মুহাজির শব্দের অর্থ হচ্ছে হিজরতকারী অথবা হিজরতকারিনী । আরবী হিজরা শব্দ যা আমরা বাংলায় হিজরত বলি, এর অর্থ পরিত্যাগ করা, সম্পর্ক ছেদ করা। স্বীয় কু-প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা ও গহিৃত কার্যাবলী পরিত্যাগ করাকেও হিজরত বলা হয়। তবে এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে দারুল কুফর অর্থাৎ যে স্থানে মুসলমানদের পক্ষে ধর্ম-কর্ম পালন করা অসম্ভব, সে স্থান ত্যাগ করে দারুল ইসলাম অর্থাৎ যে স্থানে ধর্মীয় বিধি বিধান সমূহ নির্বিঘেœ পালন করা যায়, এমন স্থানে চলে যাওয়া। ছাহাবী অর্থ হচ্ছে সঙ্গী, এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে যিনি ঈমানের সাথে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, উনাকেই ছাহাবী বলা হয় । ছাহাবী পুরুষ ও মহিলা উভয় হতে পারেন।
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-উনাদের ফযীলত
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা সব ছাহাবী-উনাদের বেমেছাল ফযীলত উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
وَالسَّابِقُوْنَ الْأوَّلُوْنَ مِنَ المُهَاجِرِيْنَ وَ الْأنْصَارِ وَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإحْسَانٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُمْ –
(অর্থ: মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম অগ্রবর্তী দল, এবং যাঁরা সৎ কর্মের সাথে উনাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট )। (সুরা তওবা/১০০ শুধু মুহাজির ছাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করেও এক আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে :-
لِلْفُقَرَاء الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ أُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَ أمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِنَ اللهِ وَ رِضْوَانًا وَ يَنْصُرُوْنَ اللهَ وَ رَسُوْلَهُ أُؤلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ-
(অর্থ: ঐসব দরিদ্র মুহাজিরগণ উনাদের জন্য, যাঁদেরকে আপন গৃহ ও সম্পদ থেকে উৎখাত করা হয়েছে, উনারা আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করেন, আর উনারা আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য করেন, উনারাই সত্যবাদী)। (সুরা হাশর/৮) সুবহানাল্লাহ ! হাদীছ শরীফে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
أصحابى كاالنجوم بأيهم إقتديتم إهتديتم –
(অর্থ : আমার ছাহাবীগণ আকাশের নক্ষত্ররাজীর ন্যায়, উনাদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে). সুবহানাল্লাহ !
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা সব ছাহাবী-উনাদের বেমেছাল ফযীলত উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
وَالسَّابِقُوْنَ الْأوَّلُوْنَ مِنَ المُهَاجِرِيْنَ وَ الْأنْصَارِ وَ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإحْسَانٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُمْ –
(অর্থ: মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম অগ্রবর্তী দল, এবং যাঁরা সৎ কর্মের সাথে উনাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট )। (সুরা তওবা/১০০ শুধু মুহাজির ছাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করেও এক আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে :-
لِلْفُقَرَاء الْمُهَاجِرِيْنَ الَّذِيْنَ أُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَ أمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِنَ اللهِ وَ رِضْوَانًا وَ يَنْصُرُوْنَ اللهَ وَ رَسُوْلَهُ أُؤلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ-
(অর্থ: ঐসব দরিদ্র মুহাজিরগণ উনাদের জন্য, যাঁদেরকে আপন গৃহ ও সম্পদ থেকে উৎখাত করা হয়েছে, উনারা আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করেন, আর উনারা আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য করেন, উনারাই সত্যবাদী)। (সুরা হাশর/৮) সুবহানাল্লাহ ! হাদীছ শরীফে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
أصحابى كاالنجوم بأيهم إقتديتم إهتديتم –
(অর্থ : আমার ছাহাবীগণ আকাশের নক্ষত্ররাজীর ন্যায়, উনাদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে). সুবহানাল্লাহ !
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের সমালোচনা, উনাদেরকে মন্দ বলার পরিণাম সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে । এক হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে :-
من سبَّ أصحابى فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين –
(অর্থ : নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার ছাহাবীগণকে দোষারোপ করে তার উপর আল্লাহ পাক উনার, সমস্ত ফেরেশতাগণ উনাদের এবং সমস্ত মানুষেরে লা’নত বা অভিসম্পাত)। (তাবারানী, কানযুল উম্মাল) অন্য এক হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে :-
لا تسبُّوا أصحابى فوا لَّذى نفسى بيده لو أنَّ أحدَكُم أنفق مثلَ أُحُدٍ ما أدركَ مُدَّ أحدِهِمْ و لا نَصيفَهُ –
(بخارى و مسلم شريف)
(অর্থ: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা আমার ছাহাবীগণের নিন্দা করো না। কেননা, ঐ সত্ত্বার কসম যাঁর কুদরতি হাতে আমার প্রান, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করে, তাহলেও আমার ছাহাবীগণ-উনাদের একজনের এক মুদ (অর্থাৎ ১৪ ছটাক) কিংবা এর অর্দ্ধেক অর্থাৎ ৭ ছটাক-এর সমান ব্যয় করার ছওয়াব পর্যন্তও পৌঁছতে পারবে না)। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ). ছুবহানাল্লাহ ! পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের এ সব ইরশাদ মুবারক থেকে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মর্যাদা মর্তবা অনুধাবন করা যায়। এর মধ্যে মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারাও রয়েছেন।
من سبَّ أصحابى فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين –
(অর্থ : নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার ছাহাবীগণকে দোষারোপ করে তার উপর আল্লাহ পাক উনার, সমস্ত ফেরেশতাগণ উনাদের এবং সমস্ত মানুষেরে লা’নত বা অভিসম্পাত)। (তাবারানী, কানযুল উম্মাল) অন্য এক হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে :-
لا تسبُّوا أصحابى فوا لَّذى نفسى بيده لو أنَّ أحدَكُم أنفق مثلَ أُحُدٍ ما أدركَ مُدَّ أحدِهِمْ و لا نَصيفَهُ –
(بخارى و مسلم شريف)
(অর্থ: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা আমার ছাহাবীগণের নিন্দা করো না। কেননা, ঐ সত্ত্বার কসম যাঁর কুদরতি হাতে আমার প্রান, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করে, তাহলেও আমার ছাহাবীগণ-উনাদের একজনের এক মুদ (অর্থাৎ ১৪ ছটাক) কিংবা এর অর্দ্ধেক অর্থাৎ ৭ ছটাক-এর সমান ব্যয় করার ছওয়াব পর্যন্তও পৌঁছতে পারবে না)। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ). ছুবহানাল্লাহ ! পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের এ সব ইরশাদ মুবারক থেকে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মর্যাদা মর্তবা অনুধাবন করা যায়। এর মধ্যে মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারাও রয়েছেন।
হিজরত
এখন আমরা মহিলা ছাহাবীদের হিজরতের বিষয়ে আলোচনা করব, কারণ আলোচনার বিষয় বস্তু হচ্ছে মুহাজির মহিলা ছাহাবী উনাদের ফযীলত ।
এখন আমরা মহিলা ছাহাবীদের হিজরতের বিষয়ে আলোচনা করব, কারণ আলোচনার বিষয় বস্তু হচ্ছে মুহাজির মহিলা ছাহাবী উনাদের ফযীলত ।
প্রাথমিক ইসলামে হিজরত কয়েক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে । প্রথম পর্যায় হচ্ছে হাবশায় (আবিসিনিয়া/ ইথিওপিয়া) প্রথম হিজরত, অত:পর হাবশায় দ্বিতীয় বার হিজরত এবং অত:পর মদীনা শরীফে হিজরত:-
হাবশায় প্রথম বার হিজরত
মক্কা শরীফে কাফির মুশরিকদের জুলুম অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানগণ উনাদেরকে নবুয়ত প্রকাশের ৫ম সনে রজব মাসে সর্বপ্রথম হাবশায় (বা ইথিওপিয়ায়) হিজরত করার অনুমতি দেন । এই প্রথম দলে পুরুষ ছিলেন ১১ জন এবং মহিলা ছিলেন ৪ জন । হিজরতের সংবাদ পেয়ে মক্কা শরীফের মুশরিকগণ উনাদের পশ্চাদ্বাবন করে, কিন্তু তাদের বন্দরে পৌঁছার পূর্বেই হিজরতকারী মুসলমানদের নিয়ে জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে (তাবাকাত). এই দলে হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম এবং উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালামও ছিলেন। হিজরতকারী পুরুষ ও মহিলা সকল ছাহাবী মাহে রজব থেকে মাহে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত নিরাপদে অবস্থান করছিলেন। শাওয়াল মাসে উনারা সংবাদ পেলেন যে, কুরাইশ গোত্রের সকল লোকই মুসলমান হয়ে গিয়েছে এবং মক্কা শরীফে এখন মুসলমানদের নিরাপত্তার আর কোন হুমকি নেই। উনারা সংবাদের সত্যতা যাচাই না করে মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারেন যে, সংবাদটি অসত্য। এতে উনাদের কিছু লোক হাবশায় ফিরে যান এবং কিছু লোক যাঁদের নিরাপত্তার কোন উপায় হয়েছে উনারা মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন। যাঁরা মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন, উনাদের অধিকাংশই তথাকার কোন না কোন নেতার আশ্রয় গ্রহণ করেন। (বালাযুরী). হাবশা থেকে ৩৯ জন মুহাজির ছাহাবী মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন, তম্মধ্যে মহিলা ছিলেন ৬ জন।
মক্কা শরীফে কাফির মুশরিকদের জুলুম অত্যাচার যখন চরমে পৌঁছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানগণ উনাদেরকে নবুয়ত প্রকাশের ৫ম সনে রজব মাসে সর্বপ্রথম হাবশায় (বা ইথিওপিয়ায়) হিজরত করার অনুমতি দেন । এই প্রথম দলে পুরুষ ছিলেন ১১ জন এবং মহিলা ছিলেন ৪ জন । হিজরতের সংবাদ পেয়ে মক্কা শরীফের মুশরিকগণ উনাদের পশ্চাদ্বাবন করে, কিন্তু তাদের বন্দরে পৌঁছার পূর্বেই হিজরতকারী মুসলমানদের নিয়ে জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে (তাবাকাত). এই দলে হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম এবং উনার আহলিয়া হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালামও ছিলেন। হিজরতকারী পুরুষ ও মহিলা সকল ছাহাবী মাহে রজব থেকে মাহে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত নিরাপদে অবস্থান করছিলেন। শাওয়াল মাসে উনারা সংবাদ পেলেন যে, কুরাইশ গোত্রের সকল লোকই মুসলমান হয়ে গিয়েছে এবং মক্কা শরীফে এখন মুসলমানদের নিরাপত্তার আর কোন হুমকি নেই। উনারা সংবাদের সত্যতা যাচাই না করে মক্কা শরীফে ফিরে আসেন। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারেন যে, সংবাদটি অসত্য। এতে উনাদের কিছু লোক হাবশায় ফিরে যান এবং কিছু লোক যাঁদের নিরাপত্তার কোন উপায় হয়েছে উনারা মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন। যাঁরা মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন, উনাদের অধিকাংশই তথাকার কোন না কোন নেতার আশ্রয় গ্রহণ করেন। (বালাযুরী). হাবশা থেকে ৩৯ জন মুহাজির ছাহাবী মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন, তম্মধ্যে মহিলা ছিলেন ৬ জন।
হাবশায় দ্বিতীয় বার হিজরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের প্রথম হিজরতের পর মক্কা শরীফে ফিরে আসলে উনাদের উপর মুশরিকদের জুলুম অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। ফলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদেরকে পূণরায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। ফলে নবুয়ত প্রকাশের ৬ষ্ট সনে উনারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে হাবশায় ফিরে যেতে থাকেন। উনাদের সর্বশেষ দলে ৮৩ জন পুরুষ এবং ১৮ জন মহিলা ছাহাবী ছিলেন। (তাবাকাত)।
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের প্রথম হিজরতের পর মক্কা শরীফে ফিরে আসলে উনাদের উপর মুশরিকদের জুলুম অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। ফলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদেরকে পূণরায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। ফলে নবুয়ত প্রকাশের ৬ষ্ট সনে উনারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে হাবশায় ফিরে যেতে থাকেন। উনাদের সর্বশেষ দলে ৮৩ জন পুরুষ এবং ১৮ জন মহিলা ছাহাবী ছিলেন। (তাবাকাত)।
হাবশায় হিজরতকারী কিছু কিছু ছাহাবী ও ছাহাবিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মদীনা শরীফে হিজরতের পূর্বেই ইনতিকাল করেছিলেন (তাবাকাত). সেখানকার মুহাজির ছাহাবীগণ পরিশেষে হযরত জা’ফর ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ৭ম হিজরী সনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খায়বার অভিযানে প্রস্তুতি গ্রহণকালে মদীনা শরীফে চলে আসেন।
মদীনা শরীফে হিজরত
এখন মদীনা শরীফে হিজরত সম্পর্কে আলোচনা করা যাক । ইহা ছিল সর্বশেষ হিজরত। নবুয়ত প্রকাশের ১৩তম বছর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মদীনা শরীফে হিজরত করার অনুমতি দেন । তখন থেকে মদীনাা শরীফে হিজরত শুরু হয় । অত:পর যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও মদীনা শরীফে হিজরত করেন, অনেক ছাহাবী মক্কা শরীফ থেকে এবং হাবশা থেকে মদীনা শরীফে চলে আসেন । ইনারা এবং অন্যান্য স্থান থেকেও যাঁরা মদীনা শরীফে এসে বসবাস করেন সকলই মুহাজির ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহিলা ছাহাবীগণ উনাদের নিজ নিজ স্বামীদের সাথে হিজরত করেছেন । পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম মদীনা শরীফে হিজরত করেন তিনি হচ্ছেন কুরাইশ বনু মাখযুম গোত্রের হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অত:পর উনার আহলিয়া হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি পরে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন । এই পরিবারের পরে সর্বপ্রথম মদীনা শরীফে মুহাজির পরিবার আগমন করেন বনু আদী বিন কা‘ব-এর হালীফ হযরত আমীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার আহলিয়া । বনু গাণাম ্ইবনে দুদান গোত্র, যাঁরা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হিজরতের পর পরই নারী-পুরুষ সকলেই হিজরত করে মদীনা শরীফে চলে আসেন । অত:পর ক্রমাগত বিভিন্ন স্থান থেকে মুহাজির ছাহাবী ও ছাহাবীয়াগণ মদীনা শরীফে আসতে থাকেন এবং এখানকার বাসিন্দা হয়ে যান ।
এখন মদীনা শরীফে হিজরত সম্পর্কে আলোচনা করা যাক । ইহা ছিল সর্বশেষ হিজরত। নবুয়ত প্রকাশের ১৩তম বছর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মদীনা শরীফে হিজরত করার অনুমতি দেন । তখন থেকে মদীনাা শরীফে হিজরত শুরু হয় । অত:পর যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও মদীনা শরীফে হিজরত করেন, অনেক ছাহাবী মক্কা শরীফ থেকে এবং হাবশা থেকে মদীনা শরীফে চলে আসেন । ইনারা এবং অন্যান্য স্থান থেকেও যাঁরা মদীনা শরীফে এসে বসবাস করেন সকলই মুহাজির ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহিলা ছাহাবীগণ উনাদের নিজ নিজ স্বামীদের সাথে হিজরত করেছেন । পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম মদীনা শরীফে হিজরত করেন তিনি হচ্ছেন কুরাইশ বনু মাখযুম গোত্রের হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অত:পর উনার আহলিয়া হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি পরে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন । এই পরিবারের পরে সর্বপ্রথম মদীনা শরীফে মুহাজির পরিবার আগমন করেন বনু আদী বিন কা‘ব-এর হালীফ হযরত আমীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার আহলিয়া । বনু গাণাম ্ইবনে দুদান গোত্র, যাঁরা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হিজরতের পর পরই নারী-পুরুষ সকলেই হিজরত করে মদীনা শরীফে চলে আসেন । অত:পর ক্রমাগত বিভিন্ন স্থান থেকে মুহাজির ছাহাবী ও ছাহাবীয়াগণ মদীনা শরীফে আসতে থাকেন এবং এখানকার বাসিন্দা হয়ে যান ।
মুহাজির-আনছার ভাতৃত্ব সম্পর্ক
মুহাজির মহিলা ছাহাবীদের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হলে মুহাজির-আনছার সম্পর্ক সম্বন্ধে কিছুটা আলোচনা প্রয়োজন । যাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে হিজরত করে মদীনা শরীফে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন, উনারা মুহাজির ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন । আর যাঁরা মদীনা শরীফের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং উনারা আনছার ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন । হিজরতের পর পরই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহাজির ও আনছার ছাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক করে দেন । এ সম্পর্ক হচ্ছে একজন মুহাজিরকে একজন আনছার ছাহাবী থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাহায্য করা । যে সব মহিলা ছাহাবী উনাদের স্বামীদের সাথে হিজরত করেছেন, পারিবারিকভাবে মুহাজির-আনছার ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কের কারণে উনারাও অনুরূপ সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন । ছুবহানাল্লাহ !
মুহাজির মহিলা ছাহাবীদের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হলে মুহাজির-আনছার সম্পর্ক সম্বন্ধে কিছুটা আলোচনা প্রয়োজন । যাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে হিজরত করে মদীনা শরীফে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন, উনারা মুহাজির ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন । আর যাঁরা মদীনা শরীফের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং উনারা আনছার ছাহাবী বা ছাহাবিয়া হিসাবে পরিচিত হন । হিজরতের পর পরই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহাজির ও আনছার ছাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক করে দেন । এ সম্পর্ক হচ্ছে একজন মুহাজিরকে একজন আনছার ছাহাবী থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাহায্য করা । যে সব মহিলা ছাহাবী উনাদের স্বামীদের সাথে হিজরত করেছেন, পারিবারিকভাবে মুহাজির-আনছার ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কের কারণে উনারাও অনুরূপ সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন । ছুবহানাল্লাহ !
মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণের হিজরতের কারণে কষ্টভোগ
এখন মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ হিজরতের কারণে যে সব কষ্টভোগ করেছেন, এ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করব। সকল মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণই হিজরতের কারণে মুহাজির পুরুষ ছাহাবীদের ন্যায় অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
এখন মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ হিজরতের কারণে যে সব কষ্টভোগ করেছেন, এ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করব। সকল মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণই হিজরতের কারণে মুহাজির পুরুষ ছাহাবীদের ন্যায় অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
মহিলা ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদার অধিকারী, উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যেও কয়েকজন মুহাজির ছিলেন যাঁরা তুলনামূলক ভাবে হিজরতের কারণে অনেক বেশী কষ্টভোগ করেছেন, যেমন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম ।
উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পরে সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদার অধিকারিনী মহিলা ছাহাবী আহলে বায়ত শরীফ-উনাদের অন্তর্ভূক্ত বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহেবযাদীগণ উনারাও হিজরত করেছিলেন। তবে উনাদের মধ্যে হযরত যায়নব আলাইহাস সালাম ও হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাদের হিজরত ছিল সবচেয়ে কষ্টকর । সুতরাং উনাদের হিজরতের কিছু বর্ণনা ও আনুষঙ্গিক কিছু ঘটনা আমরা উল্লেখ করছি :-
১। উ¤মুল মু’মিনীন হযরত উ¤েম সালামা আলাইহাস সালাম-উনার হিজরত
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার পিতা আবু উমাইয়া জাহেলী যুগে সফর সঙ্গীদের জন্য পাথেয়-এর ব্যবস্থা করতেন । এজন্য উনাকে زاد الراكب (যাদুর রাকিব অর্থাৎ মুসাফিরের পাথেয়) বলা হতো । সেজন্য আবু উমাইয়ার কন্যা হিসাবে উনার বিশেষ মর্যাদা ছিল । উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম স্বামীর নাম ছিলেন হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । ইসলামের প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করায় উনারা “আছ-ছাবিকুন আল-আউয়ালুন” (প্রথম যুগের মুসলমান)-এর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
নবূয়ত প্রকাশের ৬ষ্ঠ বছর হাবসায় হিজরতের সময় স্বামীর সাথে তিনিও হাবশায় হিজরত করেন । পরিস্থিতি শান্ত হলে উনারা পূণরায় মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করেন । অত:পর পূণরায় মদীনা শরীফে হিজরতের অনুমতি দেয়া হলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছাহাবায় কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের মধ্যে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হুম সর্বপ্রথম রওয়ানা হন । হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনার গোত্রের আত্মীয়-স্বজনগণ উনার পুত্র সালামাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে হযরত উ¤েম সালামা আলাইহাস সালাম-উনার গোত্র বনু মুগীরা উনার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। সুতরাং হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু একাই মদীনা শরীফে চলে যান। এদিকে হযরত উ¤েম সালামা আলাইহাস সালাম আবতাহ প্রান্তরে যে স্থানে উনার স্বামী ও পুত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছিল সেখানে গিয়ে নিজের বেদনা-বিধুর অবস্থার জন্য সারাদিন ক্রন্দন করতেন এবং সন্ধ্যা হলে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতেন। এ ভাবে একাদিক্রমে প্রায় ৭/৮ দিন তিনি ক্রন্দন করতে থাকেন। একদিন বনু মুগীরা গোত্রের উনার এক চাচাতো ভাই উনার করুন অবস্থা দেখে উনার হৃদয় বিগলিত হলো। তিনি বনু মুগিরার নিকট গিয়ে বললেন : তোমরা এটা কেমন অমানবিক কাজ করলে ? উনার সন্তানটিও কেড়ে নিলে, উনার স্বামী থেকেও উনাকে পৃথক করলে ? অবশেষে বনু মুগিরা দয়া পরবস হয়ে উনার সন্তান উনার নিকট ফিরিয়ে দেয় এবং উনাকে মদীনা শরীফ যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে । তিনি উনার শিশু সন্তান নিয়ে একা মদীনা শরীফ রওয়ানা হন । ছুবহানাল্লাহ ! (সীরাতুন্নাবী, ইবনে হিসাম, হায়াতুচ্ছাহাবা). হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার হিজরত সম্পর্কে বর্ণনা করেন :-
…. হিজরতের উদ্দেশ্যে আমি আমার একটি উটে আরোহণ করলাম, আমার কোলে ছিল আমার পুত্র সালামা। আমি আমার স্বামীর সন্ধানে মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হলাম । আমার সঙ্গে (আমার সন্তান ছাড়া) আল্লাহ পাক-উনার আর কোন সৃষ্ট জীব ছিল না । মনে মনে ধারণা করলাম, পথে যদি কাউকে পাই তাকে অনুরোধ করব আমাকে যেন আমার স্বামীর নিকট পৌঁছিয়ে দেয় । আমি যখন তান‘ঈম পর্যন্ত পৌঁছলাম, বনু আবদুদ দার গোত্রের হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হন নি)-উনার সাক্ষাত পেলাম । তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : হে আবু উমাইয়ার কন্যা ! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমি বললাম : আমি মদীনা শরীফে আমার স্বামীর নিকট যাচ্ছি । তিনি বললেন : আপনার সাথে কি কেউ আছেন ? আমি বললাম: আল্লাহ পাক-উনার কসম ! আল্লাহ পাক ও আমার এ সন্তান ব্যতীত আমার সাথে আর কেউ নেই । তিনি বললেন : আল্লাহ পাক-উনার কসম ! আপনি এভাবে পরিত্যক্ত হতে পারেন না। তারপর তিনি আমার উটের লাগাম ধারণ করলেন এবং আমার উট পরিচালনা করতে লাগলেন । আল্লাহ পাক-উনার কসম ! আমি কোন আরবীয়কে উনার ন্যায় এমন ভদ্র ও শিষ্টাচারী ব্যক্তি দেখি নি । যখন কোন মনযিলে পৌঁছতেন, আমাকে অবতরণ করিয়ে নিজে দূরে কোন গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন । যাওয়ার সময় হলে আমার উটের নিকট আসতেন, নিজে দূরে সরে গিয়ে বলতেন “আপনি উটে আরোহণ” করুন । অত:পর আমি যখন উটে আরোহণ করতাম এবং ঠিক হয়ে বসতাম, তিনি এসে আমার উটের লাগাম ধরতেন এবং অন্য মনযিল না আসা পর্যন্ত ইহাকে পরিচালনা করতেন । এভাবে আমরা মদীনা শরীফের নিকটবর্তী হলাম । যখন কূবার বনু ‘আমর ইবনু ‘আওফ-এর গ্রাম দৃষ্টিপথে আসল, তিনি বললেন : আপনার স্বামী এই গ্রামে অবস্থান করছেন । প্রকৃত পক্ষে হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই গ্রামেই অবস্থান করছিলেন । মহান আল্লাহ পাক-উনার অনুগ্রহে আমি গ্রামে প্রবেশ করলাম । হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলেন । ছুবহানাল্লাহ ! এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই পূত:-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী হযরত উছমান বিন ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বংশধরগণের হাতে জাহেলী যুগেও পবিত্র কা‘বা শরীফ উনার পবিত্র চাবী মুবারক সংরক্ষিত রাখা হতো । পরবর্তীতে তিনি একজন ছাহাবী হয়েছিলেন । মক্কা শরীফ বিজয়ের পরেও হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই চাবী মুবারক উনার হাতে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই পবিত্র চাবী সংরক্ষণের সম্মানজনক দায়িত্ব আপনার বংশের লোকদের উপরই অর্পিত থাকবে। ছুবহানাল্লাহ !
২. উম্মুল মু’মিনীন হযরত উ¤েম হাবিবাহ আলাইহাস সালাম
পরিচিতি
উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) কুরাঈশ কাফিরদের নেতা ছিলেন।
উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) কুরাঈশ কাফিরদের নেতা ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত
উনার প্রথম বিবাহ হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাসের সঙ্গে । অত:পর ইসলামের প্রাথমিক যুগে উভয়ে একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম উনার স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন । হাবশায় অবস্থানকালে উনার স্বামী উবায়দুল্লাহ ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টান হয়ে যায় । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম তাকে ত্যাগ করত: সেখানে পৃথকভাবে জীবন যাপন করতে থাকেন। স্বামীর বহু চাপ সৃষ্টি সত্বেও তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগে রাজী হন নি । ইসলাম ত্যাগ করে উবায়দুল্লাহ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং শীঘ্রই মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় । নাউজু বিল্লাহ !
উনার প্রথম বিবাহ হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাসের সঙ্গে । অত:পর ইসলামের প্রাথমিক যুগে উভয়ে একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম উনার স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন । হাবশায় অবস্থানকালে উনার স্বামী উবায়দুল্লাহ ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টান হয়ে যায় । হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম তাকে ত্যাগ করত: সেখানে পৃথকভাবে জীবন যাপন করতে থাকেন। স্বামীর বহু চাপ সৃষ্টি সত্বেও তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগে রাজী হন নি । ইসলাম ত্যাগ করে উবায়দুল্লাহ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং শীঘ্রই মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় । নাউজু বিল্লাহ !
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিকাহ মুবারক
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদিনা শরীফে চলে আসেন । তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাসের ইসলাম ত্যাগ এবং হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম-উনার ঈমানী দৃঢ়তা ও আশ্রয়হীনতার উপরোক্ত সংবাদ পান । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিকাহ মুবারকের প্রস্তাব দিলে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মধ্যস্থতায় এই বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় । সুবহানাল্লাহ ! উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি। উনার নিকাহ মুবারকের কথা শুনে বলেছিলেন : এ তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফু অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত বংশ হিসাবে উনাদের সমতা, যা প্রত্যাখ্যান করা যায় না।
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদিনা শরীফে চলে আসেন । তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাসের ইসলাম ত্যাগ এবং হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম-উনার ঈমানী দৃঢ়তা ও আশ্রয়হীনতার উপরোক্ত সংবাদ পান । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিকাহ মুবারকের প্রস্তাব দিলে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মধ্যস্থতায় এই বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় । সুবহানাল্লাহ ! উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি। উনার নিকাহ মুবারকের কথা শুনে বলেছিলেন : এ তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফু অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত বংশ হিসাবে উনাদের সমতা, যা প্রত্যাখ্যান করা যায় না।
৩. হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনার হিজরত
তিনি ছিলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রথমা ছাহেবযাদী, যিনি মক্কা শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার রেহেম শরীফে বিলাদত শরীফ লাভ করেন ।
বিবাহ মুবারক
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বেই অল্প বয়সে স্বীয় খালাত ভাই হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বেই অল্প বয়সে স্বীয় খালাত ভাই হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।
স্বামী হযরত আবুল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বন্দী দশা থেকে মুক্তি
সায়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করেন, তখন হযরত যায়নব আলাইহাস সালাম উনার স্বামীর সাথে তায়েফে ছিলেন । উনার স্বামী হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি বিধায় বদরের জিহাদের সময় তিনি কাফিরদের পক্ষে যুদ্ধ করেন এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বন্দী করেন ।
সায়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করেন, তখন হযরত যায়নব আলাইহাস সালাম উনার স্বামীর সাথে তায়েফে ছিলেন । উনার স্বামী হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি বিধায় বদরের জিহাদের সময় তিনি কাফিরদের পক্ষে যুদ্ধ করেন এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বন্দী করেন ।
বদরের জিহাদে বন্দীগণকে মুসলমানদের নিকট হতে মুক্ত করার জন্য বন্দীদের নিকট আত্মীয়-স্বজন মুক্তিপণ দিতে লাগল । হযরত যায়নব আলাইহাস সালাম-উনার নিকট উনার মাতা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম প্রদত্ত ইয়ামানী ‘আকীক পাথরের একটি হার ছিল । হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার মুক্তিপণ স্বরূপ উনার ভাই ‘আমর ইবনু’র রাবী-এর মাধ্যমে হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম এই হারটি প্রেরণ করেন । এই হার দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মনে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার স্মৃতি উদয় হলো, উনার অন্তর বিগলিত হয়ে পড়ে এবং চক্ষুদ্বয় অশ্র“ ভারাক্রান্ত হয় । তিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলেন । উনারা হারখানি ফেরত দিয়ে হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে মুক্তি দিতে সুপারিশ করলেন । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারখানি ফেরত দিলেন এবং উনাকে এই শর্তে মুক্তি দিলেন যে, মক্কা শরীফে পৌঁছে তিনি হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দিবেন।
হিজরত
উনার হিজরত সম্পর্কে সীরত গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এই যে, হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শর্তমত মক্কা শরীফে পৌঁছেই উনার ভাই কিনানা ইবনে রাবী’-উনার সাথে হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। পথিমধ্যে কাফিরদের আক্রমণের ভয় ছিল বিধায় কিনানা তীর ধনুক সঙ্গে নিলেন এবং হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে একটি উটের পিঠে আরোহণ করিয়ে নিজে উহার রশি ধরে মদীনা শরীফ রওয়ানা হলেন। দুবৃত্ত কাফিরগণ এই খবর শুনে উনাদের অনুসরণ করে। উনারা যী তুওয়া নামক স্থানে পৌঁছতেই কাফিরগণ উনাদেরকে আক্রমণ করে । হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম উটের উপর হাওদার মধ্যে বসেছিলেন । তিনি ছিলেন গর্ভবতী । হুবার ইবনে আসওয়াদ নামক এক পাষন্ড হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে লক্ষ্য করে বর্শা নিক্ষেপ করলে তিনি উটের উপরস্থিত হাওদা হতে নীচে ভূমিতে একটি পাথরের উপর পড়ে যান । ফলে উনি ভীষণভাবে আঘাত পান এবং উনার গর্ভপাত হয়ে যায় । কিনানা ধনুকে তীর স্থাপন করে বললেন : এইবার কেউ নিকটে আসতে চেষ্টা করলে এই তীর নিক্ষেপে তাকে আমি হত্যা করব । ফলে লোকজন ভয়ে সরে পড়ল । হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হন নি) কয়েকজন কুরাইশ নেতাসহ উনার নিকট আগমন করে বললেন : ভ্রাতু®পুত্র ! তীর গুটিয়ে লও । আমাদের কিছু কথা আছে। কিনানা তার অনুরোধে তীর গুটিয়ে নিলেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাতে আমাদের কিরূপ নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে উহা তোমার ভালভাবে জানা আছে। এখন যদি তুমি প্রকাশ্যে উনার ছাহেবযাদীকে আমাদের স¤মুখ থেকে নিয়ে যাও, তবে লোক আমাদেরকে দুর্বল মনে করবে । হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে আটক রাখার আমাদের কোন প্রয়োজন নেই । গন্ডগোল থামলে গোপনে তুমি উনাকে নিয়ে যেয়ো। কিনানা ইহাতে সম্মত হয়ে হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং কয়েক দিন পর রাত্রে উনাকে নিয়ে মদীনা শরীফে রওয়ানা হন । এইদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূর্বেই হযরত যায়দ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে একজন সঙ্গী সহ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি এবং উনার এই সঙ্গী বাত্নে ইয়াজিজ নামক স্থানে অপেক্ষা করছিলেন । কিনানা হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে উনাদের নিকট সোপর্দ করলেন । অত:পর উনারা উনাকে মদীনা শরীফে নিয়ে আসলেন । সুবহানাল্লাহ !
উনার হিজরত সম্পর্কে সীরত গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এই যে, হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শর্তমত মক্কা শরীফে পৌঁছেই উনার ভাই কিনানা ইবনে রাবী’-উনার সাথে হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। পথিমধ্যে কাফিরদের আক্রমণের ভয় ছিল বিধায় কিনানা তীর ধনুক সঙ্গে নিলেন এবং হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে একটি উটের পিঠে আরোহণ করিয়ে নিজে উহার রশি ধরে মদীনা শরীফ রওয়ানা হলেন। দুবৃত্ত কাফিরগণ এই খবর শুনে উনাদের অনুসরণ করে। উনারা যী তুওয়া নামক স্থানে পৌঁছতেই কাফিরগণ উনাদেরকে আক্রমণ করে । হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম উটের উপর হাওদার মধ্যে বসেছিলেন । তিনি ছিলেন গর্ভবতী । হুবার ইবনে আসওয়াদ নামক এক পাষন্ড হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে লক্ষ্য করে বর্শা নিক্ষেপ করলে তিনি উটের উপরস্থিত হাওদা হতে নীচে ভূমিতে একটি পাথরের উপর পড়ে যান । ফলে উনি ভীষণভাবে আঘাত পান এবং উনার গর্ভপাত হয়ে যায় । কিনানা ধনুকে তীর স্থাপন করে বললেন : এইবার কেউ নিকটে আসতে চেষ্টা করলে এই তীর নিক্ষেপে তাকে আমি হত্যা করব । ফলে লোকজন ভয়ে সরে পড়ল । হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হন নি) কয়েকজন কুরাইশ নেতাসহ উনার নিকট আগমন করে বললেন : ভ্রাতু®পুত্র ! তীর গুটিয়ে লও । আমাদের কিছু কথা আছে। কিনানা তার অনুরোধে তীর গুটিয়ে নিলেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাতে আমাদের কিরূপ নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে উহা তোমার ভালভাবে জানা আছে। এখন যদি তুমি প্রকাশ্যে উনার ছাহেবযাদীকে আমাদের স¤মুখ থেকে নিয়ে যাও, তবে লোক আমাদেরকে দুর্বল মনে করবে । হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে আটক রাখার আমাদের কোন প্রয়োজন নেই । গন্ডগোল থামলে গোপনে তুমি উনাকে নিয়ে যেয়ো। কিনানা ইহাতে সম্মত হয়ে হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং কয়েক দিন পর রাত্রে উনাকে নিয়ে মদীনা শরীফে রওয়ানা হন । এইদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূর্বেই হযরত যায়দ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে একজন সঙ্গী সহ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি এবং উনার এই সঙ্গী বাত্নে ইয়াজিজ নামক স্থানে অপেক্ষা করছিলেন । কিনানা হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনাকে উনাদের নিকট সোপর্দ করলেন । অত:পর উনারা উনাকে মদীনা শরীফে নিয়ে আসলেন । সুবহানাল্লাহ !
উনার স্বামী হযরত আবু’ল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৭ম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মদীনা শরীফে হিজরত করলে হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনার সাথে পুনরায় উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয (ইবনে হিশাম). বিবাহ মুবারকের পর হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম বেশী দিন জীবিত ছিলেন না। উটের হাওদা থেকে পড়ে আঘাত-প্রাপ্ত হওয়ার কারণে এবং গর্ভপাত হওয়ার সময় যে প্রচূর রক্তক্ষরণ হয়েছিল সে সব কারণে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন । আর সেই রোগেই হিজরী ৮ম সনের প্রথম দিকে তিনি মদীনা শরীফে বিছাল শরীফ লাভ করেন । তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল মাত্র ৩০ বা ৩১ বছর । লাশ মুবারক গোসল সমাপনের পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ইযার মুবারক কাফনের নীচে পরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। তিনি নিজেই জানাযা পড়ান এবং কবর শরীফে অবতরণ করে লাশ মুবারক মাটিতে শোয়ায়ে দেন । তখন উনার চেহারা মুবারকে দু:খ ও বেদনার করুণ ছাপ সুস্পষ্টরূপে ভেসে উঠেছিল এবং চক্ষু হতে অশ্র“পাত হচ্ছিল । (উসুদুল গাবা) ।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন :-
هِىَ خَيْرُ بَناَتِىْ أُصيْبَتْ فِيَّ -
هِىَ خَيْرُ بَناَتِىْ أُصيْبَتْ فِيَّ -
(তিনি ছিলেন আমার উত্তম মেয়ে, যাঁকে আমার কারণে (হিজরতের সময়) অপরিসীম কষ্ট দেয়া হয়েছে) (হায়াতুচ্ছাহাবা) . সুবহানাল্লাহ !
সূত্র সমূহ : উসুদুল গাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা, সিয়ারুছ ছাহাবা, হায়াতুচ্ছাহাবা, ইবনে হিশাম
সূত্র সমূহ : উসুদুল গাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা, সিয়ারুছ ছাহাবা, হায়াতুচ্ছাহাবা, ইবনে হিশাম
৪. হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার হিজরত
পরিচিতি
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দ্বিতীয় ছাহেবযাদী । হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম-উনার পরে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম নবুয়ত প্রকাশের সাত বৎসর পূর্বে মক্কা শরীফে বিলাদত শরীফ লাভ করেন ।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দ্বিতীয় ছাহেবযাদী । হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম-উনার পরে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম নবুয়ত প্রকাশের সাত বৎসর পূর্বে মক্কা শরীফে বিলাদত শরীফ লাভ করেন ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নবুয়ত প্রকাশের তৃতীয় বর্ষে হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার সাথে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।
সুখী দা¤পত্য জীবন
হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন পূত-পবিত্র চরিত্রের, ফেরেশ্তা সুলভ চরিত্রের অধিকারী, যিনি কাউকে কষ্ট দেন নি এবং এরূপ লজ্জাশীল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এ ব্যাপারে উনার প্রশংসা করেছেন । তিনি ধনাঢ্য ও দানশীল হওয়ার কারণে স্বগৃহে প্রচূর্যের জীবন যাপন করতেন । হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার জীবনও সেই ধরণের ছিল । উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম যেরূপ স¤পদ ও প্রাচূর্যের ভিতর উনাকে প্রতিপালন করেছিলেন, তেমনি হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালামও অত্যন্ত আরাম আয়েশের মধ্যেই উনাকে রাখেন। হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম পারিবারিক জীবনে উনার প্রতি এরূপ সশ্রদ্ধ ছিলেন যে, উনাদের দা¤পত্য জীবনে উনার সঙ্গে সামান্যতম মনোমালিন্যেরও সৃষ্টি হয় নি । এমন দৃষ্টান্ত দুনিয়াতে খুবই বিরল । হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার এই আদর্শ পারিবারিক জীবনের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সদা সন্তুষ্ট ছিলেন । আরবে প্রবাদ বাক্যের মতই এই উক্তি প্রচলিত ছিল : দ¤পতিদের মধ্যে সর্বোত্তম দ¤পতি, যা কোন মানুষ অবলোকন করেছে, তা হলো হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম ও উনার সম্মানিত স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ ! (শরহে মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন পূত-পবিত্র চরিত্রের, ফেরেশ্তা সুলভ চরিত্রের অধিকারী, যিনি কাউকে কষ্ট দেন নি এবং এরূপ লজ্জাশীল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এ ব্যাপারে উনার প্রশংসা করেছেন । তিনি ধনাঢ্য ও দানশীল হওয়ার কারণে স্বগৃহে প্রচূর্যের জীবন যাপন করতেন । হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার জীবনও সেই ধরণের ছিল । উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম যেরূপ স¤পদ ও প্রাচূর্যের ভিতর উনাকে প্রতিপালন করেছিলেন, তেমনি হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালামও অত্যন্ত আরাম আয়েশের মধ্যেই উনাকে রাখেন। হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম পারিবারিক জীবনে উনার প্রতি এরূপ সশ্রদ্ধ ছিলেন যে, উনাদের দা¤পত্য জীবনে উনার সঙ্গে সামান্যতম মনোমালিন্যেরও সৃষ্টি হয় নি । এমন দৃষ্টান্ত দুনিয়াতে খুবই বিরল । হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার এই আদর্শ পারিবারিক জীবনের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সদা সন্তুষ্ট ছিলেন । আরবে প্রবাদ বাক্যের মতই এই উক্তি প্রচলিত ছিল : দ¤পতিদের মধ্যে সর্বোত্তম দ¤পতি, যা কোন মানুষ অবলোকন করেছে, তা হলো হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম ও উনার সম্মানিত স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ ! (শরহে মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
হাবশায় হিজরত
নবুয়ত প্রকাশের ৫ম বর্ষে যখন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার বয়স মুবারক ১২ বছর, তখন উনাকে উনার স্বামী সহ হাবশায় হিজরত করতে হয় । এখানে নবুয়ত প্রকাশের ৫ম বর্ষ হতে ১২শ বর্ষ পর্যন্ত প্রায় সুদীর্ঘ ৮ বছর অবস্থান করেন । (ইবনে সা‘দ)।
নবুয়ত প্রকাশের ৫ম বর্ষে যখন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার বয়স মুবারক ১২ বছর, তখন উনাকে উনার স্বামী সহ হাবশায় হিজরত করতে হয় । এখানে নবুয়ত প্রকাশের ৫ম বর্ষ হতে ১২শ বর্ষ পর্যন্ত প্রায় সুদীর্ঘ ৮ বছর অবস্থান করেন । (ইবনে সা‘দ)।
নবুয়ত প্রকাশের ১০ম বর্ষে যখন উনার বয়স মুবারক যখন ১৭ বছর উনার সম্মানিত আম্মাজান হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম বিছাল শরীফ লাভ করেন, হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম এই বিয়োগান্ত ঘটনা অনেক বিলম্বে অবগত হন । বিদেশ বিভূঁয়ে থাকাকালে মাতার এই বিচ্ছেদ ব্যথা উনার অন্তরে কিরূপ লেগেছিল তা সহজেই অনুমেয় ।
নবুয়ত প্রকাশের ১১শ বর্ষে উনার বয়স মুবারক যখন ১৮ বছর, তখন হাবশায় উনার একটি পুত্র সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন । এই সময় নানাজি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশে ছিলেন না। হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম এই নবজাতকের নাম স্বীয় সম্মানিত পিতামহ হযরত আবদুল্লাহ আলাইহিস সালাম-উনার নামে “আবদুল্লাহ” রাখেন । নানাজী উনার প্রিয় নাতিকে এক-দেড় বছর পর দেখেন। ছুবহানাল্লাহ !
হাবশা থেতে প্রত্যাবর্তন ও মদীনা শরীফে হিজরত
নবুয়ত প্রকাশের ১২শ বর্ষে অর্থাৎ মদীনা শরীফে হিজরতের এক বছর পূর্বে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার উনার স্বামী হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সহ হাবশা থেকে প্রত্যাবর্তন করেন ।
নবুয়ত প্রকাশের ১২শ বর্ষে অর্থাৎ মদীনা শরীফে হিজরতের এক বছর পূর্বে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-উনার উনার স্বামী হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সহ হাবশা থেকে প্রত্যাবর্তন করেন ।
পরবর্তীতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে হিজরত করার পর তিনি আহলে বায়ত শরীফের অন্যান্য মহিলাদের সাথে মদীনা শরীফে হিজরত করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছাহেবযাদীগণ উনাদের মধ্যে কেবল হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালামই দুইবার হিজরত করেছেন : একবার হাবশায় এবং একবার মদীনা শরীফে ।
বিছাল শরীফ
হিজরী ২য় সনে একুশ বছর বয়স মুবারকে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । এই সময়টি ছিল বদরের জিহাদের প্রস্তুতিকাল । ১৭ই মাহে রমযান শরীফে বদরের জিহাদ সংঘটিত হয় । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহেবযাদীর সেবা-শুশ্র“ষার জন্য স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনাকে রেখে গিয়েছিলেন । যেদিন হযরত যায়দ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদরের জিহাদে বিজয়ের খোশখবর নিয়ে মদীনা শরীফে উপস্থিত হন, সেদিন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন । স্পষ্টই বুঝা যায় হাবশায় হিজরতের কারণে যে কষ্টের সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন সেজন্য তিনি অসুস্থ হয়ে অতি অল্প বয়সেই বিছাল শরীফ লাভ করেন ।
হিজরী ২য় সনে একুশ বছর বয়স মুবারকে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম-তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । এই সময়টি ছিল বদরের জিহাদের প্রস্তুতিকাল । ১৭ই মাহে রমযান শরীফে বদরের জিহাদ সংঘটিত হয় । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহেবযাদীর সেবা-শুশ্র“ষার জন্য স্বামী হযরত উছমান জুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনাকে রেখে গিয়েছিলেন । যেদিন হযরত যায়দ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদরের জিহাদে বিজয়ের খোশখবর নিয়ে মদীনা শরীফে উপস্থিত হন, সেদিন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন । স্পষ্টই বুঝা যায় হাবশায় হিজরতের কারণে যে কষ্টের সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন সেজন্য তিনি অসুস্থ হয়ে অতি অল্প বয়সেই বিছাল শরীফ লাভ করেন ।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, হাবশায় অবস্থানরত মুসলমানগণ প্রতিবেশীগণ বিধর্মী হওয়ার কারণে তাদের থেকে কোন আর্খিক বা অন্যান্য কোন সাহায্য সহযোগিতা পান নি। সেজন্য এখানে জীবন যাপন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। পক্ষান্তরে মদীনা শরীফের স্থানীয় অধিবাসীগণ উনারা ছিলেন আনছার ছাহাবী, ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কের কারণে উনারা মুহাজির ছাহাবী ও ছাহাবিয়াগণ উনাদেরকে সহায় সম্পদ সর্ব বিষয়ে তুলনাহীন সহযোগিতা করেছেন। হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি হাবশায় এই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশীদের মধ্যে উনার স্বামী হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম সহ প্রায় ৮ বছর অতি কষ্টের জীবন যাপন করেছেন । ছুবহানাল্লাহ। সূত্র : উসুদুল গাবা, তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইবনে হিশাম, হায়াতুচ্ছাহাব
অন্যান্য কতিপয় সাধারণ মহিলা ছাহাবী আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হিজরত
৫. হযরত উম্মে কুলছুম বিনতে উক্ববা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
পরিচিতি
একজন মুহাজির ছাহাবিয়া । পিতা ইসলামের ঘোর দুশমন, উক্ববা ইবনে আবী মু‘ঈত । সে ছিল কুরাইশ গোত্রের বনু উমাইয়া শাখার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি । মক্কা শরীফে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও দুর্বল মুসলমানদের উপর অমানবিক নির্যাতনের জন্য ইতিহাসে সে কুখ্যাত হয়ে আছে । সে ঐ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিত, উনার নামায পড়ার সময় হৈ-হুল্লোড় ও হাসি ঠাট্টা করত, সিজদায় গেলে উটের নাড়িভুঁড়ি ঘাড়ের উপর রেখে দিত, গলায় চাদর পেঁচিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করত । একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের সামনে হেরেম শরীফে নামায আদায় করছিলেন । তা দেখে আবু জেহেল বলল : কেউ যদি এ সময় উনার পিঠের উপর উটের নাড়িভূড়ি রেখে দিতে পারত, তবে ভারী মজা হতো । নরাধম উক্ববা বলল : তবে আমিই এ কাজ করছি । এ কথা বলে সত্যিই সে তা করল । অত:পর তারা আনন্দ ধ্বনি করতে লাগল । নাউজু বিল্লাহ ! উটের নাড়িভূড়ির ওজনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা থেকে মাথা মুবারক তুলতে পারছিলেন না । তখন কেউ সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনাকে এ খবর দিলেন । উনার বয়স মুবারক তখন মাত্র পাঁচ বছর । তিনি অতি কষ্টে কোনরূপে সেগুলো পিতার জিসিম মুবারক উনার উপর থেকে সরিয়ে দিলেন এবং পাষন্ড উকবাকে বদদোয়া করলেন। ছুবহানাল্লাহ ! এই পাষন্ড উকবা বিন আবী মু‘ঈত বদরের জিহাদে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয় এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। হযরত উ¤েম কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তখন মক্কা শরীফে । পাষন্ড পিতার হত্যার খবর শোনার পর উনার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও বের হয় নি বলে ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন । ছুবহানাল্লাহ !
একজন মুহাজির ছাহাবিয়া । পিতা ইসলামের ঘোর দুশমন, উক্ববা ইবনে আবী মু‘ঈত । সে ছিল কুরাইশ গোত্রের বনু উমাইয়া শাখার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি । মক্কা শরীফে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও দুর্বল মুসলমানদের উপর অমানবিক নির্যাতনের জন্য ইতিহাসে সে কুখ্যাত হয়ে আছে । সে ঐ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিত, উনার নামায পড়ার সময় হৈ-হুল্লোড় ও হাসি ঠাট্টা করত, সিজদায় গেলে উটের নাড়িভুঁড়ি ঘাড়ের উপর রেখে দিত, গলায় চাদর পেঁচিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করত । একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের সামনে হেরেম শরীফে নামায আদায় করছিলেন । তা দেখে আবু জেহেল বলল : কেউ যদি এ সময় উনার পিঠের উপর উটের নাড়িভূড়ি রেখে দিতে পারত, তবে ভারী মজা হতো । নরাধম উক্ববা বলল : তবে আমিই এ কাজ করছি । এ কথা বলে সত্যিই সে তা করল । অত:পর তারা আনন্দ ধ্বনি করতে লাগল । নাউজু বিল্লাহ ! উটের নাড়িভূড়ির ওজনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা থেকে মাথা মুবারক তুলতে পারছিলেন না । তখন কেউ সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনাকে এ খবর দিলেন । উনার বয়স মুবারক তখন মাত্র পাঁচ বছর । তিনি অতি কষ্টে কোনরূপে সেগুলো পিতার জিসিম মুবারক উনার উপর থেকে সরিয়ে দিলেন এবং পাষন্ড উকবাকে বদদোয়া করলেন। ছুবহানাল্লাহ ! এই পাষন্ড উকবা বিন আবী মু‘ঈত বদরের জিহাদে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয় এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। হযরত উ¤েম কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তখন মক্কা শরীফে । পাষন্ড পিতার হত্যার খবর শোনার পর উনার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও বের হয় নি বলে ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন । ছুবহানাল্লাহ !
ইসলাম গ্রহণ
হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মক্কা শরীফে থাকতেই অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহন করেন এবং সেখানেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হিজরতের পূর্বে উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন দুই ক্বিবলার নামায আদায়কারীদের অন্যতম ।
হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মক্কা শরীফে থাকতেই অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহন করেন এবং সেখানেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হিজরতের পূর্বে উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন দুই ক্বিবলার নামায আদায়কারীদের অন্যতম ।
জুলুম অত্যাচারের শিকার
উনার পিতার ন্যায় উনার পুরা পরিবারই ছিল এক চরম ইসলাম বিদ্বেষী পরিবারে । ইসলাম গ্রহণের কথা জানাজানি হয়ে গেলে তিনি মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখী হন । উনার উপর জুলুম অত্যাচার নেমে আসে। জেলখানার মত উনাকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে তিনি মদীনা শরীফে হিজরতকারী মুহাজিরদের সাথে হিজরত করতে না পারেন । এ অবস্থায় উনাকে একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হয় । হিজরী ৭ম সন পর্যন্ত তিনি হিজরত করতে পারেন নি ।
উনার পিতার ন্যায় উনার পুরা পরিবারই ছিল এক চরম ইসলাম বিদ্বেষী পরিবারে । ইসলাম গ্রহণের কথা জানাজানি হয়ে গেলে তিনি মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখী হন । উনার উপর জুলুম অত্যাচার নেমে আসে। জেলখানার মত উনাকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে তিনি মদীনা শরীফে হিজরতকারী মুহাজিরদের সাথে হিজরত করতে না পারেন । এ অবস্থায় উনাকে একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হয় । হিজরী ৭ম সন পর্যন্ত তিনি হিজরত করতে পারেন নি ।
হিজরত
উনার হিজরতের কাহিনী তিনি নিজে এভাবে বর্ণনা করেন : আমার পরিবারের একাংশ গ্রামে বাস করত । আমি সেখানে একাকী যেতাম এবং তিন চারদিন সেখানে অবস্থান করে আবার মক্কা শরীফে ফিরে আসতাম । আমার এমন আসা যাওয়াতে কেউ বারণ করতো না । এক পর্যায়ে আমি মদীনা শরীফে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলাম । একদিন গ্রামের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ থেকে বের হলাম । আমাকে যারা এগিয়ে দিতে এসেছিল তারা কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে ফিরে গেল । আমি একাকী চলছি, এমন সময় খুযা‘য়া গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে দেখা হলো । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কোথায় যাবে ? আমি জানতে চাইলাম : আপনি এ প্রশ্ন করছেন কেন এবং আপনি কে ? তিনি বললেন : আমি খুযা‘য়া গোত্রের লোক । তিনি খুযা‘য়া গোত্রের লোক বলাতে আমি নিশ্চিন্ত হলাম । কারণ, এই গোত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে সন্ধি ও শান্তিচূক্তি স¤পাদন করেছিল । আমি আমার পরিচয় দিয়ে বললাম : আমি কুরাইশ গোত্রের একজন নারী, রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট যেতে চাই, কিন্তু আমার পথ জানা নেই । তিনি বললেন: আমি আপনাকে মদীনা শরীফে পৌঁছে দিচ্ছি । তারপর তিনি একটি উট আমার নিকট নিয়ে আসলেন । আমি তার পিঠে চড়ে বসলাম । এক সময় আমরা মদীনা শরীফে পৌঁছলাম । তিনি ছিলেন একজন উত্তম সঙ্গী । আল্লাহ পাক উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন । ছুবহানাল্লাহ ! আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম-উনার নিকট গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম । তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন : মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসুলের দিকে হিজরত করেছ ? আমি বললাম : হাঁ । তবে আমার ভয় হয় আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় কিনা । একটু পরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম-উনার নিকট আসলেন । হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনাকে আমার বিষয়টি জানালে তিনি “আহলান সাহলান মারহাবান” বলে স্বাগত জানালেন । আমি বললাম : আমি আমার দ্বীনের জন্য আপনার নিকট পালিয়ে এসেছি । আমাকে আশ্রয় দিন । ফেরত পাঠালে আমার পরিবার আমাকে এমন শাস্তি দিবে যা আমি সহ্য করতে পারব না ।
উনার হিজরতের কাহিনী তিনি নিজে এভাবে বর্ণনা করেন : আমার পরিবারের একাংশ গ্রামে বাস করত । আমি সেখানে একাকী যেতাম এবং তিন চারদিন সেখানে অবস্থান করে আবার মক্কা শরীফে ফিরে আসতাম । আমার এমন আসা যাওয়াতে কেউ বারণ করতো না । এক পর্যায়ে আমি মদীনা শরীফে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলাম । একদিন গ্রামের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ থেকে বের হলাম । আমাকে যারা এগিয়ে দিতে এসেছিল তারা কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে ফিরে গেল । আমি একাকী চলছি, এমন সময় খুযা‘য়া গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে দেখা হলো । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কোথায় যাবে ? আমি জানতে চাইলাম : আপনি এ প্রশ্ন করছেন কেন এবং আপনি কে ? তিনি বললেন : আমি খুযা‘য়া গোত্রের লোক । তিনি খুযা‘য়া গোত্রের লোক বলাতে আমি নিশ্চিন্ত হলাম । কারণ, এই গোত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে সন্ধি ও শান্তিচূক্তি স¤পাদন করেছিল । আমি আমার পরিচয় দিয়ে বললাম : আমি কুরাইশ গোত্রের একজন নারী, রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট যেতে চাই, কিন্তু আমার পথ জানা নেই । তিনি বললেন: আমি আপনাকে মদীনা শরীফে পৌঁছে দিচ্ছি । তারপর তিনি একটি উট আমার নিকট নিয়ে আসলেন । আমি তার পিঠে চড়ে বসলাম । এক সময় আমরা মদীনা শরীফে পৌঁছলাম । তিনি ছিলেন একজন উত্তম সঙ্গী । আল্লাহ পাক উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন । ছুবহানাল্লাহ ! আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম-উনার নিকট গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম । তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন : মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসুলের দিকে হিজরত করেছ ? আমি বললাম : হাঁ । তবে আমার ভয় হয় আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় কিনা । একটু পরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম-উনার নিকট আসলেন । হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনাকে আমার বিষয়টি জানালে তিনি “আহলান সাহলান মারহাবান” বলে স্বাগত জানালেন । আমি বললাম : আমি আমার দ্বীনের জন্য আপনার নিকট পালিয়ে এসেছি । আমাকে আশ্রয় দিন । ফেরত পাঠালে আমার পরিবার আমাকে এমন শাস্তি দিবে যা আমি সহ্য করতে পারব না ।
দুই ভাই ফেরত নেয়ার জন্য মদীনা শরীফে আগমন
ইতিমধ্যে হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার ভ্রাতা উমারা ও ওয়ালীদ উনাকে ফিরিয়ে নিতে উনার অনুগমন করে । হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মদীনা শরীফ পৌঁছার পর দিনই তারা মদীনা শরীফ পৌঁছে । এ সময়টি ছিল হুদায়বিয়া সন্ধির সময়কাল । হুদায়বিয়া সন্ধির একটি শর্ত ছিল, মক্কা শরীফ হতে কোন লোক মদীনা শরীফে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে । উনার ভ্রাতৃদ্বয় এই শর্তানুযায়ী উনাকে ফিরিয়ে দিতে দাবী জানায় । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্বন্ধে কি করা যায় তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হন । তখন হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আরয করেন : ইয়া রসুলাল্লাহ ! আমি মেয়ে মানুষ, আর মেয়েরা দুর্বল হয়ে থাকে । আমি ভয় করি, তারা ইসলাম ত্যাগ করার জন্য আমাকে উৎপীড়ন করবে এবং হয়ত আমি ধৈর্যহারা হয়ে পড়ব । এই প্রসঙ্গে তখন একটি আয়াত শরীফ নাযিল হয়:-
ইতিমধ্যে হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার ভ্রাতা উমারা ও ওয়ালীদ উনাকে ফিরিয়ে নিতে উনার অনুগমন করে । হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মদীনা শরীফ পৌঁছার পর দিনই তারা মদীনা শরীফ পৌঁছে । এ সময়টি ছিল হুদায়বিয়া সন্ধির সময়কাল । হুদায়বিয়া সন্ধির একটি শর্ত ছিল, মক্কা শরীফ হতে কোন লোক মদীনা শরীফে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে । উনার ভ্রাতৃদ্বয় এই শর্তানুযায়ী উনাকে ফিরিয়ে দিতে দাবী জানায় । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্বন্ধে কি করা যায় তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হন । তখন হযরত উম্মে কুলছুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আরয করেন : ইয়া রসুলাল্লাহ ! আমি মেয়ে মানুষ, আর মেয়েরা দুর্বল হয়ে থাকে । আমি ভয় করি, তারা ইসলাম ত্যাগ করার জন্য আমাকে উৎপীড়ন করবে এবং হয়ত আমি ধৈর্যহারা হয়ে পড়ব । এই প্রসঙ্গে তখন একটি আয়াত শরীফ নাযিল হয়:-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّ- اللهُ أعْلَمُ بِإيْمَانِهِنَّ، فَإنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ إلَى الْكُفَّار– ……..
(অর্থ: হে মু’মিনগণ ! তোমাদের নিকট মু’মিন নারীরা হিজরত করে আসলে তাদেরকে পরীক্ষা করো, আল্লাহ পাক তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন । যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মু’মিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিও না ।……..) (সুরা মুমতাহানা/১০)। অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাইদেরকে আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার কথা জানালেন এবং বললেন : স্ত্রীলোক এই শর্তের অন্তর্ভূক্ত নয় । ছুবহানাল্লাহ !
সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা
(অর্থ: হে মু’মিনগণ ! তোমাদের নিকট মু’মিন নারীরা হিজরত করে আসলে তাদেরকে পরীক্ষা করো, আল্লাহ পাক তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন । যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মু’মিন তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিও না ।……..) (সুরা মুমতাহানা/১০)। অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাইদেরকে আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার কথা জানালেন এবং বললেন : স্ত্রীলোক এই শর্তের অন্তর্ভূক্ত নয় । ছুবহানাল্লাহ !
সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা
বিভিন্ন পদ-মর্যাদার অধিকারিনী কতিপয় মুহাজির মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের হিজরতের বর্ণনা দেয়া হলো । এখন আমরা আরো কয়েকজন বিশিষ্ট মুহাজির মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক আলোচনা করছি :-
৬. হযরত আসমা বিনতু উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
একজন মুহাজির ছাহাবিয়া । উনার নসবনামা হযরত আসমা বিনতু উমায়স বিন মা‘দ ইবনুল হারিছ। মাতার নাম হিন্দ বিনতু ‘আওফ বিন যুহায়র । (উসুদুল গাবা, ইছাবা)
তিনি ছিলেন উম্সুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম-বৈপিত্রেয় বোন । এতদ্ব্যতীত তিনি আরো নয়জন অথবা দশজন ছাহাবীয়ার বৈপিত্রেয় অথবা আপন বোন ছিলেন, ত¤মধ্যে ছয় জনের আপন বোন ছিলেন (ইছাবা, উসুদুল গাবা). সুবহানাল্লাহ !
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন আস-সাবিকুন আল-আউয়ালুন (প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণকারী) উনাদের অন্তর্ভূক্ত । তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন মাত্র ত্রিশ ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন । ইহা ছাড়া ইসলামের ইতিহাসে আরও একটি দিক হতে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন — একের পর এক এমন তিন মহান ব্যক্তিত্বের সাথে উনার বিবাহ মুবারক হয়েছিল যাঁরা ছিলেন শীর্ষ-স্থানীয় ছাহাবী এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অত্যন্ত আপন জন । উনার প্রথম বিবাহ হয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চাচাত ভাই হযরত জাফর ত্বাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে, মুতার জিহাদে উনার শাহাদতের পর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার সাথে উনার দ্বিতীয় বিবাহ হয় এবং উনার বিছাল শরীফের পর উনার তৃতীয় বিবাহ হয় হজরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও আলাইহিস সালাম-উনার সাথে । ছুবহানাল্লাহ !
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার স্বামী হযরত জাফর তাইয়ার রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে হাবসায় হিজরত করেছিলেন । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনা শরীফে হিজরত করেন, উনারাও মদীনা শরীফে হিজরত করলেন । একটি বর্ণনায় আছে, হযরত আসমা বিনতু উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন : হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! লোকেরা মনে করে আমরা মুহাজির নই । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন: এইরূপ যারা বলে, তারা মিথ্যা বলে । তোমরা দুই বার হিজরত করেছ। তোমরা একবার নাজ্জাসীর নিকট হিজরত করেছ, অত:পর আমার নিকট হিজরত করেছ (সিয়ারু আলামিন নুবালা). সুবহানাল্লাহ !
হাবসা হতে প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী বৎসর ৮ হিজরীতে মুতার জিহাদে উনার স্বামী হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদত বরণ করেন । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন : উনার শাহাদতের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার গৃহে আগমন করলেন । আমি ৪০টি চামড়া দাবাগাত (চামড়া পাক করা) করেছিলাম, আটা গুলিয়েছিলাম এবং আমার সন্তানদেরকে গোসল করিয়ে তৈল মাখিয়ে দিই । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করে বললেন : হে আসমা ! জাফরের সন্তানগণ কোথায় ? আমি উহাদেরকে উনার নিকট নিয়ে গেলাম । তিনি তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন, কপালে চুম্বন দিলেন। তখন উনার চক্ষু হতে দর দর করে অশ্র“ ঝরতে লাগল । আমি বললাম : হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! নিশ্চয়ই আপনার নিকট জাফরের কোন সংবাদ পৌঁছেছে । তিনি বললেন : হাঁ, সে আজ শাহাদত বরণ করেছে । ইহা শুনে আমি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলাম । তখন প্রতিবেশী মহিলারা আমার নিকট এসে উপস্থিত হল । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন : হে আসমা ! মাতম করে কেঁদো না, বুক চাপড়িও না । সুবহানাল্লাহ !
হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার শাহাদতের ৬ মাস পর ৮ হিজরীতে (হুনায়েনের জিহাদের সময়) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার সাথে বিবাহ দেন ।
হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনাকে আপন কন্যার ন্যায় স্নেহ করতেন । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিছাল শরীফের পর যখন তিনি একেবারে ভেঙ্গে পড়েন তখন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রায় সর্বক্ষণ উনার কাছে অবস্থান করে শান্ত¦না দিতেন । হযরত যাহরা আলাইহাস সালামও উনাকে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা করতেন। হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফের কিছু পূর্বে হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে ডেকে এনে বললেন : আমার বিছাল শরীফের পর পর্দ্দার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন। কেবলমাত্র আপনি এবং আমার স্বামী ব্যতীত আর কারো নিকট হতে যেন আমার গোসলে সাহায্য গ্রহণ করা না হয় । সুবহানাল্লাহ !
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফের পূর্বে ওছীয়ত করে গিয়েছিলেন যে, উনার আহলিয়া হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যেন উনাকে গোছল দান করেন । হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যথাযতভাবে উনার নির্দ্দেশ পালন করেন ।
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার বিছাল শরীফের পর তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম-উনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার নিকট হতে বেশ কিছু হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে । সুনানের চারটি হাদীছ শরীফের কিতাবেই উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ সমূহ সঙ্কলিত হয়েছে । হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ৪০ সনে শাহাদত লাভ করেন । উনার শাহাদতের পরেও হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জীবিত ছিলেন (সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার তিন স্বামীর ঔরশে মোট পাঁচ জন পুত্র সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন । প্রথম স্বামী হযরত জা‘ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার ঔরশে তিন ছেলে : উনারা হচ্ছেন হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুহ¤মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আওন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু । উনারা ছাহাবী ছিলেন। উনার দ্বিতীয় স্বামী হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম-উনার ঔরশে হযরত মুহ¤মদ ইবনে আবী বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত শরীফ লাভ করেন । উনার তৃতীয় স্বামী হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম-উনার ঔরশে হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত শরীফ লাভ করেন । উনারা তাবেয়ী শ্রেণীভূক্ত ছিলেন ।
সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা
সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা
৭. হযরত হামনা বিনতু জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
মুহাজির ছাহাবীয়া, উ¤মুল মু’মিনীন হযরত যয়নব বিনতু জাহাশ আলাইহাস সালাম-উনার সহোদরা বোন, হযরত মুছ‘য়াব ইবনু উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া ।
হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার স্বামী হযরত মুছ‘য়াব বিন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন মক্কা শরীফের বিত্তবান পরিবারের এক সুদর্শন যুবক । উনার মাতা খুনাস বিনতু মালিকের ছিল প্রচূর স¤পদ । শৈশব থেকে তিনি প্রচূর্যের মধ্যে বেড়ে উঠেন । মা উনাকে সব সময় দামী দামী পোষাক পরিচ্ছদে সাজিয়ে রাখত। মক্কা শরীফে উনার চেয়ে দামী সুগন্ধি আর কেউ ব্যবহার করত না । পায়ে পরতেন হাদ্বরামাউতের জুতা। সুবহানাল্লাহ !
এই যুবক যখন শুনলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারুল আরকামে অবস্থান করে গোপনে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন, তখন একদিন সেখানে হাজির হলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন । অত:পর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রত্যক্ষ তত্ত¦াবধানে লাভ করেন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এমন যোগ্যতা অর্জন করলেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার বিশেষ দূত ও প্রতিনিধি হিসাবে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে মদীনা শরীফে প্রেরণ করেন । তিনি ছিলেন মদীনা শরীফে ইসলামের প্রথম দা‘য়ী (ইসলামের দিকে আহ¦ানকারী) . সুবহানাল্লাহ !
মক্কা শরীফে ইসলামের প্রথম পর্বে যে সকল মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেন, হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের একজন । হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার গোটা পরিবারই ছিল মুসলমান । মক্কা শরীফে উনাদের উপর কুরাইশদের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে উনারা নারী-পুরুষ সকলেই মদীনা শরীফে হিজরত করেন । মদীনা শরীফে আসার পর হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজের স্বামী থেকে ইসলামী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজকে আরো শিক্ষিত করে তোলেন । ফলে উনার স্বামী ও তিনি মদীনা শরীফের সমাজে ইলেম চর্চার মাধ্যমে একটি স¤মানজনক মর্যাদার আসন লাভ করেন ।
উহুদের জিহাদে হযরত মুছ‘য়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে অংশ গ্রহণ করেন । হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও আরো কিছু মুসলিম মহিলা মুজাহিদের সঙ্গে এই জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন । সেদিন উনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । এই জিহাদে একজন সৈনিক, প্রত্যক্ষ্যদর্শী হযরত কা‘ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন : আমি উহুদের জিহাদের দিন হযরত উম্মে সুলাইম বিনতু মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম-উনাদেরকে নিজ নিজ পিঠে পানির মশক ঝুলিয়ে বহন করতে দেখেছি । হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে দেখেছি তৃষ্ণার্তদের পানি পান করাতে এবং আহতদের সেবা করতে । আর হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকেও দেখেছি আহতদের পানি পান করাতে (আল-ওয়াকিদী, আল-মাগাজী) ।
উহুদের জিহাদে হযরত মুছ‘য়াব ইবনু উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ সত্তর জন মুসলিম মুজাহিদ শাহাদত বরণ করেন । এই জিহাদে হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মামা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার ভাই-উনাদের শাহাদতের সংবাদ অবগত হলে তিনি নিজকে সংবরণ করেন এবং উনাদের জন্য দোয়া করেন । কিন্তু তিনি যখন উনার স্বামী হযরত মুছ‘য়াব ইবনে উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার শাহাদতের সংবাদ অবহিত হলেন, তিনি চিৎকার দিয়ে উঠেন এবং বলেন : হায়, আমার দু:খ ! অবস্থা দেখে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন্তব্য করেন : নারীর হƒদয়ে স্বামীর অবস্থান এমন এক স্থানে যা অন্য কারো জন্য নেই । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করেন : তোমার স্বামীর শাহাদতের কথা শুনে এমন আচরণ করলে কেন ? হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন : আমার সন্তানদের ইয়াতীম হওয়ার কথা মনে হলো এবং আমি শঙ্কিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি (সীরতে ইবনে হিশাম). সুবহানাল্লাহ !
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার জন্য দোয়া করেন, আল্লাহ পাক যেন উনার সন্তানদের জন্য হযরত মুছ‘য়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার স্থলে একজন উত্তম স্বামী দান করেন । অত:পর প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ত্বলহা ইবনু উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বিবাহ করেন, যিনি ছিলেন সেই দশ জন সৌভাগ্যবান ছাহাবীর অন্যতম যাঁরা নিজেদের জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন উম্সুল মু’মিনীন হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম-উনার বোন । বর্ণিত আছে যে, উম্মুল মু‘মিনীন হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম-উনার জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে বোন হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে বললেন : আমি আমার কাফন প্রস্তুত করে রেখেছি । আমার বিছাল শরীফের পর খলীফা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম আমার জন্য কাফন পাঠাতে পারেন । যদি পাঠান, তুমি যে কোন একটি ছদকা করে দিও । হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হলেন। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাফনের জন্য পাঁচ প্রস্থ কাপড় পাঠালেন । সেই কাপড় দ্বারা উনাকে কাফন দেয়া হলো । অর হযরত যায়নাব আলাইহাস সালাম-উনার প্রস্তুতকৃত কাফনের কাপড় হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছদকা করে দেন (ইছাবা)। এই ঘটনা ইঙ্গিত করে যে, হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হিজরী ২০ সনের পরেও জীবিত ছিলেন । আল্লাহ পাক ও উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের আনুগত্য সহকারে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে এক প্রশংসিত জীবন যাপন করে হযরত হামনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরলোক গমন করেন। উনার বিছাল শরীফের নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায় নি । সুবহানাল্লাহ !
(সূত্র সমূহ : উসুদুল গাবা, ইছাবা, সীরতে ইবনে হিশাম, আল-মাগাজী)
(সূত্র সমূহ : উসুদুল গাবা, ইছাবা, সীরতে ইবনে হিশাম, আল-মাগাজী)
সার্বিক আলোচনা
আমরা দেখতে পাই যে, প্রাথমিক মুসলমানদের উপর কাফির মুশরিকদের অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচারের কারণে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে যেমন পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি বিরাট দল দুই বার হাবশায় হিজরত করেছিলেন এবং পরবর্তীতে মদীনা শরীফে উনারা হিজরত করেছিলেন, তেমনি অনেক মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাও এই উভয় স্থানে হিজরত করেছিলেন। এসব মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ অনেক কষ্ট ক্লেশ সহ্য করেছেন। আমরা দেখতে পাই, মুহাজির পুরুষ ছাহাবীদের যেমন একটি বিশেষ গুণ ছিল নেতৃত্বের গুণ, কারণ প্রায় সব খলীফাগণই ছিলেন কুরাইশ গোত্রের মুহাজির ছাহাবী, তেমন মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণেরও এই গুণ বর্তমান ছিল । কিন্তু যেহেতু মহিলা নেতৃত্ব ইসলামে জায়েজ নেই, সেইজন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারীনি উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারাও কোন নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করেন নি । নতুবা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম, যাঁরা ছিলেন মুহাজির এবং যাঁরা প্রথম চার খলীফা-উনাদের সময়ের পরেও জীবিত ছিলেন, উনারা অবশ্যই কোন না কোন নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করতেন। এর পরিবর্তে উনারা সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তা’লীম-তালক্বীন দরস-তাদরীসে নিয়োজিত ছিলেন। অন্যান্য মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণও সাধারণ মহিলাদের মধ্যে এইরূপ তা’লীম তালক্বীন ও শিক্ষাদানে নিয়োজিত ছিলেন । আমরা যে কয়েক জন মুহাজির মহিলা ছাহাবীর আলোচনা করেছি, তম্মধ্যে শেষোক্ত দুই জনের একজন হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন হযরত জা’ফর বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া, যিনি হাবশায় দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন এবং অন্য জন হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি ছিলেন হযরত মুছয়াব বিন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া, যিনি ছিলেন মদীনা শরীফে দ্বীন ইসলামের সর্ব-প্রথম প্রচারক। উনাদের স্বামীগণ যেমন পুরুষদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন, মহিলাদের মধ্যে উনাদেরও ইসলাম প্রচার কাজে ব্যাপক ভূমিকা রযেছে। সুবহানাল্লাহ !
আমরা দেখতে পাই যে, প্রাথমিক মুসলমানদের উপর কাফির মুশরিকদের অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচারের কারণে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে যেমন পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি বিরাট দল দুই বার হাবশায় হিজরত করেছিলেন এবং পরবর্তীতে মদীনা শরীফে উনারা হিজরত করেছিলেন, তেমনি অনেক মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাও এই উভয় স্থানে হিজরত করেছিলেন। এসব মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণ অনেক কষ্ট ক্লেশ সহ্য করেছেন। আমরা দেখতে পাই, মুহাজির পুরুষ ছাহাবীদের যেমন একটি বিশেষ গুণ ছিল নেতৃত্বের গুণ, কারণ প্রায় সব খলীফাগণই ছিলেন কুরাইশ গোত্রের মুহাজির ছাহাবী, তেমন মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণেরও এই গুণ বর্তমান ছিল । কিন্তু যেহেতু মহিলা নেতৃত্ব ইসলামে জায়েজ নেই, সেইজন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারীনি উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারাও কোন নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করেন নি । নতুবা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম, যাঁরা ছিলেন মুহাজির এবং যাঁরা প্রথম চার খলীফা-উনাদের সময়ের পরেও জীবিত ছিলেন, উনারা অবশ্যই কোন না কোন নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করতেন। এর পরিবর্তে উনারা সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তা’লীম-তালক্বীন দরস-তাদরীসে নিয়োজিত ছিলেন। অন্যান্য মুহাজির মহিলা ছাহাবীগণও সাধারণ মহিলাদের মধ্যে এইরূপ তা’লীম তালক্বীন ও শিক্ষাদানে নিয়োজিত ছিলেন । আমরা যে কয়েক জন মুহাজির মহিলা ছাহাবীর আলোচনা করেছি, তম্মধ্যে শেষোক্ত দুই জনের একজন হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন হযরত জা’ফর বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া, যিনি হাবশায় দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন এবং অন্য জন হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি ছিলেন হযরত মুছয়াব বিন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া, যিনি ছিলেন মদীনা শরীফে দ্বীন ইসলামের সর্ব-প্রথম প্রচারক। উনাদের স্বামীগণ যেমন পুরুষদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন, মহিলাদের মধ্যে উনাদেরও ইসলাম প্রচার কাজে ব্যাপক ভূমিকা রযেছে। সুবহানাল্লাহ !
মহিলা ছাহাবী-উনাদের ব্যাপারে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, হিজরী ৫ সনের শাওয়াল মাস পর্যন্ত বদর, উহুদ ও খন্দক এ তিনটি বড় বড় জিহাদ সমাপ্ত হয় । উক্ত সময় পর্যন্ত পর্দা পালন করার নির্দেশ জারী হয় নি । অত:পর হিজরী ৫ম সনে জিলক্বদ মাসে পর্দ্দা পালন করা ফরয করে দেয়া হয় । সুতরাং যেখানে কোন বর্ণনায় পুরুষ ও মহিলার সরাসরি কথাবার্তা এসেছে অথবা বুঝা যায় যে পর্দা পালন করা হয় নি, তবে তা উক্ত তারিখের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে বুঝতে হবে । ইহা ধারণা করা যায় না যে, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দ্দার নির্দেশ জারী হওয়ার পর পর্দার খেলাফ কাজ করেছেন ।
আরো একটি বিষয়ে লক্ষণীয় যে, সাধারণ মহিলা ছাহাবীগণও স্বামীর খিদমত, পারিবারিক খিদমত এবং শরীয়ত সম্মতভাবে পর্দ্দার মধ্যে থেকে সামাজিক খিদমত করেছেন । উনারা জিহাদেও যোগদান করেছেন, কিন্তু শরীয়তের সীমা লঙ্ঘন করেন নি। উনারা জাহেলী যুগের ন্যায় বেপর্দ্দা হয়ে ঘরের বাইরে এসে পুরুষের সাথে তালে তালে জীবিকা অর্জনে লিপ্ত হন নি । বর্তমানে আমাদের সমাজে বেপর্দ্দেগী ও বেহায়ায়ী ঢালাও ভাবে চালু হয়ে যাওয়ার কারণে মহিলারাও ঘরের বাইরে এসে পুরুষের সাথে সাথে চাকুরী বাকুরী এবং অন্যান্য সকল কাজে অংশ গ্রহণ করছে । এতে করে সমাজ দিন দিন অবনতির চরমে পৌঁছে যাচ্ছে। সন্তান সন্ততিদের শিক্ষা দীক্ষা মাতার কাছেই হয়ে থাকে। সেজন্য মহিলাদের ইসলামী শিক্ষা সর্ব প্রথম প্রয়োজন, যা আমাদের মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম সব সময় বলে আসছেন। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়া উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম শীর্ষ-স্থানীয় হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের হুবহু আদর্শে আদর্শবান। তিনি আম ও খাছ ভাবে মহিলাদের তা’লীম-তা’লক্বীন দিয়ে যাচ্ছেন, শরীয়ত সম্মত খাছ পর্দ্দার সাথে সুন্নতের আমল, ফিক্বাহের ইলেম ও তাছাউফের ইলেম শিক্ষা দান করছেন। সুবহানাল্লাহ ! সকল মহিলাগন হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র ছোহবতে এসে এই সুবর্ণ সুযুগ গ্রহণ করা উচিত ।
https://fitrat2020.wordpress.com/2013/02/

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন