728x90 AdSpace

  • Latest News

    হাদীছ শরীফ-উনার সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ


    হাদীছ শরীফ- উনার সংজ্ঞা : حَدِيْثٌ (হাদীছ) শব্দটি একবচন,
    এর বহুবচন حُدِثَانُ (হুদিছানুন) বা
    اَحَادِيْثُ (আহাদীছু) বা
    حُدَاثَاءُ (হুদাছাউ)
    যার লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কথা, বাণী, সংবাদ, ব্যাপার, বিষয়, পুরাতন সংবাদ ইত্যাদি
    আর ইছতিলাহীবা পারিভাষিক অর্থে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মুবারকে যা বলেছেন, করেছেন বা অন্যের কোন কথা বা কাজের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন তাকে সুন্নাহ্ শরীফ বা হাদীছ শরীফ বলে
    ব্যাপক অর্থে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ এবং সম্মতিকেও হাদীছ শরীফ বলে
    কারো কারো মতে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ ও সম্মতিকে আছারবলেযেমন,
    এ প্রসঙ্গে উছূলুল আছারকিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “হাদীছ শরীফ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দসাধারণভাবে হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে হাদীছ শরীফ বলেএবং অনুরূপভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং হযরত তবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকেও হাদীছ শরীফ বলে
    মুহাদ্দিছগণের কেউ কেউ বলেছেন যে, “শুধুমাত্র হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাণীকে হাদীছ শরীফ বলে(উছূলুল আছার)
    উছূল শাস্ত্রবিদগণের মতে হাদীছ শরীফ-এর অপর নাম خَبَرُ (খবর) আর তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে বলে (উছূলুশ শাশী)
    উছুলুল আছারনামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হাদীছ শরীফ-এর অপর নাম হলো সুন্নতযেমন বলা হয়েছে,
    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা, কাজ ও মৌন সম্মতি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কথা, কাজ (মৌন সম্মতিকেও)সুন্নাহবলে
    উল্লিখিত আলোচনার দ্বারা বুঝা গেল যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে হাদীছ, খবর, সুন্নাহ ও আছার বলে

    হাদীছ শরীফ ওহীর অন্তর্ভুক্ত : মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যে ওহী নাযিল করেছেন তা দুই প্রকার
    ১) ওহীয়ে মাতলু : ওহী যে শব্দ বা বাক্যের সাথে নাযিল করা হয়েছে তা হুবহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেনকুরআন শরীফ এই শ্রেণীর ওহীএটাকে ওহীয়ে মাতলু বলেনামাযে কেবল এটারই তিলাওয়াত করা হয়
    ২) ওহীয়ে গইরে মাতলু : যার শব্দ বা বাক্য অবিকল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেননিওহী দ্বারা প্রাপ্ত মূল ভাবটিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজস্ব ভাষায় প্রকাশ করেছেনএটাকে ওহীয়ে গইরে মাতলু বলেএটা নামাযে পড়া যায় না
    হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের কতিপয় পরিভাষা :
    ছাহাবী (صَحَابِىٌ) : যারা ঈমানের সাথে সাইয়িদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহচর্য লাভ করেছেন, উনাকে দেখেছেন এবং ঈমানের সাথে ইন্তিকাল করেছেন উনাদেরকে ছাহাবী বলে
    তাবিয়ীন (تَابِعِيْنَ) : যারা কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ শিক্ষা করেছেন বা অন্ততপক্ষে উনাকে দেখেছেন উনাদেরকে তাবিয়ীন বলে
    তাবেতাবিয়ীন (تَابِعُ تَابِعِيْنَ) : যারা কোন তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট থেকে হাদীছ শরীফ শিক্ষা করেছেন অথবা উনাকে দেখেছেন উনাদেরকে তাবেতাবিয়ীন বলে
    রিওয়ায়েত (رِوَايَتٌ) : হাদীছ শরীফ বা আছার বর্ণনা করাকে রিওয়ায়েত বলে এবং যিনি বর্ণনা করেন উনাকে রাবী  (رَاوِىْ) বলেকোন কোন সময় হাদীছ শরীফ বা আছারকেও রিওয়ায়েত বলেযেমন, বলা হয় এ সম্পর্কে একটি রিওয়ায়েত আছে
    সনদ (سَنَدٌ) : হাদীছ শরীফ-এর রাবীর পরস্পর বর্ণনা সূত্রকে সনদ বলেকোন হাদীছ শরীফ-এর সনদ বর্ণনা করাকে ইসনাদ  (اَسْنَادٌ) বলে  কখনও কখনও ইসনাদ সনদ অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে
    রিজাল (رِجَالٌ) :  হাদীছের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলেআর যে শাস্ত্রে রাবীদের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর রিজাল (اَسْمَاءُ الرِّجَالُ) বলে
    মতন (مَتْنٌ) :  সনদ বর্ণনা করার পর যে মূল হাদীছটি বর্ণনা করা হয় তাকে মতন বলে
    আদালত (عَدَالَهٌ) : যে সুদৃঢ় শক্তি মানুষকে তাক্বওয়া ও মরুওওয়াত অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাকে আদালত বলে
    তাক্বওয়া অর্থে এখানে শিরক প্রভৃতি কবীরা গুণাহ্ এবং পুনঃ পুনঃ ছগীরা গুণাহ্ করা হতে, হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা থেকে, সাধারণ কাজ-কারবারে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়া থেকে, অপরিচিত হওয়া থেকে, বে-আমল-ফাসিক, বদ্ আক্বীদা ও বিদ্য়াতী আমল থেকেও বেঁচে থাকাকে বুঝায়
    মরুওওয়াত অর্থে অশোভন বা অভদ্রোচিত, অশালীন, অশ্লীল, কুরুচীসম্পন্ন এমনকি অপছন্দনীয় কথা ও কাজ হতে দূরে থাকাকে বুঝায়যথা হাটে-বাজারে প্রকাশ্যে পানাহার করা বা রাস্তাঘাটে ইস্তিঞ্জা করা ইত্যাদিএরূপ কার্য করেন এমন ব্যক্তির হাদীছ ছহীহ নয়
    আদল বা আদিল (عَدْلٌَ – عَادِلٌ) : যে ব্যক্তি আদালত গুণসম্পন্ন, তাকে আদল বা আদিল বলেঅর্থাৎ
    (১) যিনি হাদীছ শরীফ সম্পর্কে কখনও মিথ্যা কথা বলেননি,
    (২) সাধারণ কাজ-কারবারে কখনও মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হননি,
    (৩) অজ্ঞাতনামা অপরিচিত অর্থাৎ দোষগুণ বিচারের জন্য যার জীবনী জানা যায়নি এরূপ লোক নন,
    (৪) বেআমল ফাসিকও নন,
    (৫) বদ্ ইতিকাদ বিদয়াতীও নন, কবীরা গুণাহ্ এবং পুনঃ পুনঃ ছগীরা গুণাহ করা থেকে বেঁচে থাকেন, অশোভন, অশালীন, অশ্লীল, কুরুচী সম্পন্ন এমনকি অপছন্দনীয় কোন কথা ও কাজও বলেননা বা করেন না তাকে আদল বা আদিল বলে
    যবত (ضَبْطٌ) : যে স্মরণ শক্তি দ্বারা মানুষ শ্রুত বা লিখিত বিষয়কে ভুলে যাওয়া বা বিনাশ হতে রক্ষা করতে পারে এবং যখন ইচ্ছা তখন এটাকে সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারে তাকে যবত বলে
    যাবিত (ضَابِطٌ) : যার ধীশক্তি তথা স্মরণশক্তি খুবই প্রখর তাকে যাবিত বলে
    ছিক্বাহ্ (ثِقَةٌ) : যে ব্যক্তির মধ্যে আদালত ও যবত উভয় গুণ পূর্ণভাবে বিদ্যমান তাকে ছিক্বাহ্ রাবী বলে
    শায়খ (شَيْخٌ) : হাদীছ শরীফ শিক্ষাদাতা রাবীকে উনার শাগরিদের তুলনায় উনাকে শায়খ বলা হয়ে থাকে
    মুহাদ্দিছ (مُحَدِّثٌ) : যে ব্যক্তি হাদীছ শরীফ চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদীছ শরীফ-এর সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাকে মুহাদ্দিছ বলে
    শায়খাইন (شَيْخَيْنِ) : হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে এক সঙ্গে শায়খাইন বলে। (কিন্তু খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে শায়খাইন বলতে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বুঝায়এভাবে হানাফী ফিক্বাহে শায়খাইন বলতে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে বুঝায়।)
    ছিহাহ্ সিত্তাহ (صِحَّاحٌ سِتَّهٌ) : বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ইবনু মাজাহ শরীফ- হাদীছ শরীফ-এর এই ছয়খানা কিতাবকে এ সঙ্গে ছিহাহ্ সিত্তাহ বলেএটাই প্রসিদ্ধকিন্তু বিশিষ্ট আলিমগণ ইবনু মাজাহ-এর স্থলে মুয়াত্তা ইমাম মালিক আবার কেউ কেউ সুনানে দারিমীকেও ছিহাহ্ সিত্তাহ্র মধ্যে শামীল করেন
    ছহীহাইন (صَحِيْحَيْنِ) : বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফকে এক সঙ্গে ছহীহাইন বলে
    সুনানে আরবায়া (سُنَنٌ اَرْبَعَةٌ) : ছিহাহ্ সিত্তার অপর চার কিতাব (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ইবনে মাজাহ শরীফ)কে একসঙ্গে সুনানে আরবায়া বলে
    মুত্তাফাকুন্ আলাইহি (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ) : যে হাদীছ শরীফকে একই ছাহাবী হতে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উভয়ে গ্রহণ করেছেন তাকে হাদীছে মুত্তাফাকুন্ আলাইহি বা ঐক্যসম্মত হাদীছ শরীফ বলে


    হাদীছ শরীফ- উনার কিতাবসমূহের বর্ণনা :
    হযরত মুহাদ্দিছীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হাদীছ শরীফ-এর কিতাব লিখতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন এবং বিভিন্ন কিতাবকে বিভিন্নরূপে সাজিয়েছেননিচে এর কতিপয় প্রসিদ্ধ বর্ণনা দেয়া হলো :
    জামে (جَامِعٌ) : যে কিতাবে হাদীছ শরীফসমূকে বিষয় অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যাতে আকাইদ, সিয়ার, তাফসীর, ফিতান, আদাব, আহকাম, রিকাক ও মানাকিব- এ আটটি প্রধান অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলেযথা- জামেয়ে ছহীহ হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, জামেয়ে তিরমিযী, তিরমিযী শরীফ কিতাবটি আসলে জামে হলেও এটা সুনান নামেই প্রসিদ্ধএ জাতীয় কিতাবে ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের হাদীছ শরীফ রয়েছে
    সুনান বা মুছান্নাফ (سُنَنٌ – مُصَنَّفٌ) : যে কিতাবে হাদীছ শরীফসমূহকে বিষয় অনুসারে সাজান হয়েছে এবং যাতে তাহারাত, নামায, রোযা প্রভৃতি আহকামের হাদীছসমূহ সংগ্রহের প্রতিই বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে, তাকে সুনান বা মুছান্নাফ বলেযথা- সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে দারিমী, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক প্রভৃতি
    মুসনাদ (مُسْنَدٌ) : যে কিতাবে হাদীছ শরীফসমূহকে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং এক এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের হতে বর্ণিত হাদীছসমূহকে এক এক অধ্যায়ে স্থান দেয়া হয়েছে তাকে মুসনাদ বলেযথা- মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুসনাদে তায়লাসী, মুসনাদে আবদ্ ইবনে হুমাইদ প্রভৃতি
    মুজাম (مُعْجَمٌ) : যে কিতাবে হাদীছ শরীফসমূহকে শায়খ অর্থাৎ উস্তাদ উনাদের নাম অনুসারে (উনাদের মর্যাদা বা বর্ণনাক্রমে) সাজানো হয়েছে তাকে মুজাম বলেযথা মুজামে ইবনে কানে,’ মুজামে তাবারানী (মুজামে কবীর, মুজামে ছগীর, মুজামে আওছাত) প্রভৃতিশেষোক্ত মুজাম তিনটি হযরত তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক রচিতএতে তিনি হাদীছ শরীফসমূহকে বর্ণনাক্রমে সাজিয়েছেনএ মুজাম নিয়মের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন হযরত ইবনে কানেরহমতুল্লাহি আলাইহি
    রিসালা (رِسَالَةٌ) : যে ক্ষুদ্র কিতাবে মাত্র এক বিষয়ের হাদীছ শরীফসমূহকে একত্র করা হয়েছে তাকে রিসালা বা জুয্ বলেযথা কিতাবুত্ তাওহীদ লি ইবনে খুযায়মা রহমতুল্লাহি আলাইহিএতে শুধু তাওহীদ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফসমূহ একত্র করা হয়েছেকিতাবুত্ তাফসীর লি সাঈদ ইবনে জুবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহিএটাতে কেবল তাফসীর সংক্রান্ত হাদীছসমূহ জমা করা হয়েছে


    হাদীছ শরীফ- উনার কিতাব সমূহের স্তর :
    হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তর বা তবকায় ভাগ করা যেতে পারেদ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ও ইমাম হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগানামক কিতাবে হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহকে পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন
    প্রথম স্তর : এ স্তরের কিতাবসমূহে শুধু ছহীহ হাদীছ শরীফ রয়েছেএ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিমুয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফদুনিয়ায় এ কিতাব তিনটির যত অধিক আলোচনা বা যাচাই-বাছাই হয়েছে, অপর কোন কিতাবের এরূপ হয়নি আলোচনায় এটাই সাব্যস্ত হয়েছে যে, সাধারণতঃ এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীছ শরীফ নিশ্চিতরূপে ছহীহতবে এছাড়াও আরো অনেক কিতাব ছহীহ হিসেবে প্রমাণিত আছেকারো কারো মতে, পঞ্চাশটিরও অধিক ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কিতাব রয়েছে
    দ্বিতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছিএ স্তরের কিতাবে সাধারণত ছহীহ ও হাসান হাদীছ শরীফই রয়েছেদ্বঈফ হাদীছ শরীফ এতে খুব কমনাসায়ী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাবসুনানে দারিমী, সুনানে ইবনে মাজাহ এবং শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মুসনাদে ইমাম আহমদকে এ স্তরে শামিল করা যেতে পারেএ দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাযহাবের ফক্বীহগণ নির্ভর করে থাকেন
    তৃতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবে ছহীহ, হাসান, দ্বঈফ, শায ও মুন্কার সকল রকমের হাদীছ শরীফই রয়েছেমুসনাদে আবূ ইয়ালা, মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক, মুছান্নাফে আবূ বকর ইবনে আবী শাইবাহ, মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ, মুসনাদে তায়লাসী এবং বাইহাক্বী, তাহাবী ও তাবারানীর কিতাবসমূহ এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত
    চতুর্থ স্তর : এ স্তরের কিতাবসমূহে সাধারণত দ্বঈফ ও গ্রহণের অযোগ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে ইবনে হিব্বানের কিতাবুয্ যুয়াফা, ইবনে আছীরের কামিল এবং খতীব বাগদাদী, আবু নুয়াইম, জাওকানী, ইবনে আসাকির, ইবনে নাজ্জার ফিরদাউস লিদ্ দায়লামীর কিতাবসমূহ এ স্তরের কিতাবমুসনাদে খাওয়ারিযমীও এ স্তরেরতবে এতে ছহীহ ও হাসান হাদীছ শরীফও রয়েছে
    পঞ্চম স্তর : উপরোক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব এখানে মনে রাখা আবশ্যক যে, প্রথম স্তর ব্যতীত কোন স্তরেরই সমস্ত কিতাবের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নিউদাহরণ স্বরূপ কেবল কতক কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে


    হাদীছ শরীফ- উনার প্রকারভেদ, সংজ্ঞা ও উদাহরণ :
    মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা প্রধানতঃ হাদীছ শরীফ বা সুন্নাহ্ শরীফকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেনযথা :
    (১) مَرْفُوْعٌ (মারফূ’)
    (২) مَوْقُوْفٌ (মাওকূফ) ও
    (৩) مَقْطُوْعٌ (মাকতূ’)
    (১) مَرْفُوْعٌ (মারফূ’) : মারফূ হাদীছ শরীফ বলা হয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা, কাজ, মৌন সম্মতিকেঅর্থাৎ যে হাদীছ শরীফ-এর সনদ, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকেই মারফূহাদীছ শরীফ বলেআর এ মারফূ হাদীছ শরীফকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়যথা-
    (ক) مَرْفُوْعُ قَوْلِىْ (মারফূক্বওলী),
    (খ) مَرْفُوْعُ فِعْلِىْ (মারফূফেলী)
    (গ) مَرْفُوْعُ تَقْرِيْرِىْ  (মারফূতাক্বরীরী)
    (ক) مَرْفُوْعُ قَوْلِىْ (মারফূক্বওলী) : উছূল শাস্ত্রবিদ উনাদের মতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখ মুবারক নিসৃত বাণী মুবারককে মারফুক্বওলী হাদীছ শরীফ বলে
    এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “শুধুমাত্র হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখ মুবারক নিসৃত বানী মুবারককে মারফুক্বওলী হাদীছ শরীফ বলে(উছুলুল আছার) যেমন, উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা যেতে পারে
     قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّمَا اَلْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
    অর্থ : হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই কর্মের ফলাফলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল(বুখারী, মিশকাত)
    বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা যেহেতু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি যবান মুবারক নিসৃত বাণী এবং এর সনদআখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে তাই উক্ত হাদীছ শরীফখানা মারফূ ক্বওলী হাদীছ শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত
    (খ) مَرْفُوْعُ فِعْلِىْ (মারফূফেলী) : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা আমল করে বাস্তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন তাকে মারফূফেলী হাদীছ শরীফ বলেযেমন, মিছালস্বরূপ বুখারী শরীফ”-এর ১ম খণ্ড ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা যেতে পারে,
    عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا ثٌمَّ تَرَكَ
    অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতনিশ্চয়ই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস (ফজর নামাযে) কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেনঅতঃপর তা বর্জন করেছেনঅর্থাৎ মানসূখ করে দিয়েছেন”  মিছালস্বরূপ আরো উল্লেখ করা যেতে পারে,
    كَانَ النَّبِىُّ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتّى يُحَاذِىْ بِهِمَا قُرُوْعَ اُذْنَيْهِ
    অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকবীরে তাহরীমার সময় দুহাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন(মিশকাত, মিরকাত, আইনুল হিদায়া)
    বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয় যেহেতু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি ফেল বা আমল এবং এর সনদআখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে তাই উক্ত হাদীছ শরীফদ্বয় মারফূফেলী হাদীছ শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত
    (গ) مَرْفُوْعُ تَقْرِيْرِىْ  (মারফূতাক্বরীরী) : আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ব্যাপারে কোন কথা বলেননি এবং নিজে কোন কাজও করেননি বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনার সামনে কোন কথাবার্তা বলেছেন কিংবা কোন কাজ-কর্ম করেছেন আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাতে নিরবতা পালন কিংবা সম্মতি প্রদান করেছেন তাকে মারফূতাক্বরীরী হাদীছ শরীফ বলেযেমন, উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা যেতে পারে
    كُنَّ نَقُوْلُ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَىٌّ اَفْضَلُ هَذِهِ الْاُمَّةِ بَعْدَ نَبِيِّنَا اَبُوْبَكْرٍ عَلَيْهِ السَّالَامُ وَعُمَرُ عَلَيْهِ السَّالَامُ وَعُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّالَامُ وَيَسْمَعُ ذَلِكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَايُنْكِرُه
    অর্থ : হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, আমরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে একদা পরস্পর বলাবলি করি যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে এই উম্মতের মধ্যে যথাক্রমে হযরত আবূ বকর আলাইহিস সালাম, হযরত উমর আলাইহিস সালাম এবং হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনারা সবচেয়ে উত্তম (মানুষ) অথচ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা শুনতেন, কিন্তু তিনি এর কোন প্রতিবাদ করেননি(মীযানুল আখবার)
    বর্ণিত হাদীছ শরীফখানাই মূলতঃ মারফূ তাকরীরী হাদীছ শরীফ-এর মিছাল বা উদাহরণঅর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি মৌন সম্মতিসূচক হাদীছ শরীফখানাই মারফূ তাক্বরীরী হাদীছ শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত
    (২) مَوْقُوْفٌ (মাওকূফ) : হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে মাওকূফ হাদীছ শরীফ বলেযা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরাত না দিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিজেরাই বর্ণনা করেছেনঅর্থাৎ যার সনদহযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর্যন্ত পৌঁছেছেযেমন উল্লেখ করা যেতে পারে,
    عَنْ حَضَرَتْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَّه’ قَالَ لاَقِرَاءَةَ مَعَ الْاِمَامِ فِىْ شَىْء
    অর্থ : হযরত যায়িদ বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদীদের কোন ক্বিরায়াত পড়তে হবে না
    আরো উল্লেখ করা যেতে পারে আল হিদায়া মায়াদ দিরায়াকিতাবের ১ম খণ্ড ১৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
    عَنْ حَضَرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ ذَكَرَ الْقُنُوْتَ فَقَالَ وَاللهِ اِنَّه’ لَبِدْعَةٌ مَا قَنَتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيْرُ شَهْرٍ وَاحِدٍ
    অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজেই একদিন ফজর নামাযের কুনূতে নাযেলা সম্পর্কে আলোচনা করার পর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! অবশ্যই ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা বিদ্য়াতকেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র একমাস ব্যতীত আর কখনও কুনূতে নাযেলা পাঠ করেননি (নূরুল হিদায়া ১ম খণ্ড ১১৭ পৃষ্ঠা)
    উল্লেখ্য, মারফু হাদীছ শরীফ-এর ন্যায় মাওকুফ হাদীছ শরীফও তিন প্রকার
    (ক) مَوْقُوْفُ قَوْلِىْ (মাওকুফ ক্বওলী) : যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেছেন
    (খ) مَوْقُوْفُ فِعْلِىْ (মাওকুফ ফেলী) : যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমল করেছেন
    (গ) مَوْقُوْفُ تَقْرِيْرِىْ (মাওকুফ তাক্বরীরী) : হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে কাজে বা কথায় সম্মতি প্রদান করেছেন
    (৩) مَقْطُوْعٌ (মাক্বতূ’) : হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কথা-কাজ ও মৌন সম্মতিকে মাক্বতূহাদীছ শরীফ বলেঅর্থাৎ যার সনদহযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকেই মাক্বতূহাদীছ শরীফ বলেউল্লেখ্য, মারফূও মাওকুফ হাদীছ শরীফ-এর ন্যায় মাক্বতূহাদীছ শরীফও তিন প্রকার
    (ক) مَقْطُوْعُ قَوْلِىْ (মাক্বতূক্বওলী) : যা হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন
    (খ) مَقْطُوْعُ فِعْلِىْ (মাক্বতূফেলী) : যা হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আমল করেছেন
    (গ) مَقْطُوْعُ تَقْرِيْرِىْ (মাক্বতূতাক্বরীরী) : হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে কাজে বা কথায় সম্মতি প্রদান করেছেন (উছূলুল আছার)
    উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, ইরশাদ হয়েছে,
    عَنْ حَضَرَتْ اِبْرَاهِيْمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ عَلْقَمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضَرَتْ اَلْاَسْوَدِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضَرَتْ مَسُرُوْقٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِنَّهُمْ قَالُوْا كُنَّا نُصَلِّىْ خَلْفَ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِى الْفَجْرِ فَلَمْ يَقْنُتْ
    অর্থ : হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিততিনি হযরত আলক্বামা, আসওয়াদ ও মাসরুক্ব তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে বর্ণনা করেনউনারা বলেন, আমরা হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার পিছনে ফজরের নামায আদায় করতামকিন্তু তিনি ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলাপাঠ করেননি(আবূ দাউদ শরীফ, শরহে মায়ানিল আছার)
    উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানাও উল্লেখ করা যেতে পারেযেমন, ইরশাদ হয়েছে,
    عَنْ حَضَرَتْ سُلَيْمَانَ بْنِ اَبِىْ عَبْدِ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اَدْرَكْتُ الْمُهَاجِرِيْنَ الْاَوَّلِيْنَ يَعْتَمُّوْنَ بِعَمَائِمَ كَرَبِيْسَ …… خُضْرٌ
    অর্থ : হযরত সুলাইমান ইবনে আবী আব্দুল্লাহ (তাবিয়ী) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমি (ইসলামের) প্রথম দিকের সকল মুহাজিরীন (হিজরতকারী ছাহাবী) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সবুজ রংয়ের সূতী কাপড়ের পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছি(মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ)


    রিওয়ায়েত বা সনদ অনুসারে হাদীছ শরীফ- উনার প্রকারভেদ :
    উছূলুল আছার এবং মীযানুল আখবারকিতাবে উল্লেখ আছে, “সনদ অনুসারে হাদীছ শরীফ দুপ্রকার (১) মুতাওয়াতির  (২) আহাদ
    আর সনদ বলা হয়, “মতন তথা হাদীছের মূলভাষ্য পর্যন্ত পৌঁছার পরস্পর বর্ণনা সূত্রকেই সনদ বলে। (এক কথায়- হাদীছ শরীফ-এর মূল কথার বর্ণনার ধারাবাহিকতাকেই সনদ বলে।)

    (১) مُتَوَاتِرٌ  (মুতাওয়াতির) : যে সব হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনাকারী এত অধিক যে, যাদের কাউকে মিথ্যা ও সন্দেহ পোষণ করা কখনও সমীচীন নয়, সে সব ঐ হাদীছ শরীফকে মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ বলে যেমন,
    উসূলূশ শাশী কিতাবে উল্লেখ আছে, “মুতাওয়াতির ঐ হাদীছ শরীফকে বলা হয়, যা রাবীদের একটি জামায়াত অপর একটি জামায়াত থেকে বর্ণনা করেছেনযাঁদের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে মিথ্যার উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চিন্তাও করা যায় না
    হুকুম : মুতাওয়াতি হাদীছ শরীফ-এর হুকুম বা বিধান হল এর উপর আমল করা ওয়াজিব ও ফরযের অন্তর্ভক্তআর এটাকে অস্বীকার করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত
    (২) اَحَادٌ (আহাদ) : মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ-এর বিপরীত হাদীছ শরীফকে আহাদ বলে
    আর এটা আবার তিন প্রকার
    (ক) غَرِيْبٌ (গরীব) : যে  বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনাকারী সর্বদা একজন থাকে তাকেই গরীব হাদীছ শরীফ বলেযেমন- বাইউলওয়ালাতথা আযাদকৃত দাস-দাসীর ওয়ারিছসত্ত্ব ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ(মিযানুল আখবার)
    এ হাদীছ শরীফটি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে শুধুমাত্র হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন
    (খ) عَزِيْزٌ (আযীয) : যে সমস্ত হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনাকারী সর্বযুগে কমপক্ষে দুজন থাকে তাকে হাদীছে আযীয বলেযেমন,
    لاَيُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتَّ اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّلِدِهِ وَالنَّسِ اَجْمَعِيْنَ
    অর্থ : তোমাদের মধ্যে কেউই কামিল মুমিন হতে পারবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত; যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার সন্তান-সন্ততি এবং পিতা-মাতা এমনকি সকল মানুষের চেয়ে আমাকে বেশী মুহব্বত না করবে


    সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে এ হাদীছ শরীফটি শুধু আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেছেন
    (গ) مَثْهُوْرٌ (মাশহূর) : যে সমস্ত হাদীছ শরীফ-এর সর্বযুগে সর্বস্তরে কমপক্ষে দুয়ের অধিক কিংবা তার চেয়ে আরো অধিক বর্ণনাকারী রয়েছে, তবে মুতাওয়াতিরের স্তরে পৌছেনা, বরং তার চেয়ে বর্ণনাকারী কম হয়, সে সব হাদীছ শরীফকে মাশহূর হাদীছ শরীফ বলেযথা -
    اِنَّ اللهَ لاَيَقْبِضُ الْعِلْمَ اِنْتِزَاعًا
    অর্থ : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হঠাৎ করে ইল্মকে একেবারেই উঠিয়ে নিবেন না
    এ হাদীছ শরীফ-এর রাবী সর্বযুগে সর্বকালে দুয়ের অধিক রয়েছে
    হুকুম : মাশহূর-এর বিধান মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ-এর মত, তবে এটা অস্বীকার করা কুফরী নয়


    শরয়ী বিধান প্রতিষ্ঠায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য আহাদ হাদীছ শরীফ সমূহের প্রকারভেদ :
    উছূলুল্ আছারকিতাবে উল্লেখ আছে, “শরীয়তের বিধান প্রতিষ্ঠায় গ্রহণীয় ও প্রমাণযোগ্য আহাদ হাদীছ শরীফ সমূহ চার প্রকারযথা -
    (ক) صَحِيْحُ لِذَاتِهِ (ছহীহ লিযাতিহী)
    (খ) حَسَنُ لِذَتِهِ (হাসান লিযাতিহী)
    (গ) صَحِيْحُ لِغَيْرِهِ (ছহীহ লিগাইরিহী)
    (ঘ) حَسَنُ لِغَيْرِهِ (হাসান লিগাইরিহী)
    (ক) صَحِيْحُ لِذَاتِهِ (ছহীহ লিযাতিহী) : এটা খবরে ওয়াহিদের এমন এক প্রকার হাদীছ শরীফ যার রাবী বা হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ধারাবাহিকভাবে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছেযার রাবী পূর্ণ যব্ত বা প্রখর স্মরণশক্তি সম্পন্ন এবং ন্যায় পরায়নمُعَلَّلٌ (মুয়াল্লাল) তথা কোন গোপন দোষত্রুটি থেকে মুক্ত এবং شَاذٌ (শায) তথা অন্য রাবীর বিশুদ্ধ বর্ণনার বিপরীত বর্ণনা থেকে মুক্তযেমন,
    حَدَّثَنَا حَضَرَتْ اِلْحُمَيْدِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَدَّثََنَا ……. اِنَّمَا اَلْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ…….
    অর্থ : হযরত হুমাইদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,) নিশ্চয়ই কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল(বুখারী, মিশকাত )
    (খ) حَسَنُ لِذَتِهِ (হাসান লিযাতিহী) : যদি বর্ণনাকারীর শুধুমাত্র যবত তথা স্বরণশক্তি কম থাকে, তাহলে তাকে হাসান লিযাতিহী বলেযথা-
    عَنْ حَضَرَتْ سُفْيَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَقِيْلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَنَفِيَّةِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِفْتَاحُ الصَّلَوةِ الطُّهُوْرُ ……..
    অর্থ : হযরত ছূফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে হানাফিয়্যা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেনহযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘নামাযের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা(তিরমিযী শরীফ)
    এ হাদীছ শরীফ-এর রাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সব গুণাবলী ছিল তবে স্মরণ শক্তি কিছুটা কম ছিল

    (গ) صَحِيْحُ لِغَيْرِهِ (ছহীহ লিগাইরিহী) : এটা হাসান লিযাতিহী হাদীছ শরীফ-এর অনুরূপছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কোন রাবীর মধ্যে স্মরণ শক্তি কিছুটা কম থাকেতবে সেই অভাব বা ত্রুটিটুকু অন্যান্য উপায়ে এবং অধিক রিওয়ায়েত দ্বারা পুরণ হয়ে যায়মোট কথা, উহার সমর্থনে বহু রিওয়ায়েত বর্ণিত থাকায় তার ত্রুটির ক্ষতিপুরণ হয়ে গেছেএরূপ হাদীছ শরীফকে ছহীহ লিগাইরিহী
    (ঘ) حَسَنُ لِغَيْرِهِ (হাসান লিগাইরিহী) : এটা ঐ দ্বঈফ হাদীছ শরীফকে বলে যে হাদীছ শরীফ বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়াতে বর্জনের স্তর অতিক্রম করে দলীল হিসাবে গ্রহণের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে মূলতঃ কোন হাদীছ শরীফকে দ্বঈফ বলা যাবে নাকোন হাদীছ শরীফ-ই দ্বঈফ নহে বরং রাবীর গুনাগুণের কারণেই এভাবে নামকরণ করা হয়েছেদ্বঈফ বলতে দ্বঈফুস্ সনদকেই বুঝায়
    এছাড়াও আরো অনেক প্রকারের হাদীছ শরীফ রয়েছেযেমন,
    ১) مُتَّصِلٌ (মুত্তাছিল) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের মধ্যে কোন স্তরের কোন রাবী বাদ পড়েননিঅর্থাৎ সকল স্তরের সকল রাবীর নামই যথাস্থানে উল্লেখ রয়েছে তাকে হাদীছে মুত্তাসিল বলে আর এ বাদ না পড়াকে বলা হয় ইত্তিসাল
    ২) مُنْقَطِعٌ (মুনকাতে) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের মধ্যে কোন স্তরের কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে হাদীছে মুনকাতে বলেআর এ বাদ পড়াকে বলা হয় ইনকিতাএ হাদীছ শরীফ প্রধানত দুই প্রকার মুরসাল ও মুয়াল্লাক
    ক) مُرْسَلٌ (মুরসাল) : যে হাদীছ শরীফে সনদের ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারকই বাদ পড়েছে এবং স্বয়ং তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক করে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীছে মুরসাল বলে। (ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে কেবল হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই এটাকে নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করেছেনউনাদের মতে তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শুধু তখনই ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক বাদ দিয়ে সরাসরি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যখন এটা উনার নিকট নিঃসন্দেহে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বলে সাব্যস্ত হয়েছে


    খ) مُعَلَّقٌ (মুয়াল্লাক্ব) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হয়েছে অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর এক বা একাধিক নাম বাদ পড়েছে তাকেমুয়াল্লাকবলেএটা গ্রহণযোগ্য নয়কোন কোন গ্রন্থকার কোন কোন হাদীছ শরীফ-এর পূর্ণ সনদকে বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীছ শরীফটিকেই বর্ণনা করেছেন এরূপ করাকে তালীক বলেকখনও কখনও তালীক রূপে বর্ণিত হাদীছ শরীফকেও তালীক বলেহযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে এরূপ বহু তালীক রয়েছেকিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমস্ত তালীকেরই মুত্তাসিল সনদ রয়েছেঅপর সংকলনকারী উনারা এই সমস্ত তালীক মুত্তাসিল সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন
    ৩) مُدَلَّسٌ (মুদাল্লাস) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী নিজের প্রকৃত শায়খ (উস্তাদ) উনার নাম না করে উনার উপরস্থ শায়খ উনার নামে এভাবে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই এটা উপরস্থ শায়খ উনার নিকট শুনেছেন অথচ তিনি নিজে এটা শুনেননি, (বরং উনার প্রকৃত উস্তাদ উনার নিকটই এটা শুনেছেন) সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদাল্লাস বলেএরূপ করাকে তাদলীস বলেআর যিনি এরূপ করেছেন উনাকে মুদাল্লিস বলেমুদাল্লিসের হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়যে পর্যন্ত না তিনি একমাত্র ছিকাহ রাবী হতেই তাদ্লীস করেন বলে সাব্যস্ত হয় অথবা তিনি এটা আপন শায়খ উনার নিকট শুনেছেন বলে পরিস্কারভাবে বলে দেন
    ৪) مُضْطَرَبٌ (মুদ্বতারাব) : যে হাদীছ শরীফ-এর মতন বা সনদকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারে গোলমাল করে বর্ণনা করেছেনসে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদ্বতারাব বলেযে পর্যন্ত না এটার কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয় সে পর্যন্ত এটা সম্পর্কে তাওয়াক্কুফ (অপেক্ষা) করতে হবে। (অর্থাৎ এটাকে দলীল তথা প্রমাণে ব্যবহার করা চলবে না।)
    ৫) مُدْرَجٌ (মুদরাজ) : যে হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে রাবী উনার নিজের অথবা অপর কারো উক্তি ভ্রুক্ষেপ করেছেন সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদ্রাজ বলে এবং এরূপ করাকে ইদ্রাজ বলে ইদ্রাজ হারাম- যদি না এটা কোন শব্দ বা বাক্যের অর্থ প্রকাশার্থে হয় এবং মুদ্রাজ বলে সহজে বুঝা যায়
    ৬) مُسْنَدٌ (মুসনাদ) : যে মারফূহাদীছ শরীফ-এর কারো মতে যে কোন রকম হাদীছ শরীফ-এর সনদ সম্পূর্ণ মুত্তাসিল সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুসনাদ বলে

    ৭) مَحْفُوْظٌ وَ شَاذٌ (মাহফুয ও শায) : কোন ছিক্বাহ রাবী উনার হাদীছ শরীফ অপর কোন ছিক্বাহ রাবী বা রাবীগণ উনাদের হাদীছ শরীফ-এর বিরোধি হলে যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর যব্ত গুণ অধিক বা অপর কোন সূত্র দ্বারা যার হাদীছ শরীফ-এর সমর্থন পাওয়া অথবা যার হাদীছ শরীফ-এর শ্রেষ্ঠত্ব অপর কোন কারণে প্রতিপাদিত হয় উনার হাদীছ শরীফটিকে হাদীছে মাহফুয এবং অপর রাবীর হাদীছটিকে হাদীছে শায বলে এবং এরূপ হওয়াকে শুযূয বলেহাদীছ শরীফ-এর পক্ষে শুযূয একটি মারাত্মক দোষশায হাদীছ শরীফ ছহীহ্রূপে গণ্য নয়
    ৮) مَعْرُوْفٌ وَ مُنْكَرٌ (মারূফ ও মুনকার) : কোন দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ অপর কোন দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ-এর বিরোধি হলে অপেক্ষাকৃত কম দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফকে হাদীছে মারূফ এবং অপর রাবীর হাদীছ শরীফটিকে হাদীছে মুনকার বলে এবং এরূপ হওয়াকে নাকারাৎ বলেনাকারাৎ হাদীছ শরীফ-এর পক্ষে একটা বড় দোষ
    ৯) مُعَلَّلٌ (মুয়াল্লাল) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদে এমন কোন সূক্ষ্ম ত্রুটি রয়েছে যাকে কোন বড় হাদীছ শরীফ বিশেষজ্ঞ ব্যতীত ধরতে পারেন না, সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুয়াল্লাল বলেআর এরূপ ত্রুটিকে ইল্লত বলেইল্লত হাদীছের পক্ষে একটা মারাত্মক দোষ মুয়াল্লাল হাদীছ ছহীহ্ হতে পারে না
    ১০) مُطَابِعٌ وَ شَاهِدٌ (মুতাবিও শাহিদ) : এক রাবীর হাদীছ শরীফ-এর অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীছ শরীফ পাওয়া যায় তাহলে এই দ্বিতীয় রাবীর হাদীছটিকে প্রথম রাবীর হাদীছ শরীফটির মুতাবি বলে, যদি উভয় হাদীছের মূল রাবী (অর্থাৎ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) একই ব্যক্তি হনআর এরূপ হওয়াকে মুতাবায়াত বলেযদি মূল রাবী একই ব্যক্তি না হন, তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীছ শরীফকে প্রথম ব্যক্তির হাদীছ শরীফ-এর শাহেদ বলেআর এরূপ হওয়াকে শাহাদত বলেমুতাবায়াত ও শাহাদত দ্বারা প্রথম হাদীছ শরীফটির শক্তি বৃদ্ধি পায়
    ১১) صَحِيْحٌ (ছহীহ্) : যে মুত্তাসিল হাদীছ শরীফ-এর সনদের প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যব্ত গুণসম্পন্ন এবং হাদীছ শরীফটি শুযুয ও ইল্লত হতে দোষমুক্ত সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে ছহীহ্ বলে। (অর্থাৎ যে হাদীছ শরীফটি মুনকাতে নয় মুদাল নয়, মুয়াল্লাক নয়, মুদাল্লাস নয়, কারো কারো মতে মুরসালও নয়, মুবহাম অথবা প্রসিদ্ধ দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ নয়, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার দরুণ অনেক ভুল করেন এমন মুগাফ্ফার বারীর হাদীছ শরীফ নয় এবং হাদীছ শরীফটি শায্ ও মুয়াল্লালও নয়- একমাত্র সে হাদীছ শরীফকেই হাদীছে ছহীহ্ বলে।)



    ১২) حَسَنٌ (হাসান) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর যব্ত গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে হাসান বলে। (ফক্বীহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সাধারণত এই দুই প্রকার হাদীছ হতেই আইন প্রণয়ণে সাহায্য গ্রহণ করেন।)
    ১৩) ضَعِيْفٌ (দ্বঈফ) : যে হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা কোন রাবী হাসান হাদীছ শরীফ-এর রাবীর গুণসম্পন্ন নয় সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে দ্বঈফ বলে। (রাবীর দ্বুফ বা দুর্বলতার কারণেই হাদীছ শরীফটিকে দ্বঈফ বলা হয়, অন্যথায় (নাউযুবিল্লাহ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন কথাই দ্বঈফ নয়দ্বঈফ হাদীছের দ্বুফ কম ও বেশী হতে পারেখুব কম হলে এটা হাসানের নিকটবর্তী থাকেআর বেশী হতে হতে এটা একাবারে মাওদুউতেও পরিণত হতে পারে প্রথম পর্যায়ের দ্বঈফ হাদীছ শরীফ আমলের ফযীলত বা আইনের উপকারিতার বর্ণনায় ব্যবহার করা যেতে পারে, আইন প্রণয়নে নয়।)
    ১৪) مَوْضُوْعٌ (মাওদুউ’) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী জীবনে কখনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে ইচ্ছা করে কোন মিথ্যা কথা রচনা করেছে বলে সাব্যস্ত হয়েছে- তার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মাওদুউবলেএরূপ ব্যক্তির কোন হাদীছ শরীফই কখনও গ্রহণযোগ্য নয়- যদিও তিনি অতঃপর খালিছ তওবা করেন
    ১৫) مَتْرُوْكٌ (মাতরূক) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী হাদীছের ব্যাপারে নয়, বরং সাধারণ কাজ-কারবারে মিথ্যা কথা বলেন বলে খ্যাত হয়েছেন- তার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মাত্রূক বলে এরূপ ব্যক্তিরও সমস্ত হাদীছ পরিত্যাজ্যঅবশ্য তিনি যদি পরে খালিছ তওবা করেন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ ও সত্য অবলম্বনের লক্ষণ উনার কাজ-কারবারে প্রকাশ পায়, তা হলে তার পরবর্তীকালের হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা যেতে পারে
    ১৬) مُبْهَمٌ (মুবহাম) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায়নি- যাতে উনার দোষ-গুণ বিচার করা যেতে পারে, উনার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুবহাম বলেএরূপ ব্যক্তি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু না হলে উনার হাদীছ গ্রহণ করা যায় না
    ১৭) مُحْكَمٌ (মুহকাম) : কোন হাদীছ শরীফ বিপরীতার্থক অপর কোন হাদীছ শরীফ থেকে নিরাপদ হলে তাকে মুহকাম হাদীছ শরীফ বলেএরূপ বিপরীত অর্থ বোধক অবস্থায় উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব না হলে এটাকে مُخْتَلِفُ الْحَدِيْثِমুখতালিফুল হাদীছ শরীফবলে
    ১৮) نَاسِخٌ – مَنْسُوْخٌ (নাসেখ-মানসূখ) : পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি হাদীছ শরীফকে কোনভাবেই যখন সমন্বয় সাধন সম্ভব না হয় এবং একটিকে পূর্বের ও অপরটিকে পরের বলে জানা যায় তখন পরেরটিকে নাসেখ বলেআর পূর্বের বর্ণনাকে মানসূখ বলেআর নাসেখ ও মানসূখ-এর হুকুম বা বিধান হলো নাসেখ-এর উপর আমল করা আবশ্যক তথা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্তআর মানসূখ হাদীছ যার উপর আমল করা বৈধ নয়এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ”-এ উল্লেখ আছে,


    عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَنَتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا يَدْعُوْ عَلى رِعْلٍ وَذَكْوَانَ
    অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রিল ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্ দোয়ায় একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন
    এ হাদীছ শরীফ খানা নিম্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা মানসূখ হয়ে যায়। । যেমন, মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
    عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ اِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا ثُمَّ تَرَكَ
    অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা কেবলমাত্র একমাস পড়েছিলেনঅতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেছেনবর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর প্রথম অংশ অর্থাৎ এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেনএটা হলো মানসূখআর দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ অতঃপর তা পরিত্যাগ করেছেনএটা হলো নাসেখ










    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: হাদীছ শরীফ-উনার সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top