বেহায়াই শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে এখন ছেয়ে গেছে । কেউ হজ্জে গেলে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলে । ইন্দোনেশিয়ার পুরুষ মহিলাগণ অল্প বয়সেই হজ্জ করে থাকে । বোরকা পরে থাকে, কিন্তু চেহারা, হাত, পা খোলা থাকে । পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মহিলাগণ  যারা হ্জ্জ করতে আসে, কেউ কেউ বোরকা পরিধান করলেও চেহারা খোলা রাখে। একমাত্র সওদী মেয়েরা দেখা যায় কাল বোরকা পরে এবং হাত পায়ে মোজা ব্যবহার করে থাকে । কিন্তু আমরা শুনেছি, তাদের পারিবারিক অঙ্গনে পর্দ্দা নেই,  কেননা সেখানে টিভি, ভিসিআর, নাচ গান ইত্যাদিতে ভরপুর । তবে তাদের পারিবারিক পরিবেশে বাইরের লোক যেতে পারে না ।

    সত্যিকার শরঈ পর্দ্দার বাস্তব নমুনা একমাত্র মুজাদ্দিদে আযম আমাদের হযরত মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলে বায়ত শরীফেই রয়েছে । উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম শরীয়ত সম্মত খালেছ পর্দ্দার মধ্যে একটি আদর্শ বালিকা মাদ্রাসা প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করছেন, যা আদর্শ ও উচ্চ-শিক্ষিতা মহিলা মু’য়াল্লিমগণ দ্বারা পরিচালিত। তিনি সব মহিলা শিক্ষিকা ও ছাত্রিদেরকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের শিক্ষায় শিক্ষিতা করে তুলছেন, তদুপরি বহিরাগত ’আম মহিলাদেরকেও নিয়মিতভাবে তা’লীম তালক্বীন ও তাছাওফের শিক্ষায় শিক্ষিতা করে তুলছেন। ছুবহানাল্লাহ !  উনার তা’লীমী হালক্বার একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হচ্ছে খালেছ পর্দ্দা পালন । এখানে নাবালিগ ছোট শিশু বাচ্চারাও পর্দ্দা পালন করেন। পাঁচ বছর বয়সের অধিক কোন পুরুষ শিশু এখানে প্রবেশ নিষেধ । হজ্জে গেলেও যে একজন মহিলা চেহারা ঢেকে পর্দ্দার সাথে হজ্জ করতে পারে, সেই সব নিয়ম কানুনও এখানে শিক্ষাদান করা হয়। এখানে পর্দ্দা পালনের একটি ঘটনা সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক থেকে দেয়া যেতে পারে ।  এক হাদীছ শরীফে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন : একবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম পরিবেষ্টিত অবস্থায়) তিনি ইরশাদ মুবারক করেন : ما خير للنساء (মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম কাজ কী) ? হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন: এর উত্তরে আমরা যে কী বলব, তা আমাদের জানা ছিল না । অত:পর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনার নিকট গমন করেন । এই প্রশ্ন উনাকে অবহিত করলে তিনি বলেন : আপনি গিয়ে বলবেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, তারা কোন পুরুষকে দেখবে না এবং কোন পুরুষও তাদেরকে দেখবে না। অত:পর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম তিনি ফিরে এসে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন : কে আপনাকে ইহা শিক্ষা দিয়েছেন ?  তিনি বললেন : হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম । অত:পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন : إنها بضعة منى  (নিশ্চয়ই তিনি আমার শরীর মুবারকের অংশ) । (হেলয়াতুল আওলিয়া) ।  সঠিক পর্দ্দা সম্পর্কে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম যে অভিমত পেশ করেছেন, উহা ছিল উনার জীবনী মুবারকে শরঈ পর্দ্দা পালনের বাস্তব চিত্র, যা শুনে হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশংসা করেছেন ।  এই সুমহান আদর্শই আমাদের পরম সম্মানিত, উম্মুল উমাম, হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার তা’লীমী মজলিসে বাস্তবায়ন করছেন । সকল মহিলাদের জন্য উনার খিদমতে উপস্থিত হয়ে উনার পবিত্র তা’লীমে অংশ গ্রহণ করে ফায়দা হাছিল করা ফরয-ওয়াযিব ।  খালিক, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে এর তৌফিক দান করুন।

    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না-উনাদের ফযীলত মুবারক Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top