সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ঈদ কয় দিন?
সবচেয়ে বড় ঈদ কোন দিন???
যারা বলে শরীয়তে দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব-পর্ব-১
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মু’মিনগণ উনাদের জন্য বছরে ঈদের দিন বা খুশির দিন হলো- জুমুয়ার দিন শুক্রবার ৫০দিন, সোমবার শরীফ ৫০দিন, আরাফার ১দিন, ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ১দিন, ঈদুল ফিতর ১দিন, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ৩দিন, ফরয রোযার ২৯ বা ৩০ দিন, সুন্নত রোযার ৪২ দিন সর্বমোট ১৭৭ বা ১৭৮ দিন। অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বা খুশির দিন।
আর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বড় ঈদ তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর অর্থাৎ “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ”।
কারো প্রশ্ন জাগতে পারে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে এত ঈদের দলীল আছে কি?
আর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লােই সবচেয়ে বড় ঈদ হিসেবে শরীয়তে দলীল আছে কি?
জী অবশ্যই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে বর্ণিত সব ঈদেরই বর্ণনা ও দলীল রয়েছে। তবে প্রথমে একাধিক ঈদের দলীল আদিল্লা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
২য় পর্বে সবচেয়ে বড় ঈদের দিনের দলীল-আদিল্লা পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
যারা বলে “শরীয়তে দু’ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই” তারা প্রকৃতপক্ষে কিল্লতে ইলম, কিল্লতে ফাহম (কম জ্ঞান, কম বুঝ) অর্থাৎ কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই তারা একথা বলে থাকে।
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ দ্বারা যেভাবে দু’ঈদ ছাবিত হয়েছে বা রয়েছে ঠিক একইভাবে অন্যান্য ঈদ এবং ঈদে মীলাদুন নবী সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর হিসেবে ছাবিত বা প্রমাণিত হয়েছে।
যেমন, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى
عنه قال قدم النبى صلى الله عليه وسلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما فقال ما
هذان اليومان قالوا كنا نلعب فيهما فى الجاهلية فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم
قد ابدل كم الله بهما خيرا منهما يوم الاضحى ويوم الفطر.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মদীনা শরীফ উনার মধ্যে (হিযরত মুবারক করেন) তাশরীফ নিলেন (তখন তিনি দেখতে পেলেন যে) পবিত্র মদীনা শরীফবাসীগণ সেখানে দু’দিন খেলাধুলা করে থাকে। অতঃপর তিনি বললেন, এ দু’দিন কোন দিন? তারা বললো, আমরা এ দু’দিনে জাহিলী যুগে খেলাধুলা করতাম। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদের জন্য উত্তম দু’দিন দিয়েছেন, তাহলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।” (আবু দাউদ, মিশকাত)
এরপর হতে মুসলমানদের মধ্যে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর পালিত হয়ে আসছে।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হাক্বীক্বী ঈদ। কারণ, সেই দিন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ আনেন।
উল্লেখ্য, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায় শুক্রবার দিন হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে শুক্রবার দিনকে ঈদের দিন বা খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عبيد بن السباق
مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قال قال رسول الله صلى الله عليه
وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن
كان عنده طيب فلايضره ان يمس منه وعليكم بالسواك.
অর্থ: “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সনদে বর্ণনা করেন, আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুত্তাছিল সনদে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি (জুমুয়ার দিন) এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা এ দিনে গোসল করবে এবং যার নিকট কোন সুগন্ধি (আতর) আছে সে কোনরূপ অসুবিধা মনে না করে তা মেখে নিবে বা ব্যবহার করবে আর অবশ্যই তোমরা মিসওয়াক করবে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মুয়াত্তা মালিক শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى ليلة بن عبد
المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند
الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم
واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها
شيئا الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض
ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.
অর্থ: “হযরত আবু লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
স্মরণীয়, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে যদি জুমুয়ার দিন ঈদের দিন বা খুশির দিন হতে পারে। শুধু তাই নয় এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়েও সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত ও মহান হয় তাহলে যে মহান ব্যক্তিত্বের উছীলায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার যমীনে আগমন ঘটলো সেই মহান ব্যক্তির সাথে যেই দিনটি সম্পর্কযুক্ত সেই দিনটির সম্মান, ফযীলত ও মহত্ত্ব কতটুকু হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অর্থাৎ তা অবশ্যই ঈদের দিন হবে। এমনকি জুমুয়ার দিন অপেক্ষাও তা হবে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ঈদের দিন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله
تعالى عنه انه قرأ "اليوم اكملت لكم دينكم" الاية وعنده يهودى فقال
لونزلت هذه الاية علينا لاتخذناها عيدا فقال ابن عباس فانها نزلت فى يوم عيدين فى
يوم جمعة ويوم عرفة.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা
اليوم اكملت لكم دينكم
الاية.
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, “যদি এই পবিত্র আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো আমরা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন এক সাথে দু’ঈদ ছিল- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।” (তিরমিযী শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুহম্মদীর জন্য জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বুখারী ও মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরাফার দিনকে উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
للصائم فرحتان قرحة عند
فطره وفرحة عند لقاء ربه.
অর্থ: “রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি রয়েছে। একটি তার ফিতর বা ইফতারের সময় এবং অপরটি তার রবের সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি বা ঈদের কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে তার ইন্তিকালের পর মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তার ফিতর বা ইফতারের সময়। আর ফিতর বা ইফতার হচ্ছে দু’প্রকার (১) কুবরা, (২) ছুগরা।
কুবরা হচ্ছে ঈদুল ফিতর যা হাদীছ শরীফ দ্বারা ঈদের দিন হিসেবে প্রমাণিত।
আর ছুগরা হচ্ছে যা রোযাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকে। এটা প্রতি বছরে ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ফিতর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। ফিতরকেই ইফতার বলা হয়। রোযাদার মাহে রমাদ্বান শরীফ পূর্ণ এক মাস অর্থাৎ ২৯ দিন বা ৩০ দিন রোযা রাখার পর পহেলা শাওওয়াল দিনের বেলা পানাহার প্রভৃতি ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর কার্যের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করতঃ খুশি বা ঈদ করে। এটাই ইফতারীয়ে কুবরা যা ঈদুল ফিতর নামে পরিচিত।
আর রোযাদার পূর্ণ একদিন অর্থাৎ ছুবহে ছাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা রাখার পর সন্ধা বেলা পানাহার প্রভৃতি ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর কার্যের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করতঃ খুশি বা ঈদ করে। এটাই ইফতারীয়ে ছুগরা বা ঈদুল লাইল নামে অভিহিত।
ইফতারীয়ে ছুগরা বা ঈদুল লাইল ফরয রোযা হিসেবে বছরে ২৯ বা ৩০ দিন। আর সুন্নত রোযা হিসেবে কমপক্ষে মুহররম মাসে ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ ২টি এবং তার সাথে আরো ১টি মোট ৩টি, ‘শাওওয়াল শরীফ মাসে ৬টি, যিলহজ্জ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি এবং অন্যান্য মাসসমূহে ৩টি করে ২৪টি সর্বমোট ৪২ দিন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
من صام رمضان ثم اتبعه
ستا من شوال كان كصيام الدهر.
অর্থ: “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখার পর শাওওয়াল শরীফ মাস উনার ছয়টি রোযা রাখলে সে যেন পূর্ণ বছর রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حفصة رضى الله تعالى
عنها قالت اربع لم تكن يدعهن النبى صلى الله عليه وسلم صيام عاشوراء والعشر وثلثة
ايام من كل شهر وركعتان قبل الفجر.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, “চারটি জিনিষ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ছাড়েননি। (১) যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোযা, (অর্থাৎ প্রথম নয় দিন) (২) আশুরার দিনের রোযা, (৩) প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা, (৪) ফযরের ফরয নামযের পূর্বে দু’রাকায়াত সুন্নত নামায।” (নাসাঈ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لكل مؤمن فى كل شهر
اربعة اعياد او خمسة اعياد.
অর্থ: “প্রত্যেক মু’মিন উনাদের জন্য প্রতি মাসে চারটি ঈদ অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে।” (হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মু’মিন উনাদের জন্য প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি ঈদের কথা বলা হয়েছে। কারণ, প্রতি মাসে সোমবার শরীফ ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে। আর শুক্রবারও প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের দ্বারা ছাবিত হলো, মু’মিনগণ উনাদের ঈদ শুধু দু’টিই নয়। অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরই নয় আরো অনেক ঈদ রয়েছে। শুক্রবার মু’মিনগণ উনাদের ঈদের দিন। আরবী বা চান্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি শুক্রবার হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনও মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন।
একইভাবে সোমবার শরীফ দিনও মু’মিনগণ উনাদের ঈদের দিন। চান্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনই মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন। আর আরবী বছরে ১২টি মাসের মধ্যে একটি মাস হচ্ছে রমাদ্বান শরীফ। যা ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। এবং এ ২৯ বা ৩০ দিন রোযাদার মু’মিনগণ উনাদের জন্য খুশির দিন বা ঈদের দিন।
সুন্নত রোযার ৪২ দিন খুশির বা ঈদের দিন।
মু’মিনগণ উনাদের জন্য আরাফার দিন ঈদের দিন বা খুশির দিন।
১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ঈদের দিন বা খুশির দিন।
এখন সর্বমোট মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন বা খুশির দিন হলো- শুক্রবার ৫০দিন, সোমবার শরীফ ৫০দিন, আরাফার ১দিন, ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ১দিন, ঈদুল ফিতর ১দিন, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ৩দিন, ফরয রোযার ২৯ বা ৩০ দিন, সুন্নত রোযার ৪২ দিন সর্বমোট ১৭৭ বা ১৭৮ দিন। অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বা খুশির দিন।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে “শরীয়তে দু’ঈদ অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই।” তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ।
প্রকৃতপক্ষে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মু’মিন, মুসলমানদের জন্য ঈদ শুধুমাত্র দু’টিই নয়, আরোও রয়েছে। কাজেই ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এ দু’ঈদ ব্যতীত অন্যান্য ঈদকে অস্বীকার করার অর্থ হলো, কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকেই অস্বীকার করা। আর যারা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করে তারা মু’মিন-মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(সংগৃহিত)

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন