মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
الشمس تجرى لمستفرلها ذلك تقدير
العزيز العليم والقمر قدرنه منازل حتى عاد كالعرجون القديم لا الشمش ينبغى لها ان
تدرك القمر ولا اليل سابق النهار وكل فى فلك يسبحون.
অর্থ : “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে, এটা মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আবর্তিত। চাঁদের জন্য আমি নির্ধারিত মঞ্জিলসমূহ নির্দিষ্ট করেছি, অতঃপর সে পুরাতন খেজুর শাখার ন্যায় হয়ে যায়, সূর্য নাগাল পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত দিনের আগে চলে না। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে চলে থাকে।” (সূরা ইয়াসীন : আয়াত শরীফ ৩৮-৪০)
উল্লেখ্য মুসলমানরা চাঁদের মাধ্যমে বছর, মাস ও দিন তারিখ নির্ধারিত করে থাকে। চাঁদ এর উপর ভিত্তি করেই হজ্জ্ব, যাকাত ও রোযাসহ অনেক আমলের তারিখ নির্ধারিত হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাক-এ ইরশাদ হয়েছে,
يسئلونك عن الاهل قل هى موقيت للناس
والحج.
অর্থ : “লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে আপনি বলে দিন এটা হল মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১৮৯)
উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর শানে নুযূল ও ব্যাখ্যায় তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে “اهلة” তথা চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন যে, চাঁদের আকৃতি-প্রকৃতি সূর্য থেকে ভিন্নতর, এটা প্রথমে সরু বাঁকা রেখার মত আকৃতি ধারন করে, অতঃপর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, অবশেষে সম্পূর্ণ গোলাকারে পরিণত হয়ে যায়। পুনরায় ক্রমন্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। এর কারণ কি?
এর জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি চাঁদের এরূপ হ্রাস-বৃদ্ধির অসংখ্য খায়ের ও হিকমতের মধ্যে কয়েকটি খায়ের ও হিকমত উল্লেখপূর্বক আয়াত শরীফ নাযিল করে বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি উনাদেরকে বলে দিন- চাঁদের সাথে সমস্ত খায়ের ও হিকমত নিহিত তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যে, এতে তোমাদের কাজ কারবার ও চুক্তির সময় সীমা এবং হজ্জ্বের দিনের হিসেব রাখা সহজ হবে। অনুরূপভাবে রোযার ব্যাপারেও চাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى قال قال
رسول صلى الله عليه وسلم صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فان غم عليكم فاكملوا عدة
شعبان ثلثين.
অর্থ : “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোযা (শাওয়ালের) চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারণে তোমাদের প্রতি চাঁদ গোপন থাকে তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৭৪)
অর্থাৎ ২৯শে শা’বান যদি কোন কারণবশতঃ চাঁদ দেখা না যায় তবে শা’বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করে অতঃপর রমাদ্বানের রোযা রাখবে।
মূলত অমাবস্যার পর থেকেই চাঁদ আবার ধীরে ধীরে পৃথিবীর চারপার্শ্বে ঘুরে বিভিন্ন দশায় পৌঁছে এবং শেষে আবার পৃথিবীর আড়ালে চলে যায়। সে সময় পৃথিবীর চারপার্শ্বে চাঁদের একবার প্রদক্ষিণ শেষ হয়।
এছাড়াও ইহুদীরা অমাবস্যার চাঁদকেই নতুন চাঁদ হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের ক্যালেন্ডার রচনা করে থাকে। ফলে অমাবস্যার চাঁদ তাদের কাছে নতুন মাসের নতুন চাঁদ। মুসলমানদের কাছে গণনার দিক থেকে এই অমাবস্যার চাঁদের কোন গুরুত্ব নেই।
কেননা, কুরআন শরীফ এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে বাঁকা চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছে, আপনি বলুন- এটি মানুষের (আরবী মাস ও ইবাদতের) সময় এবং হজ্জের সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম।”
আবার হাদীছ শরীফ এ ইরশাদ হয়েছে “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে ঈদ কর।”
কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এ যে চাঁদের বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে হিলাল বা বাঁকা চাঁদ যা অমাবস্যার পরে পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়। এই বাকা চাঁদ বা হিলালকে বলা হয়Crescent Moon- যা শরীয়তের নতুন চাঁদ। আর অমাবস্যার চাঁদ হচ্ছে Zero Moon- যার বয়স শূন্য ঘণ্টা, শূন্য মিনিট এবং তা কখনো দৃশ্যমান হয় না।
যারা মনে করেন অমাবস্যায় নতুন চাঁদের জন্ম হয় ফলে জন্মে পরেই চাঁদ দৃশ্যমান হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। অমাবস্যার সময় নতুন চাঁদের জন্ম হয় সত্য তবে তা দেখতে পাবার জন্য কমপক্ষে ১৭-২৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে বিষয়টিকে এভাবে অপব্যাখ্যা করেন যে, অমাবস্যার পর নতুন মনজিলে চাঁদ যাত্রা শুরু করে ফলে এই নতুন যাত্রার চাঁদই হচ্ছে শরীয়তের নতুন চাঁদ। তাদের কাছে চাঁদ দেখতে পওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং নতুন মনজিলে চলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরকম ব্যাখ্যা শরীয়ত সমর্থিত নয়। কেননা শরীয়তে হিলাল বা বাঁকা চাঁদের কথা বলা হয়েছে।
মূলত ইহুদী-মুশরিকদের কাছে অমাবস্যার চাঁদের গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু মুসলমানদের কাছে নয়। মুসলমানদের কাছে অমাবস্যার চাঁদ মানে Zero
Moon। আর অমাবস্যার পর পরই চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। তাই অমাবস্যা অনুযায়ী আরবী মাস গণনা করা কখনোই শরীয়ত সমর্থিত নয় বলে তা সর্বদাই পরিত্যাজ্য।
মদীনা শরীফ-এর ইহুদীরা জেরুজালেমের অমাবস্যা অনুযায়ী মাস গণনা করতো। প্রায়শই তারা মুসলমানদের বলতো চাঁদ দেখা অনুযায়ী মুসলমানদের মাস গণনা নাকি নির্ভরযোগ্য নয়।
চতুর্থ শতব্দীতে একজন ইহুদী ধর্মীয় নেতা হিলাল দি নাসি বা হিলাল-২ পৃথিবীতে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ইহুদীদের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এবং তাদের সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি একটি নির্দিষ্ট দিনে পালন করার উদ্দেশ্যে একটি ক্যালেন্ডার সিষ্টেম চালু করে। সেই ক্যালেন্ডার রচনার মূল তথ্যটি তারা গোপনে রাখার চেষ্টা করে তবে মূল ভিত্তিটাZero Moon বা অমাবস্যা অনুযায়ী ক্যালকুলেশন। মুসলমানদের ক্যালেন্ডার তৈরী হয় চাঁদের হিসাব অনুযায়ী আর ইহুদীদের ক্যালেন্ডার রচিত হয় চাঁদের বিভিন্ন পর্যায় এবং সৌর বছরের সময়ের সমন্বয়ে, তাই তাদের ক্যালেন্ডারকে বলা হয় Lunisolar।
উপরোক্ত আলোচনা হতে বোঝা গেল যে, অমাবস্যার চাঁদ আকাশে দৃশ্যমান হয় না। এই অমাবস্যার চাঁদই হচ্ছে ইহুদীদের মাস গণনার ক্ষেত্রে নতুন চাঁদ। কিন্তু মুসলমানরা অমাবস্যা হতে কোনভাবেই আরবী মাস গণনা শুরু করতে পারে না। কেননা, ইসলামে হিলাল বা বাঁকা চাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা অমাবস্যার পরে পশ্চিমাকাশে দৃশ্যমান হয়।
অথচ সউদী ওহাবী সরকার প্রতিবারের মতো এবারও ইহুদীদের সাথে মিল রেখে অমাবস্যা হতে ১৪৩৩ হিজরী সনের রমাদ্বান মাসের ১লা তারিখ গণনার ঘোষণা দিয়েছে এবং রমাদ্বান মাস শুরু করেছে। নাউযিুবিল্লাহ! ইহুদীদের সাথে মিল রেখে অমাবস্যা হতে মাস গণনার নমুনা নিচে দেয়া হলো-
চাঁদ দেখা বিষয়ে সউদী ওহাবী সরকারের এভাবে ইহুদীদের সাথে মিল রাখায়, এটা সুস্পষ্ট হয় যে তারা ইহুদীদেরই বংশধর, মুসলমান নয়।
লিংক: http://shobujbanglablog.net/30633.html

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন