728x90 AdSpace

  • Latest News

    পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা মুসলমান তো অবশ্যই বরং জিন-ইনসানসহ কায়িনাতের সকলের জন্যই ফরযে আইন।

    হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। যিনি সমগ্র কায়িনাতের মূল বা উৎস। উনার মুবারক শানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ورفعنا لك ذكرك.

    অর্থ: “আমি আপনার সুমহান মর্যাদাকে বুলন্দ করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ)
    এ আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা বুলন্দির কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। কাজেই কোন মাখলূকাতের জন্যই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা মর্তবার সীমা নির্ধারণ করা তো জায়িয হবেই না। বরং মর্যাদা-মর্তবার সীমা নির্ধারণের চিন্তা করাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
    মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থান। এক কথায় তিনি শুধু আল্লাহ পাক নন, এছাড়া সমস্ত মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
    মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টির পূর্বে, উনার মহান রুবুবিয়্যত প্রকাশের জন্য সৃষ্টি করে উনার মহান কুদরতের মধ্যে রাখেন। অতঃপর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারক-এ করে বছর বছর জান্নাতের মধ্যে রাখেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করলে আবাদুল আবাদ পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দিতে পারতেন অথবা জান্নাতের মধ্যেও রেখে দিতে পারতেন। আরহামুর রাহিমীন মহান রব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়া করে, ইহসান করে উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যমীনে পাঠিয়ে যমীনবাসীকে কায়িনাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
    মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যমীনে ও মানবজাতির মধ্যে বিলাদত শরীফ দান করেছেন; সেজন্যই উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ বা খুুশি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যা মাখলূকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
    يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমতস্বরূপ (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। (তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো) তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
    অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মানবজাতির প্রতি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাকে ফরয করে দিয়েছেন। আর এ মুবারক নির্দেশ পালনার্থেই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা সারাজীবন আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী পালন করেছেন।
    মহান আল্লাহ পাক তিনি যেনো এর মাধ্যমে সকলকে সঠিক আক্বীদা পোষণ করে হাক্বীক্বীভাবে রেযায়ে মুর্শিদ, রেযায়ে নবী ও রেযায়ে মাওলা হাছিল করার তাওফিক দান করেন। (আমীন)

    বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয হওয়ার প্রমাণ

    ঊছুলে ফিক্বাহর সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, الامر للوجوب অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, اقيموا الصلوة অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।” কুরআন শরীফ-এর এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। অনুরূপ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, واعفوا للحى অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।” হাদীছ শরীফ-এর এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। ঠিক একইভাবে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ করা তথা খুশি প্রকাশ করা বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ব্যাপারেও কুরআন শরীফ-এ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বহু স্থানে আদেশ-নির্দেশ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, اذكروا نعمة الله عليكم
    অর্থাৎ “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরণ করো।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১০৩)
    এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত স্মরণ করা, নিয়ামতের আলোচনা করা, নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে নিয়ামতকে স্মরণ করে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয। আর সে নিয়ামতকে ভুলে যাওয়া বা খুশি প্রকাশ না করা কঠিন শাস্তির কারণ। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, শাস্তি থেকে বেঁচে থাকাও বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয। এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা মায়িদাহ -এর ১১৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন-
    قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ. قَالَ اللّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِنِّي أُعَذِّبُهُ عَذَابًا لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ.
    অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ তথা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (সূরা মায়িদাহ : আয়াত শরীফ ১১৪)
    এ আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল যে, নিয়ামত প্রাপ্তির দিনটি পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন। যা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। আরো প্রমাণিত হয় যে, নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে যারা ঈদ বা খুশি প্রকাশ করবেনা তারা কঠিন আযাব বা শাস্তির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ এ আয়াত শরীফ দ্বারাও মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত প্রাপ্তির উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে খুশি প্রকাশ করাকে ফরয করে দিয়েছেন।
    এখন কথা হলো- সাধারণভাবে কোনো নিয়ামত প্রাপ্তির কারণে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি করা যদি ফরয হয়, আর হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য বা নিয়ামত নাযিল হওয়ার কারণে সে দিনটি যদি পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন হয় এবং সে ঈদকে অস্বীকারকারী বা সে ঈদ না পালনকারী যদি কঠিন আযাব বা শাস্তির উপযুক্ত হয়; তবে যিনি কুল-কায়িনাতের জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত অর্থাৎ নিয়ামতে কুবরা আলাল আলামীন তিনি যেদিন যে সময়ে পৃথিবীতে তাশরীফ আনলেন সে দিনটি কেনো পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন হবে না? সেদিন যারা ঈদ বা খুশি প্রকাশ করবেনা তারা কেনো কঠিন আযাব বা শাস্তির উপযুক্ত হবে না?
    মূলত সেদিন অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ শুধু পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের জন্যই নয়; কুল-কায়িনাতের সকলের জন্যই সবচেয়ে বড় ঈদ অর্থাৎ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও সাইয়্যিদে ঈদে আকবর। সেদিন ঈদ পালন করা শুধু জিন-ইনসানের জন্যই নয় বরং কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য অবশ্যই ফরয। সেদিন যারা ঈদ পালন করবেনা তারা ফরয তরক করার কারণে, নিয়ামতের না শুকরিয়া বা অবজ্ঞা করার কারণে অবশ্যই কঠিন আযাব বা শাস্তির উপযুক্ত হবে। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা ইউনূস-এর ৫৮ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বান্দা-বান্দী ও উম্মতদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লাভ করার কারণে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করতে সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি ইরশাদ করেন,
    قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ.
    অর্র্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)
    অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুদাক্কিক্ব ও মুহাক্কিক্বগণ উনারা এ আয়াত শরীফ দ্বারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাকে ফরয বলে ফতওয়া দেন। কেননা উক্ত আয়াত শরীফ-এ فَلْيَفْرَحُواْ অর্থাৎ “তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে” আদেশসূচক বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর আদেশসূচক বাক্য দ্বারা যে ফরয সাব্যস্ত হয় তা উদাহরণ ও দলীলসহ শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
    কাজেই, প্রত্যেক বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য তো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণকারীরা বাতিল ও গোমরাহ।

    মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেন

    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, ছানা-ছিফত, প্রশংসা তথা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ সর্বপ্রথম পালন করেছেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন তিনি স্বয়ং নিজে। এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
    كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف.
    অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি জাহির হই। তখন আমি আমার (রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।” (আল মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬, সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)
    মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন-
    لولاك لما اظهرت الربوبية.
    অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتانى جبريل عليه السلام فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لولاك ماخلقت الجنة ولولاك ماخلقت النار.
    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম আমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, আপনি যদি না হতেন তবে আমি জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” (দায়লামী, কানযুল উম্মাল-৩২০২২)
    অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাত সৃষ্টি করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করেছেন মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করার উদ্দেশ্যে।
    মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতেও সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাথে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন ও উনাদের থেকে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ওয়াদা নিয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
    واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جائكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال اأقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين. فمن تولى بعد ذلك فاولئك هم الفاسقون.
    অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য (নুবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়িজ দেয়ার জন্য) আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত করবেন (উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করবেন)। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম (অর্থাৎ আমরা যমীনে গিয়ে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করবো)। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন: আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম। তবে জেনে রাখুন, যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে (যারা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করবে না বা এর বিরোধিতা করবে) তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (ও কাফির) হয়ে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৮১-৮২)
    এ আয়াত শরীফ-এ স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি নিজেই হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। আবার হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যমীনে এসে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা যমীনে এসে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে না বরং এর বিরোধিতা করবে তারাই চরম পর্যায়ের ফাসিক ও কাফির হবে সে সম্পর্কে ঘোষণাও দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান-
    انا ارسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا. لتؤمنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا.
    অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করো, সম্মান করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করো।” (সূরা ফাতহ : আয়াত শরীফ ৮-৯)
    মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন-
    يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .
    অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, মহান হিদায়েত ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৭- ৫৮)
    এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাতের জন্য ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে ফরয করে দিয়েছেন।
    উল্লেখ্য যে, এ সম্পর্কে তিনটি শব্দ রয়েছে। যথা: ميلاد অর্থ: জন্মের সময়, مولد অর্থ: জন্মের স্থান, مولود অর্থ: সদ্য প্রসূত সন্তান। আর ইছতিলাহী বা ব্যবহারিক অর্থ হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, র‏হমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা; যা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
    ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
    অর্থ: “নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার মতো সালাম দাও অর্থাৎ যথাযথ আদবসহকারে তথা ক্বিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৫৬)

    নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ পালন করে খুশি প্রকাশ করেন

    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও নিজের মীলাদ শরীফ তথা বিলাদত শরীফ, বংশ মর্যাদা ও ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করেছেন। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن العباس رضى الله تعالى عنه انه جاء الى النبى صلى الله عليه و سلم فكانه سمع شيئا فقام النبي صلى الله عليه و سلم على المنبر فقال من انا ؟ فقالوا انت رسول الله فقال انا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب عليهما السلام. ان الله خلق الخلق فجعلنى فى خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلنى فى خيرهم فرقة ثم جعلهم قبائل فجعلنى فى خيرهم قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلنى فى خيرهم بيتا فانا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا.
    অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে উপস্থিত ছিলাম। ইতোপূর্বে কোনো কোনো লোক আমাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। সম্ভবত এ সংবাদ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্ণগোচর হয়েছিলো। এ সময় উনার দরবার শরীফ-এ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মিম্বর শরীফ-এ আরোহণ করতঃ উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে?” তখন সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন, “আপনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” অতঃপর তিনি ইরশাদ করলেন, “আমি হচ্ছি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে কুল-মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র কুরাইশ খান্দানে এবং কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘরে আমাকে প্রেরণ করেছেন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
    আরো বর্ণিত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজের মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনার্থে খুশি প্রকাশ করে ইরশাদ করেন-
    انى دعوت ابراهيم عليه السلام وبشارة عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضائت لها منه قصور الشام.
    অর্থ: “আমি হলাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দেখা সুস্বপ্ন ও অলৌকিক ঘটনার বাস্তব প্রতিফলন। আমার মাতা আমার বিলাদত শরীফ-এর সময় দেখেছিলেন যে, এক খ- বরকতময় “নূর” যমীনে তাশরীফ নিলেন এবং সে নূর মুবারক-এর আলোর প্রভাবে শাম দেশের বালাখানাসমূহ উনার দৃষ্টিগোচর হলো।” (শরহুস সুন্নাহ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
    উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহ থেকে এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই নিজের মীলাদ তথা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।

    হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেছেন

    উল্লেখ্য যে, বর্তমানে আমরা যেভাবে মজলিস করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিলো।
    যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
    অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত ও সালাম তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
    হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এসেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
    উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয় থেকে প্রথমত যে বিষয়টি প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করেছেন। আর আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুধু সমর্থনই করেননি বরং তিনি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মজলিস করার জন্যে উম্মতদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মজলিস করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
    এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম”-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
    قال ابو بكر الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
    অর্থ: “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
    وقال عمر رضى الله تعالى عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.
    অর্থ: “হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলকে অর্থাৎ বিলাদত শরীফ দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!
    وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.
    অর্থ: “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
    وقال على رضى الله تعالى عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.
    অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
    এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আতা ইবনে ইয়াছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “একদা আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমীপে গেলাম এবং আরজু করলাম, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে না’ত শরীফ তাওরাত কিতাবে আছে তা আমাকে আবৃত্তি করে শুনান। তখন তিনি আমাকে তা আবৃত্তি করে শুনালেন।” (বুখারী শরীফ, দারেমী, মিশকাত)
    অর্থাৎ তাওরাত শরীফ-এ বর্ণিত মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠ করে শুনালেন।
    মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা মুসলমান তো অবশ্যই বরং জিন-ইনসানসহ কায়িনাতের সকলের জন্যই ফরযে আইন। Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top