জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস্ সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক
ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু আবদিল্লাহ জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস্ সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে
উমরী মুবারক-1পবিত্র নাম মুবারক ও কুনিয়াত মুবারক:
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম উনার মুবারক নাম হচ্ছে জা’ফর। যার অর্থ সাগর বা জামিউন নিছবত। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন, ইলম, আক্বল, সমঝে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তিতে সাগরতুল্য জামিউন নিছবত। মুবারক কুনিয়াত- আবু আবদিল্লাহ ও আবু ইসমাঈল। ‘ছাদিক্ব¡’ হচ্ছে উনার খাছ লক্বব মুবারক।
পবিত্র নছব মুবারক বা বংশ মুবারক পরিচিতি:
পিতার দিক থেকে উনার মুবারক নছব হচ্ছে হযরত জা’ফর আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম ইবনে ইমামুল আউওয়াল হযরত আলী আওসাত যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আলী মুরতাজা আলাইহিস সালাম।
উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক- হযরত আবু জা’ফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম। উনার সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ইমাম ক্বসিম বিন হযরত মুহম্মদ বিন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহাস সালাম। হযরত উম্মে ফারওয়া আলাইহাস উনার মাতা ছিলেন হযরত আসমা বিনতে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহাস সালাম। মাতা উনার দিক থেকে উনার নছব মুবারক হচ্ছে হযরত উম্মে ফারওয়া বিনতে হযরত ক্বসিম ইবনে হযরত মুহম্মদ ইবনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম।
পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার তারিখ,
সন মাস, বার ও স্থান:
ইমামুল মুহসিনীন, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আশিক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম তিনি ৯৬ হিজরীতে ১৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ-এ পবিত্র মদীনা শরীফ-এ বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। এ মতটিই অধিক ছহীহ এবং নির্ভরযোগ্য।
মুবারক গুণাবলীর বর্ণনা :
তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত:
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। যাঁর প্রতিটি দোয়া বা আরজু কবুল করা হয় উনাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বলা হয়। তিনি যখন যা দোয়া করতেন তখন তাই কবুল হতো। সুবাহনাল্লাহ!
বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একদিন ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব¡ আলাইহিস সালাম উনাকে এই মর্মে দোয়া করতে অনুরোধ করলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে এতো অর্থ সম্পদ দান করুন, যাতে সে অনেকবার পবিত্র হজ্জ করতে পারে। তিনি দোয়া করলেন: আয় মহান আল্লাহ পাক! এই ব্যক্তিকে এতো অর্থ দিন, যেন সে পঞ্চাশবার পবিত্র হজ্জ করতে পারে। সে মতে লোকটি পূর্ণ পঞ্চাশবার পবিত্র হজ্জ করে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৫)
একজন রাবী বর্ণনা করেন, একদা আমরা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে আমাদেরকে এক জায়গায় শুষ্ক খেজুর গাছের কাছে অবস্থান করতে হলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি চুপিচুপি কিছু পড়লেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ তিনি শুষ্ক খেজুর গাছগুলোর দিকে মুখ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মধ্যে আমাদের জন্যে যে রিযিক গচ্ছিত রেখেছেন, তা দিয়ে আমাদের মেহমানদারী করো। অতঃপর আমি দেখলাম গাছগুলো উনার দিকে নুয়ে পড়লো। টাটকা খেজুরগুচ্ছ ঝুলন্ত অবস্থায়। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে আসো এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে খাও। আমি উনার আদেশ পালন করতঃ খেজুর খেলাম। এমন মিষ্টি খেজুর আমরা পূর্বে কখনো খাইনি।
সেখানে জনৈক বেদুঈনও উপস্থিত ছিল। সে বলল, আজকের মতো যাদু আমি কখনো দেখিনি। নাঊযুবিল্লাহ! ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিছ। আমরা যাদুকর নই। আমরা কেবল দোয়া করি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করে নেন। তুমি চাইলে আমার দোয়ায় তোমার আকৃতি বদলে যেতে পারে এবং তুমি একটা কুকুরের আকৃতি ধারণ করতে পার।
বেদুঈন ছিল নিরেট মূর্খ। তাই বলল, হ্যাঁ, এখনি দোয়া করুন। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া করলেন, সাথে সাথে সে কুকুর হয়ে গেল এবং নিজ গৃহের দিকে পালিয়ে গেল। তিনি বর্ণনাকারীকে বললেন, এই কুকুরের পিছনে পিছনে যাও। আমি তার পিছনে পিছনে চললাম। সে গৃহে গিয়ে আপন সন্তান ও পরিবারবর্গের সামনে লেজ নাড়তে লাগল। তারা তাকে লাঠি মেরে তাড়িয়ে দিলো। আমি ফিরে এসে ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে ঘটনা শুনালাম। ইতোমধ্যে সে (কুকুর)ও এসে গেhftfghল এবং ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সামনে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল। তার চোখ থেকে পানি পড়ছিল। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তার প্রতি দয়ালু হয়ে দোয়া করলেন। সে আবার মানবাকৃতি ধারণ করল। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, হে বেদুঈন! আমি যা বলেছিলাম তা বিশ্বাস করো কি-না? সে বলল, হ্যাঁ। একবার নয়, হাজারবার বিশ্বাস করি। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৪)
অন্য একজন রাবী বর্ণনা করেন, আমার এক বন্ধুকে খলীফা মনসুর আটক করেছিল। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জের মওসুমে পবিত্র আরাফাতের ময়দানে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম- হুযূর! সে এখনো আটকাবস্থায় আছে। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি দোয়ার জন্য হাত উঠালেন। এক ঘণ্টা পরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমার বন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
বর্ণনাকারী তিনি বললেন, হজ্জ সমাপনান্তে ফিরে এসে আমি আমার মুক্ত বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কখন মুক্তি পেলে? সে বলল- আমাকে পবিত্র আরাফার দিন, আছরের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫২)
মুবারক গুণাবলীর বর্ণনা :
তিনি ছিলেন ছহিবে কুন ফা-ইয়াকুন অর্থাৎ কুন ফা-ইয়াকুন উনার অধিকারী:
ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ছহিবে কুন ফা-ইয়াকুন উনার অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অতীব নৈকট্য ও তায়াল্লুকপ্রাপ্ত এমন অনেক ওলীআল্লাহ রয়েছেন উনারা যা হতে বলেন- সেটাই হয়।
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সেই ‘কুন ফা-ইয়াকুন’ গুণের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন