নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব। আর حَىَّ عَلَى الْصَّلَاح (হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্) বা حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) বলার পর দাঁড়ান মুস্তাহাব। সে হিসেবে মুস্তাহাব আমল করতে গিয়ে যদি কাতার বাঁকা থাকে বা কাতারে ফাঁক থাকে, তবে ওয়াজিব তরকের গুণাহ্ হবে। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
سَوُّوْا صُفُوْفَكُمْ فَاِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوْفِ مِنْ اِقَامَةِ الصَّلَاةِ
অর্থ : “তোমরা নামাযের কাতার সোজা করো। কেননা কাতার সোজা করা নামায কায়েম করারই নামান্তর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে- হযরত নুমান বিন বশীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِّىُ صُفُوْفَنَا حَتَّى كَاَنَّمَا يُسَوِّىُ بِهَا القَذَاحَ حَتَّى رَاَى اِنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوْمَاَ فَقَامَ حَتَّى كَادَاَنْ يُّكَبِّرَ فَرَاىَ رَجُلًا بَادِ يَا صَدْرُهُ مِنَ الصَّفِّ فَقَالَ عِبَادَ اللهِ لَتُسَوُّنَّ صُفُوْ فَكُمْ اَوْلَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوْهِكُمْ
অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নামাযের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করে দিতেন, যেন তিনি নামাযের কাতারের সাথে তীর সোজা করছেন। তিনি ইহা এতদিন (দীর্ঘদিন) যাবত করলেন যাতে তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, আমরা এটি ভালরূপে বুঝতে পেরেছি। একদিন তিনি (নামাযের জন্য) আসলেন ও নামাজে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন যে, এক ব্যক্তি নামাযের কাতার ভঙ্গ করে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ্ পাক উনার বান্দাগণ! তোমরা নামাযের কাতার সোজা করবে, নচেৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি করে দিবেন।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
تسوية الصفوف كى متعلق احاديث ميں امر هﮯ- خاص كر ﻜﮯ ترك ﭙروعيد بهى هﮯ جس ﺳﮯ معلوم هوا كه وه واجب هﮯ
অর্থ : “কাতার সোজা করার ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ আদেশ করা হয়েছে এবং খাছ করে এটি তরক করার কারণে আযাবের কথা বলা হয়েছে। যার দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ওয়াজিব।” (তানযীমুল আশতাত- ১/৩৮৩)
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
امر جو مقروں بالوعيد هو وه وجوب ﭙردلالت كرتا هﮯ- لهذا مناسب يهى هﮯ كه تسوية الصفوف كو واجب كها جاوﮯ
অর্থ : “যে امر (আমর) বা আদেশের দ্বারা আযাবের কথা বলা হয়েছে, এটা দ্বারা ওয়াজিবই ছাবিত হয়, এ জন্যই নামাযের কাতার সোজা করা ওয়াজিব।”
কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
تسوية الصفوف امام ﭙر واجب هﮯ كما فى در المختار وتر كها مكروه تحريما
অর্থ : “নামাযের কাতার সোজা করা ইমামের উপরে ওয়াজিব। যেমন দুররুল মোখতারের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- আর এটা তরক করা মাকরূহ্ তাহরীমী।”(দুররুল মুখতার, আইনী, উরফুশ শাজী/১২০, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, বযলুল মাযহুদ, তানযীমুল আশতাত-১/৩৮৩)
উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হলো যে, নামাযের জন্য কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব।
আর “হাইয়্যা আলাল ফালাহ্” বলা পর্যন্ত বসে থাকা ও তৎপর দাঁড়ানো শর্ত সাপেক্ষে মুস্তাহাব। যেমন, এ প্রসঙ্গে সর্বজনমান্য ও বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان كان امؤذن غير الاما و كان القوم مع الامام فى المسجد فانه يقوم الامام و القوم اذا قال المؤذن حى على الفلاح عند علمائنا الثلاثة و هو الصحيح
অর্থ : যদি মুয়াজ্জিন ইমাম ব্যতীত অন্য কেউ হয় এবং মুক্তাদীগণ যদি ইমামের সাথে মসজিদে থাকে তাহলে মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামতের মধ্যে حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলবে তখন আমাদের তিন ইমাম অর্থাৎ হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে, ইমাম এবং মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। আর এটাই বিশুদ্ধ মত।
উপরোক্ত কিতাবের ইবারতে যে শর্তগুলো পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলো- ইমাম ও মুয়াজ্জিন যদি একই ব্যক্তি না হয় অর্থাৎ ইমামতি করার জন্য ইমাম যদি নির্দিষ্ট করা থাকে। অনুরূপ আযান-ইক্বামত দেয়ার জন্য মুয়াজ্জিন যদি নির্দিষ্ট করা থাকে। এরপর বলা হয়েছে, মুক্তাদীগণ যদি ইমামের সহিত মসজিদে বসে থাকে তাহলে حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোটা আম ফতওয়া। এছাড়াও আরো অনেক শর্ত রয়েছে।
শুধু حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোই সুন্নত নয়, বরং ইক্বামত শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানোও সুন্নত। যেমন “মিরকাত শরীফ”-এর ২য় খন্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال اصحابنا السنة ان لا يقوم المأموم حتى يفرغ المقيم من جميع اقامته
অর্থ : “আমাদের আছহাবগণ বলেছেন, মুয়াজ্জিনের ইক্বামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তাদীগণের না দাঁড়ানো সুন্নত।”
অর্থাৎ ইক্বামত শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানো সুন্নত।
আর শুধু حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের আমল নয় বরং ইক্বামত শুরু হওয়ার আগে দাঁড়ানোও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের আমল। যেমন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ইক্বামত শুরু হওয়ার আগে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন এবং কাতারের ফাঁকে তীর ছুঁড়ে কাতার সোজা করতেন। আর কাতার সোজা করার ব্যাপারেও লোক নিয়োগ করতেন এবং কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না। যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
روى عن حضرت عمر فاروق عليه السلام انه كان يوكل رجالا باقامة الصفوف فلا يكبر حتى يخبر ان الصفوف قد استوت
অর্থ : “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কাতার সোজা করার জন্য লোক নিয়োগ করতেন এবং কাতার সোজা হওয়ার খবর যতক্ষণ পর্যন্ত না দেয়া হতো ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নামাযের তাকবীর বলতেন না।”
অনুরূপভাবে হযরত উসমান আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনারা করতেন।
روى عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام و حضرت عثمان عليه السلام عنهما كانا يتعاهدان ذلك
অর্থ : হযরত উসমান আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাদের থেকে বর্ণিত আছে, উনারা উভয়েই অনুরূপ দেখা-শুনা করতেন। (নাইলুল আওতার)
আবার মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখনও মুক্তাদীগণের দাঁড়ানো মুস্তাহাব সুন্নত। যেমন “তানজীমুল আশতাত” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عامۃ العلماء کے نزدیک متحبیہ ھے کہ مؤذن جب اقامت شروع کرے تو تمام مصلے کھڑے ھو جائیں
অর্থ : অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট মুস্তাহাব হলো মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন সকল মুছল্লী দাঁড়িয়ে যাবে।
তানজীমুল আশতাত কিতাব ছাড়াও শাইখুল ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুখারী শরীফ-এর বিশ্ববিখ্যাত শরাহ উমদাতুল ক্বারী কিতাবে, ইমাম নববী রহতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসলিম শরীফ-এর শরাহ শরহে নববীতেও উল্লেখ আছে। আর হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ফতহুল বারীতে এ সম্পর্কে একখানা হাদীছ শরীফও বর্ণনা করেছেন। যেমন, “ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খন্ডের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن حضرت ابن شهاب رحمة الله عليه ان الناس كانوا ساعة يقول المؤذن الله اكبر يقومون الى الصلاة فلا يأتى النبى صلى الله عليه وسلم مقامه حتى تعتدل الصفوف
অর্থ : “হযরত ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, মুয়াজ্জিন যে সময় “আল্লাহু আকবার” বলতেন, তখন লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত উনার স্থানে তাশরীফ আনতেন না।”
“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقد اختلف السلف متى يقوم الناس الى الصلوة فذهب مالك و جمهور العلماء الى انه ليس لقيامهم حد ولكن استحب عامتهم القيام اذا اخذ المؤذن فى الاقامة
অর্থ : “মুছল্লী নামাযে কখন দাঁড়াবে (ইক্বামতের শুরুতে না শেষে) এ ব্যাপারে সলফে সালেহীন, ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইখতিলাফ বা মতভেদ করেছেন। ইমাম মালিক ও জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন- (ইক্বামতের শুরু বা শেষে) নামাযে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। তবে অধিকাংশ সলফে সালেহীন, ইমাম-মুজতাহিদ ও উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন যে, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখনই দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।”
সহীহ্ মুসলিম শরীফ-এর শরাহ “শরহে নববী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
و عامة العلماء انه يستحب ان يقوموا اذا اخذ المؤذن فى الاقامة
অর্থ : “অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন মুছল্লীগণের দাঁড়ানো মুস্তাহাব।”
এখানে বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, “তানজীমুল আশতাত” কিতাবের উদ্ধৃতি “তানজীমুল আশতাত” কিতাবের লেখকের নিজস্ব বক্তব্য নয় বরং অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ সলফে সালেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরই বক্তব্য। যেমন, জগতখ্যাত নির্ভরযোগ্য“বুখারী শরীফ-এর শরাহ ফতহুল বারী”-এর লেখক হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিশ্বখ্যাত “বুখারী শরীফ-এর শরাহ উমদাতুল ক্বারী”-এর লেখক শাইখুল ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি,“মুসলিম শরীফ-এর শরাহ শরহে নববী”-এর লেখক ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি ইমাম মুজতাহিদ সলফে সালেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরই বক্তব্য।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, শর্ত সাপেক্ষে কোন কিতাবে حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই বিশুদ্ধ। এবং কোন কোন কিতাবে حَىَّ عَلَى الْصَّلَاح (হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্) বলার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই বিশুদ্ধ। আবার কোন কোন কিতাবে قدقامت الصلوة (ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ্) বলার সময় ইমাম ও মুক্তাদীগণের দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন কিতাবে ইক্বামত শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ আছে এবং বলা হয়েছে, এটাই সুন্নত। আবার কোন কোন কিতাবে অধিকাংশ ইমাম, মুজতাহিদ ফক্বীহ ও সলফে সালেহীনগণের মতে মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামত শুরু করবেন তখন সকল মুছল্লীগণের দাঁড়ানোকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে।
কোন কোন কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা কখনো কখনো কাতার সোজা করে বসে থাকতেন। যেমন “মিরআতুল মানাজীহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৪০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اس زمانہ میں طریقہ یہ کہ صحابہ کرام صف بنا کربیٹہ جاتے
অর্থ : “সে যামানায় নিয়ম এই ছিল যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা কাতার সোজা করে বসে ছিলেন।”
আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা সকলেই আলিম ছিলেন। কিন্তু এ যামানার অধিকাংশ মসজিদেই নামাযের কাতারে লাইন কাটা বা দাগ দেয়া থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ মুছল্লী আলিম না হওয়ায় ও অন্যান্যদের পর্যাপ্ত পরিমাণের দ্বীনী ইলম না থাকায় কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় প্রায়ই কাতার বাঁকা হয়ে থাকে ও কাতারে ফাঁক থাকে। অথচ কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা ওয়াজিব।
আবার বিশেষ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে বসে পূনরায় হাইয়্যা আলাচ্ছালাহ্ বলার সময় দাঁড়ালে কাতার যেমন সোজা হয়না, তেমন ফাঁকও বন্ধ হয়না। তখন মুছল্লীরা কাতারের প্রতি লক্ষ্য না করে নামাজে শামিল হওয়ার জন্য ও তাকবীরে উলা পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে নামাজে দাখিল হয়। যার ফলে দেখা যায়, ওয়াজিবের উপর আমল না হয়ে বা ওয়াজিব তরক করে মুস্তাহাবের উপর আমল হয়। অর্থাৎ ওয়াজিবকে প্রাধান্য না দিয়ে মুস্তাহাবকে প্রধান্য দেয়া হয়। সুতরাং যদি ইমাম ছাহেব কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করার জন্য দাঁড়ান, তখন মুক্তাদীদের জন্যও দাঁড়ানো আবশ্যক। কারণ ইমাম ছাহেবের দাঁড়ানো অবস্থায় মুক্তাদীদের জন্য বসে থাকা মাকরূহ্ ও আদবের খিলাফ। কাজেই حَىَّ عَلَى الْصَّلَاح (হাইয়্যা আলাচ্ছলাহ্) বা حَىَّ عَلَى الْفَلَاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) বলার সময় দাঁড়িয়ে মুস্তাহাব আমল করতে গিয়ে ওয়াজিব তরক হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, তখন উক্ত মুস্তাহাব আমল ছেড়ে দিয়ে ওয়াজিব পালন করাই ওয়াজিব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন