728x90 AdSpace

  • Latest News

    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু আবদিল্লাহ জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস্ সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক



    পবিত্র নাম মুবারক ও কুনিয়াত মুবারক:
    আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম উনার মুবারক নাম হচ্ছে জা’ফর। যার অর্থ সাগর বা জামিউন নিছবত। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন, ইলম, আক্বল, সমঝে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তিতে সাগরতুল্য জামিউন নিসবত। মুবারক কুনিয়াত- আবু আবদিল্লাহ ও আবু ইসমাঈল। ‘ছাদিক্ব¡’ হচ্ছে উনার খাছ লক্বব মুবারক।
    পবিত্র নছব মুবারক বা বংশ মুবারক পরিচিতি:
    পিতার দিক থেকে উনার মুবারক নসব হচ্ছে হযরত জা’ফর আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত মুহম্মদ আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আলী আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আলী মুরতাজা আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিত পিতার নাম মুবারক- হযরত আবু জাফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ইমাম ক্বসিম বিন হযরত মুহম্মদ বিন হযরত সিদ্দীকে আকবর আলাইহাস সালাম। হযরত উম্মে ফারওয়া আলাইহাস সালাম উনার মাতা ছিলেন হযরত আসমা বিনতে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। মাতার দিক থেকে উনার নসব মুবারক হচ্ছে হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত কাশিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম।

    পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর তারিখ, সন মাস, বার ও স্থান:
    ইমামুল মুহসিনীন, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আশিক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম তিনি ৯৬ হিজরীতে ১৭ই রবিউল আউয়াল শরীফ-এ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি অর্থাৎ সোমবার শরীফ-এ পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বিলাদত শরীফ লাভ করেন। এ মতটিই অধিক ছহীহ এবং নির্ভরযোগ্য।
    মুবারক গুণাবলীর বর্ণনা:
    তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। যাঁর প্রতিটি দোয়া বা আরজু কবুল করা হয় উনাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বলা হয়। তিনি যখন যা দোয়া করতেন তখন তাই কবুল হতো। সুবাহনাল্লাহ!
    বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একদিন ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম উনাকে এই মর্মে দোয়া করতে অনুরোধ করলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে এত অর্থ সম্পদ দান করুন, যাতে সে অনেক হজ্জ করতে পারে। তিনি দোয়া করলেন: আয় আল্লাহ পাক! এই ব্যক্তিকে এত অর্থ দিন, যেন সে পঞ্চাশবার হজ্জ করতে পারে। সে মতে লোকটি পূর্ণ পঞ্চাশবার হজ্জ করে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৫)
    একজন রাবী বর্ণনা করেন, একদা আমরা হযরত ইমাম আলাইহিস সালাম উনার সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে আমাদেরকে এক জায়গায় শুষ্ক খেজুর গাছের কাছে অবস্থান করতে হলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি চুপিচুপি কিছু পড়লেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ তিনি শুষ্ক খেজুর গাছগুলোর দিকে মুখ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মধ্যে আমাদের জন্যে যে রিযিক গচ্ছিত রেখেছেন, তা দিয়ে আমাদের মেহমানদারী করো। অতঃপর আমি দেখলাম গাছগুলো উনার দিকে নুয়ে পড়ল। টাটকা খেজুরগুচ্ছ ঝুলন্ত অবস্থায়। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে আস এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে খাও। আমি উনার আদেশ পালন করতঃ খেজুর খেলাম। এমন মিষ্টি খেজুর আমরা পূর্বে কখনো খাইনি। সেখানে জনৈক বেদুঈনও উপস্থিত ছিল। সে বলল, আজকের মতো যাদু আমি কখনো দেখিনি। নাঊযুবিল্লাহ! ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিস। আমরা যাদুকর নই। আমরা কেবল দোয়া করি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করে নেন। তুমি চাইলে আমার দোয়ায় তোমার আকৃতি বদলে যেতে পারে এবং তুমি একটা কুকুরের আকৃতি ধারণ করতে পার। বেদুঈন ছিল নিরেট মূর্খ। তাই বলল, হ্যাঁ, এখনি দোয়া করুন। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া করলেন, সাথে সাথে সে কুকুর হয়ে গেল এবং নিজ গৃহের দিকে পালিয়ে গেল। তিনি বর্ণনাকারীকে বললেন, এই কুকুরের পিছনে পিছনে যাও। আমি তার পিছনে পিছনে চললাম। সে গৃহে গিয়ে আপন সন্তান ও পরিবারবর্গের সামনে লেজ নাড়তে লাগল। তারা তাকে লাঠি মেরে তাড়িয়ে দিল। আমি ফিরে এসে ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে ঘটনা শুনালাম। ইতোমধ্যে সে (কুকুর)ও এসে গেল এবং ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সামনে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল। তার চোখ থেকে পানি পড়ছিল। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তার প্রতি দয়ালু হয়ে দোয়া করলেন। সে আবার মানবাকৃতি ধারণ করল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, হে বেদুঈন! আমি যা বলেছিলাম তা বিশ্বাস করো কি-না? সে বলল, হ্যাঁ। একবার নয়, হাজার বার বিশ্বাস করি। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৪)
    অন্য একজন রাবী বর্ণনা করেন, আমার এক বন্ধুকে খলীফা মনসুর আটক করেছিলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সাথে হজ্জের মওসুমে আরাফাতের ময়দানে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম- হুযূর! সে এখনও আটকাবস্থায় আছে। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি দোয়ার জন্য হাত উঠালেন। এক ঘণ্টা পরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমার বন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
    বর্ণনাকারী তিনি বললেন, হজ্জ সমাপনান্তে ফিরে এসে আমি আমার মুক্ত বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কিভাবে মুক্তি পেলে? সে বলল- আমাকে আরাফার দিন, আছরের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫২)
    তিনি ছিলেন ছহিবে কুন ফাইয়াকুন অর্থাৎ কুনফাইয়াকুন-এর অধিকারী:
    ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ছহিবে কুন ফাইয়াকুন-এর অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অতীব নৈকট্য ও তায়াল্লুকপ্রাপ্ত এমন অনেক ওলীআল্লাহ রয়েছেন উনারা যা হতে বলেন- সেটাই হয়।
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সেই ‘কুন ফাইয়াকুন’ গুণের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!এ প্রসঙ্গে কুতুবুল মাশায়িখ, আশিকে রসূল, আল্লামা মুল্লা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ “শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত” এ উল্লেখ করেন- একজন রাবী তিনি বলেন, একদিন মক্কা মোয়াযযমা শরীফ-এ আমি হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সাথে গমন করছিলাম। আমরা ঘটনাচক্রে এক মহিলার পাশ দিয়ে গেলাম। তার সামনে একটি মৃত গাভী ছিল। সে তার বাচ্চাদেরসহ সেই গাভীটির জন্য কান্নাকাটি করছিল। হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহিলা! তুমি কি চাও যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি গাভীটিকে জীবিত করে দিন? মহিলা বললো, আপনি এমনভাবে পরিহাস করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি উপহাস করছি না। আর আমরা কখনো কারো সাথে উপহাস করি না। অতঃপর তিনি দোয়া করলেন। গাভীর মাথা ও পা স্পর্শ করলেন। তারপর গাভীকে ডাক দিলেন। সে গাভীটি তখন তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের মধ্যে মিশে গেলেন। মহিলা উনাকে চিনতে পারলো না।
    আরো বর্ণিত আছে যে, জনৈক রাবী তিনি বলেন, একদিন আমি অনেক মানুষের সাথে হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। নছীহত মুবারকের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনাকে আদেশ করলেন চারটি পাখি ধরুন। অতঃপর এগুলোকে নিজের দিকে ডাকুন। তখন এসব পাখি কি একই প্রজাতির ছিল, না বিভিন্ন প্রজাতির? তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে তেমনি করে দেখাবো। আমরা বললাম, হ্যাঁ দেখান। তিনি বলেন, হে ময়ূর এদিকে এসো। তৎক্ষণাৎ ময়ূর এসে হাযির হলো। অতঃপর বলেন, হে কাক, এদিকে এসো। অমনি একটি কাক এসে গেল। তিনি বলেন, হে বাজ, এদিকে এসো। অমনি বাজ এসে গেল। তিনি বলেন, হে কবুতর, এদিকে এসো। তৎক্ষণাতৎ কবুতর এসে গেল। পাখি চতুষ্টয় এসে গেলে তিনি বলেন, এদেরকে যবেহ করে খ-বিখ- কর এবং একটির গোশত অন্যটির মধ্যে মিশ্রিত করে দাও। কিন্তু প্রত্যেকটির শির সযতেœ রাখবে।
    এরপর হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ময়ূরের শির ধরে বললেন, হে ময়ূর! এ কথা বলার সাথে সাথে আমরা দেখলাম যে, তার অস্থি, পাখা এবং গোশত এসে শিরের সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে এবং সে একটি আস্ত ময়ূরে পরিণত হয়েছে। অনুরূপভাবে অপর তিন পাখির বেলায়ও তিনি তাই করলেন এবং তারাও জীবিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
    ‘ছাদিক্ব’ লক্বব মুবারক-এর সত্যতা:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক ছিল ছাদিক্ব। ছাদিক্ব অর্থ সত্যবাদী। উনার সত্যবাদিতার গভীরতা এতদূর ব্যাপকতা লাভ করেছিল যে, সমস্ত মানুষের কাছে তিনি ছাদিক্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সবাই উনাকে ছাদিক্ব বলে ডাকতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ সত্যবাদী লোকের ছোহবত (সাহচর্য) লাভ করতে বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আর ছাদিক্ব বা সত্যবাদীগণ উনাদের সাথী হও।” (সূরা তওবা-১১৯)
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কতটুকু ছাদিক্ব বা সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন তা নিচের ঘটনাটি দ্বারাই কিছুটা আঁচ করা যায়।
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি একদিন বাদ মাগরিব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সে সময় খুব অন্ধকার ছিলো। রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো না। রাস্তার মধ্যে একটা কূপের মতো ছিলো। হয়তো কোন কালে সেটা কূপ ছিলো। সেটা এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তার গভীরতা রয়েছে। তবে তাতে পানি নেই। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে কুদরতীভাবে সে কূপের ভিতরে পৌঁছে গেলেন। কূপের পাশে একটা পাথর ছিল সেই কূপের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ হয়তো খুলে রেখেছিল। সেই কূপের মধ্যে কোনো পানি ছিল না। নরম মাটি ছিল। দুর্বা ঘাস ছিল, যার কারণে তিনি কোনো ব্যাথা পেলেন না। ভিতরে বসে তিনি ফিকির করতে লাগলেন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কোন হিকমত রয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয়।
    তিনি আরো ফিকির করতে লাগলেন, মানুষ আমাকে ছাদিক্ব (সত্যবাদী) বলে। ঠিক আছে, আমি যদি ছাদিক্ব হয়েই থাকি তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে কুদরতীভাবে হিফাযত করবেন। তিনি সেখানে বসে যিকির-ফিকিরে মশগুল হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি টের পেলেন যে, মনে হচ্ছে সে রাস্তা দিয়ে কোনো লোকজন যাচ্ছে। তারা এসে সে গর্তটা দেখতে পেয়ে মনে করলো, এই গর্তে যদি কোনো মানুষ পড়ে যায় তাহলে ব্যাথা পাবে। কাজেই সেই পাথরটা এনে তারা গর্তের মুখ বন্ধ করে দিলো।
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরেই মশগুল রইলেন। তিনি মনে মনে ফিকিরও করলেন, ঠিক আছে- আমি ছাদিক্ব না কাজিব, সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। তিনি যিকির-ফিকিরে মশগুল রইলেন।
    এমন সময় হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন। মনে হলো কেউ এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে পাথরটা সরিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর তিনি গরম বাতাস অনুভব করলেন। মনে হচ্ছে কেউ গরম বাতাস দিচ্ছে। অতঃপর তিনি আরো অনুভব করলেন যে, কোন কিছু উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচিয়ে ধরলো। প্যাঁচিয়ে ধরে সম্মানের সাথে আস্তে করে উনাকে গর্ত থেকে তুলে যমীনের উপর রেখে দিল। যখন রেখে দেয়া হলো তিনি দেখতে পেলেন যে, বিরাট আকারের একটি অজগর সাপ। সেটা এসে উনাকে সম্মানের সাথে প্যাঁচ দিয়ে ধরে যমীনে তুলে দিয়ে সাপটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
    তিনি মনে মনে ফিকির করতে লাগলেন- এটা কি হলো? তখন গায়িব (অদৃশ্য) থেকে নেদা (বলা) হলো- হে ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম! আজকে প্রমাণিত হলো যে, সত্যি আপনি ছাদিক্ব। মানুষ আপনাকে যে হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম বলে থাকে তার সত্যতার প্রমাণ হলো। আপনি সত্যি হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-১/৫)
    তিনি ছিলেন ‘ইমামুল মুহসিনীন’:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ইমামুল মুহসিনীন। অর্থাৎ তদানীন্ত সময়ের সকল মুহসিন ব্যক্তিগণ উনাদের ইমাম। মুহসিন হচ্ছেন- মু’মিন মুসলমানগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ এক শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব। উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহ পাক তিনিই বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (সূরা আ’রাফ: আয়াত শরীফ-৫৬)
    অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহসিনগণ উনাদেরকে বিশেষভাবে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
    ‘মুহসিন’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে- পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, নেক্কার। তবে এখানে মুহসিন বলতে যাঁরা ইহসানের সর্বোচ্চ দরজা হাছিল করেছেন উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ ইহসানের দরজা হাছিলকারী আর পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ এক নয়।
    উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনা মুতাবিক ইহসানের দরজা দু’টি। একটি হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরাতে দেখে ইবাদত করা। আর অপরটি হচ্ছে- ইবাদতকারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখছেন এ ধারণা অন্তরে বদ্ধমুল হওয়া। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- “মহান আল্লাহ পাক উনার এমনভাবে ইবাদত করবে যেন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা করবে যে, তিনি তোমাকে দেখতেছেন।” (মিশকাত শরীফ)
    এই দুটি দরজার যেকোনো একটি দরজা যিনি হাছিল করেছেন তাকে ‘মুহসিন’ বলে। আর যিনি প্রথম দরজাটি হাছিল করতে পেরেছেন তিনি হচ্ছেন আ’লা দরজার মহুসিন। এই আ’লা দরজার মুহসিনগণ উনাদের ইমাম হচ্ছেন, আওলাদে রসূল হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম। যার কারণে উনাকে ইমামুল মুহসিনীন বলা হয়। স্মর্তব্য যে, ইহসানের দরজা, হাছিল করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে- হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া। উনার নির্দেশ মত যিকির-ফিকির করা। ছোহবত ইখতিয়ার করা। রিয়াজত-মাশাককাত করা। সর্বোপরি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্তুষ্টি হাছিল করা। এটা ব্যতীত ইহসানের দরজা লাভ করা যায় না।
    উল্লেখ্য যে, আমরা “মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরতে দেখার বিষয়টি এজন্য বলেছি, কারণ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা (বিশ্বাস) হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কেউই দুনিয়াতে হাক্বীক্বীভাবে দেখতে পাবে না। যারা হাক্বাক্বীভাবে দেখার দাবি করবে তারা কাফির হবে। যারা দেখেছেন বা দেখবেন তারা মিছালী ছূরতে দেখেছেন বা দেখবেন।
    ‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ উনার বিশেষ লক্বব মুবারক:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছে “ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন”। তদানীন্তন সময়ের সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাকে ‘ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন’ লক্বব মুবারক দ্বারা সম্বোধন করতেন। “ইমামুস্ ছিদ্দীক্বীন” অর্থ ছিদ্দীক্বীনগণ উনাদের ইমাম। তদানীন্তন সময়ের সকল ছিদ্দীক্বগণ উনাদেরই ইমাম ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য যে, ছিদ্দীক্ব তথা চরম সত্যবাদী আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের একটি বিশেষ শ্রেণী। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই ছিলেন ছিদ্দীক্ব। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যেও ছিদ্দীক্ব ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই সকল নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ছিদ্দীক্ব লক্বব মুবারক-এ সম্বোধন করেছেন। তবে সব ছিদ্দীক্বই এক রকম নয়। সবাইকে সমপর্যায়ের মনে করা কাট্টা কুফরী। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে যাঁরা ছিদ্দীক্ব ছিলেন উনারা।
    ছিদ্দীক্বীয়াতের মাক্বাম হচ্ছে বিশেষ একটি মাক্বাম। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের পরেই এই মাক্বামে উপনীত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা। ছিদ্দীকী¡য়াতের মাক্বাম প্রাপ্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ ফযল-করমের অন্তর্ভুক্ত। তবে বান্দা যখন সত্য কথা বলতে থাকে এবং সত্য পথে চলতে থাকে তখনও মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বান্দাকে ছিদ্দীক্ব হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ছিদ্দীক্বীয়াতের মাক্বাম দান করেন।
    তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ইলমে তাছাউফ হাছিল করা তথা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত ব্যতীত সত্য কথা বলা, সত্য পথে চলা এবং তাতে ইস্তিক্বামাত (অবিচল) থাকা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিদ্দীক্বগণ উনাদের শান মুবারক-এ বলেন- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ এবং ছলিহীনগণ উনাদেরকে বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন। আর উনারাই হচ্ছেন উত্তম সঙ্গী।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ- ৬৯)
    স্মর্তব্য যে, ছিদ্দীক্বীনগণ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনই নৈকট্য প্রাপ্ত যে, উনারা যা বলেন মহান আল্লাহ পাক তা সত্যে রূপান্তরিত করেন। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার জীবনী মুবারকে এরূপ অনেক ঘটনা রয়েছে।
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন তথা ছিদ্দীক্বগণ উনাদের ইমাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমনই নৈকট্যপ্রাপ্ত ছিলেন যে, তিনি যা চাইতেন বা যা হতে বলতেন তাই হতো এবং তাই পেতেন। সুবহানাল্লাহ! এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “একবার জনৈক ব্যক্তি সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে দশ হাজার দীনার নিয়ে এসে বলল, “আমি হজ্জে যাচ্ছি। আপনি আমার জন্য এই দীনার দিয়ে কোন একটি সরাইখানা কিনবেন, যাতে আমি ফিরে এসে সপরিবারে তাতে বসবাস করতে পারি।” হজ্জ থেকে ফিরে এসে সেই ব্যক্তি সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে হাজির হলো। তাকে দেখে তিনি বললেন, “আমি তোমার জন্য জান্নাতে সরাইখানা কিনেছি। যার এক সীমা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারকের নিচে এক সীমা আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নীচে, এক সীমা সাইয়্যিদু শাবাবী আহলিল জান্নাহ হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নিচে এবং এক সীমা সাইয়্যিদু শাবাবী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নিচে খতম (শেষ) হয়েছে। আর এই নাও, আমি তা লিখে দিচ্ছি। লোকটি একথা শুনে বলল, আমি এতে অনেক খুশি। সে মতে সে লিখিত পরওয়ানা নিয়ে নিজ ঘরে ফিরে গেলো। সে বাড়িতে পৌঁছার সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়লো। সে তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে ওছীয়ত করলো যে, আমার মৃত্যুর পর কাফন-দাফন শেষে এই লিখিত পরওয়ানাটি আমার সাথে কবরে রেখে দিবে। আত্মীয়-স্বজনরা তার লাশ দাফন করার সময় ওছীয়ত মুতাবিক সেই লিখিত পরওয়ানাটি উনার কবরে রেখে দিল। কিন্তু পরের দিন দেখতে পেল যে, সেই পরওয়ানাটি কবরের উপরে পড়ে আছে। আর তার অপর পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে যে, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছিলেন তা পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ সত্যে রূপান্তরিত হয়েছে। কাজেই এই পরওয়ানাটির আর প্রয়োজন নেই। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত/২৫৫)

    তিনি ছিলেন সুলত্বানুল মাশায়িখ বা শাইখুল মাশায়িখ:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ অর্থ সমস্ত শায়খ বা মুর্শিদগণ উনাদের বাদশাহ। ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তদানিন্তন সময়ের সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সুলতান বা বাদশাহ ছিলেন। উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ছাড়া কেউই তাকমীলে বা পূর্ণতায় পৌঁছতে পারতেন না। সে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হতে অসংখ্য আল্লাহ প্রেমিক উনার মুবারক ছোহবতে থেকে সেই খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের জন্য মদীনা শরীফ-এ চলে যেতেন। স্বয়ং ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আহলে বাইত শরীফ উনাদের সেই খাছ নিয়ামত হাছিলের জন্য সুদূর কুফা থেকে মদীনা শরীফ-এ চলে যেতেন এবং উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতেন। ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ছোহবতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন যে, “আমি আবু নো’মান (ইমামে আ’যম) যদি দু’টি বছর না পেতাম তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতাম”। (তোহফায়ে ইসনা আশারীয়া) অথচ সেই ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মর্যাদা-মর্তবা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, “দ্বীন যদি সুরাইয়া তারকার দিকে চলে যায় তবুও সেখান থেকে পারস্যের এক ব্যক্তি তাকে ফিরিয়ে আনবেন।” সুবহানাল্লাহ! সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, মূলতঃ পারস্যের সেই ব্যক্তিই হচ্ছেন ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ! (তাবয়ীদুছু ছহীফাহ)
    তিনি ছিলেন ছহিবে ইলমে গইব:
    মহান আল্লাহ পাক তিনি আলিমুল গাইব। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘মুত্তালা আলাল গাইব’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ইলমে গাইব হাদিয়া করেছেন। এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা-বিশ্বাস।
    আহলে বাইত, আওলাদে রসূল এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা ওয়ারিছ সূত্রে সেই ইলমে গাইব-এর অধিকারী। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ওয়ারিছ সূত্রে সেই ইলমে গাইব-এর অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল, ইমামুল হুদা, আল্লামা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শাওয়াহিদুন্ নুবুওয়াত’ কিতাবের ২৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- হযরত বশীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “আমি মদীনা শরীফ-এ পৌঁছার পর যখন গোসলের উদ্দেশ্যে হাম্মামখানায় যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলাম। তখন দেখলাম সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার যিয়ারতের জন্য অনেক লোক উনার দরবার শরীফ-এ গমন করছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে উনার ছোহবত হাছিলের জন্য অধীর আগ্রহের সাথে ইন্তিজার ছিলাম। এটাকে বিরাট সুযোগ ভেবে গোসল না করেই সেই লোকদের সাথে চললাম। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার দওলতখানায় হাজির হলাম। তিনি আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, হে বশীর! তুমি মনে হয় জান না যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের এবং উনাদের আল-আওলাদগণ উনাদের দরবার শরীফ-এ নাপাক শরীরে আসা যায় না। আমি বললাম, হে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমি বন্ধু-বান্ধবদেরকে আপনার দরবার শরীফ-এর দিকে আসতে দেখে আশঙ্কা করলাম যে, সম্ভবতঃ এরপর আপনার যিয়ারতের সৌভাগ্য আর হবে না। এ কারণেই আমি গোসল না করেই চলে এসেছি। হে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তওবা করতেছি যে, ভবিষ্যতে আর কখনো এরূপ করবো না। অতঃপর বাইরে চলে এলাম।
    অপর একজন রাবী বা বর্ণনাকারী তিনি বর্ণনা করেন, আমি মক্কা মুয়াযযামায় একটি চাদর কিনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, এটি কাউকেও দিব না, যাতে মৃত্যুর পর আমার কাফনের কাজে লাগে। কিন্তু আরাফাত থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসতেই আমার চাদর হারিয়ে গেল। আমি মনে মনে খুব ব্যথা পেলাম। আমি সকালে মুযদালিফা থেকে মিনায় এসে মসজিদে খায়ফে বসে গেলাম। হঠাৎ সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আরিফীন, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললো, সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আপনাকে ডাকছেন। আমি যথাশীঘ্রই উনার কাছে গেলাম এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সামনে বসে গেলাম। তিনি আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তুমি কি তোমার চাদরটি ফিরে পেতে চাও, যা তোমার মৃত্যুর পর তোমার কাফনের কাজে আসবে? আমি আরজ করলাম, হ্যাঁ, (হুযূর দিয়ে দিন) কিন্তু সেটি তো হারিয়ে গেছে। তিনি উনার গোলামকে ডাক দিলেন। সে একটি চাদর নিয়ে উপস্থিত হল। আমি দেখলাম, সেটি আমারই হারানো চাদর। তিনি বললেন, এটি নিয়ে যাও এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করো।
    তিনি ছিলেন আছবারুছ ছবিরীন:
    আছবারুছ ছবিরীন অর্থ ধৈর্য্যশীলগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৈর্যশীল। সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ধৈর্যশীলগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধৈর্যশীল। মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত সকল লোকের মুখে মুখে উনার ধৈর্যশীলতার কথা প্রচারিত হতো। ছবর-এর মাক্বাম হাছিল কারীগণ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বন্ধু। উনাদের প্রশংসা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ধৈর্যধারণকারীগণ উনাদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ-৪৬) তিনি আরো বলেন, “নিশ্চয়ই ছবরকারীগণ উনাদের প্রতিদান বেহিসাবে প্রদান করা হবে।” (সূরা জুমার ১০)
    ছবর ও শোকর এর মাক্বাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ মাক্বাম। সেই শ্রেষ্ঠ মাক্বাম হাছিল করতে সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে রিয়াজত-মাশাককাত করতে হয়নি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে খাছভাবে তা হাদিয়া করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী সেদিকেই দালালত করেছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা উনাকে স্বীয় রহমত (নিয়ামত) খাছভাবে দান করেন।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-১০৫)
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি কত বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন সেটা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। ইসলামে পরম মর্যাদার অধিকারী দুই ব্যক্তির সাথে ছিল উনার রক্তের সম্পর্ক। এক. পিতার দিক থেকে শেরে খোদা ইসলামের বিশিষ্ট ও নির্ভীক বুযূর্গ, ইমাম হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে। দুই. মায়ের দিক থেকে ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সাথে।

    তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সখী বা দানশীল:
    ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আজওয়াদুন্ নাস তথা সকলের চেয়ে সর্বাধিক দানশীল। এই দানশীলতার গুণ পূর্বপুরুষগণ থেকে তিনিই পেয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে নাযিল করেন- “উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-সন্তুষ্টির জন্য মিসকীন, ইয়াতিম ও বন্দীদেরকে খাদ্য দান করেন। তাঁরা বলেন, কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।” (সূরা দাহর : আয়াত শরীফ ৮-৯)
    এ আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা অধিক সখী বা দানশীলগণের মধ্যে একজন।
    অতঃপর উনার আল-আওলাদগণ সকলেই এই গুণের অধিকারী ছিলেন। তাই আমরা দেখতে পাই সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি অন্ধকার রাতে নিজের হাতে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে অনাহার ক্লিষ্ট লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন।
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনিও অত্যন্ত সখী বা দানশীল ছিলেন। অভাবগ্রস্ত কাউকে দেখলেই বিনা দ্বিধায় দান-খয়রাত করতেন। এটা উনার পক্ষে বিস্ময়কর কিছুই না। কারণ, তিনি যে পরিবার ও পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছেন তাতে উনার হাল বা অবস্থা হওয়াই ছিল স্বাভাবিক।  তিনি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে দান খয়রাত করতেন। এ ব্যাপারে তিনি উনার দাদা সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। টুকরী ভর্তি গোশ্ত রুটি এবং টাকা-পয়সা নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে মদীনা শরীফ-এর মহল্লার বাইরে বেরিয়ে পড়তেন। অভাবগ্রস্তদের মধ্যে তা বণ্টন করে ফিরে আসতেন। কিন্তু লোকে জানতে পারত না কে এই দাতা? অবশ্য উনার বিছাল শরীফ-এর পর এই রহস্য প্রকাশ হয়েছিল। ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ এবং ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থে লিখিত আছে, ‘তিনি দানশীলতায় এমন মুক্তহস্ত ছিলেন যে, দান করার পর দেখা যেত উনার পরিবারের একবেলার খাওয়ার মত কিছুই থাকতো না। সুবহানাল্লাহ! উনার এই দানশীলতা এটাই প্রমাণ করে যে, জনসাধারণের সুখ-স্বাচ্ছন্দের প্রতি তিনি কত বেশি খেয়াল রাখতেন। দান করে তা গোপন রাখাতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কত বেশি ইখলাছের অধিকারী ছিলেন। তিনি উনার নানাজান মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই হাদীছ শরীফ খানার উপর পুরোপুরি আমল করতেন। যেখানে তিনি বলেছেন- “ঐ দান উত্তম যা ডান হাত দ্বারা করলে বাম হাত জানেনা।” অর্থাৎ অত্যন্ত গোপনীয় দান।
    সহনশীলতার অনুপম দৃষ্টান্ত:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত সহনশীল ছিলেন। তিনি কখনও মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা দিতেন না। বরং অন্যায়কারীর সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সদ্ব্যবহার দ্বারা অন্যায়কে সরিয়ে দিন। ফলে আপনার ও যে ব্যক্তির মধ্যে শত্রুতা ছিল (উভয়ের মধ্যে) হঠাৎ প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সৃষ্টি হবে।”
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার খাদিমদের সাথে অত্যন্ত বিনম্র ব্যবহার করতেন। বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি উনার কোন খাদিমকে একটি কাজের জন্য পাঠান। খাদিমের আসতে বিলম্ব দেখে তিনি তার খোঁজে বের হলেন। দেখতে পেলেন, উনার সেই খাদিম ঘুমাচ্ছে। তিনি খাদিমের শিয়রে বসে পাখা দ্বারা বাতাস করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ!
    দুই দিক থেকে তরীক্বতের নিছবত হাছিল:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তরীক্বতের ক্ষেত্রে দু’দিক থেকে নিছবত পেয়েছিলেন। দু’দিক থেকেই তিনি খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন।
    প্রথমতঃ স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল মুত্তাক্বীন, সুলত্বানুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন। তিনি উনাকে স্বীয় ইমাম পদে সমাসীন করেন। তিনিই হচ্ছেন উনার খাছ গদ্দিনসীন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে প্রাপ্ত খাছ নিয়ামত সীনা-ব-সীনা তিনি উনার মাধ্যমেই পেয়েছেন।
    দ্বিতীয়তঃ পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাসিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার থেকেও তিনি খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন। যিনি ছিলেন উনার সম্মানিত নানাজান। পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। উনার থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন। মূলত, তিনিই ছিলেন উনার প্রধান খলীফা।আর ছহিবে রসূলিল্লাহ, ছাহিবুল আসরার হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবতে থেকে খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন। উনার বিছাল শরীফ-এর পর খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আমিরুল মু’মিনীন, ছিদ্দিকে আকবর, আফজালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করতঃ খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছিলেন। (ইকতিবাসূল আনওয়ার/১৩৭)
    পবিত্র বিছাল শরীফ-এর তারিখ, সন, মাস, বার ও স্থান:
    সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৮ হিজরী সনে এই রজবুল হারাম মাসেরই ১৪ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ-এ বাদ ঈশা পবিত্র মদীনা শরীফ-এ ¬পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন।
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু আবদিল্লাহ জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস্ সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top