বিশ্বব্যাপী সর্ব ক্ষেত্রে বর্তমানে সাময়িকভাবে ইহুদী নাসারাদের বাহ্যিক যে প্রাধান্যতা চলছে তা ভালভাবে টের পাওয়া যায় যখন ইংরেজী বর্ষ পরিক্রমা শেষ কিংবা শুরু হয়। অর্থাৎ অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতই পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ইংরেজী বর্ষানূযায়ী তারিখ অনুসরণ করতে হয় এবং সে মোতাবেকই ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরী-বাকরী পড়া লেখার বিষয় গুলো পরিচালিত হয়। অথচ ইংরেজী বর্ষ বা তারিখের সাথে কোনভাবেই মুসলমানদের ইসলামী আমল আখলাকের পর্ব বা বিষয় গুলো জড়িত নয় বরং সম্পূর্ণ ভাবে আরবী তথা হিজরী বর্ষপরিক্রমার সাথে সেগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক হিজরতের ঘটনাকে স্মরণীয় বরণীয় করে রাখতে দ্বিতীয় খলীফা আমিরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হিজরী বর্ষ গণনা শুরু করেন অর্থাৎ আরবী বর্ষের সূচনা করেন, যা অদ্যাবধি চলে আসছে। অবশ্য এক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর কিছু সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনাও বাতলে দেয়া আছে।
চন্দ্র দেখার সাথে হিজরী বর্ষের মাস গুলোর তারিখ নির্ণয় করার বিধান এবং মাসকে যাতে আগেপিছে করার কোন অপচেষ্টা করা না হয় সেজন্য হাদীছ শরীফে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মুসলমানদের অন্যতম ফরজ আমল ইবাদত রোযা, হজ্জ এবং বিশেষ বিশেষ দিন বা রাত্রির ফজিলত গুলো যদি কেউ আমল করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই চাঁদ অনুযায়ী আরবী দিন তারিখ এবং মাসের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। নতুবা শরীয়ত নির্দেশিত সঠিক সময়ে সঠিক ইবাদত-বন্দেগীগুলো থেকে মাহরুম থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। কিন্তু অত্যন্ত আফসুস এবং দুঃখের বিষয় হলো, সাধারণভাবে অনেক মুসলমানই আরবী তথা হিজরী বর্ষের নাম, তারিখ, মাস বা সন নিয়ে একেবারেই বে খেয়াল থাকে। অথচ ইংরেজী তারিখ, মাস এবং সন সম্পর্কে প্রায় সকলেই কমবেশী ঠোটস্থ বা মুখস্থ রাখে।
বলা যায় আরবী তথা হিজরী বর্ষগুলো আমাদের মাঝে নীরবে আসে এবং অনেকটা নীরবেই চলে যায়। মূলতঃ হিজরী বর্ষের বিশেষ বিশেষ দিন মাসের ফযীলত-গুরুত্ব-তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা-অনীহাই এর অন্যতম কারণ। এছাড়া ইংরেজী বর্ষনূযায়ী থার্টি ফাস্ট নাইট, এপ্রিল ফুল, মে দিবস এবং জাতিসংঘ ও তার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঘোষিত ইংরেজী তারিখ, সন এবং বর্ষ পরিক্রমার বিভিন্ন দিবস, বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে উৎসাহিত করে। অথচ মুসলমানদের যে অনেক মহিমান্বিত তাৎপর্যপূর্ণ দিবস বা রাত রয়েছে সে বিষয়ে সাধারণ মুসলমান তো দূরের কথা যারা কথিত মোল্লা-মৌলভী, ইমাম মুয়াজ্জিন তারাও বেখেয়াল, বেখবর এবং অতৎপর থাকে।
তাই মুসলিম জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখতে, খাছ ইবাদত বন্দেগীর জন্য নির্ধারিত দিন-রাতগুলো খেয়াল রাখতে এবং কুরআন সুন্নাহ সম্মত দিবসগুলোর মর্যাদা মর্তবা অনুযায়ী দিবস গুলো উৎযাপন করতে আরবী তথা হিজরী বর্ষের সঠিক মূল্যায়ন, গণনা, সংরক্ষন এবং ব্যাপক ভাবে সকল মুসলমানের মাঝে প্রচার-প্রসার করতে সচেষ্ট হওয়া খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
(সংগৃহীত)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন